জিনিয়া হোসেন : আজকাল গোটা পৃথিবী জুড়েই নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা একটি আলোচিত বিষয়। কি এশিয়া, কি ইউরোপ! যে কোন মহাদেশের যে কোন দেশেই এ ধরনের অপরাধের পুলিশি অভিযোগের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি কমছে নারী ও শিশু নিপীড়কদের বিচার বা সাজা হওয়ার ঘটনা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, শুধু আইনি কাঠামোর দূর্বলতা আর আইনের প্রয়োগ নিয়ে কথা বললেই সমাধান আসবে না। এদেশের সমাজতাত্বিক অনেক কারণে নারী ও শিশুরা অনেক অনেক বেশি বিপন্ন। শুধুমাত্র গত চার বছরে সতের হাজার নারী ও শিশুর ধর্ষণের কথা পুলিশ রেকর্ড থেকেই জানা যায়। আরো কত হাজার নিপীড়নের ঘটনা যে অগোচরে রয়ে যাচ্ছে তাও এ থেকে অনুমান করা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় উত্যক্তকরণ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন ও যৌন হয়রানির লাখ লাখ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এসব অপরাধের পরিণতি তথা বিচার ও সাজার অপ্রতুলতা নিয়ে ভাবার চাইতে বেশি জরুরি সামাজিক সমস্যা হিসেবে মোকাবিলা আর অপরাধগুলোর উৎস বা কারণ নিয়ে গভীরভাবে ভাবা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা হয় তরুণ, যারা সব রকম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এবং তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রেক্ষাপট গোলমেলে।
ইন্টারনেট আর সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে অনাকাঙ্খিত ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো তরুণদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে অবাধে। কোন রকম দ্বিধা ছাড়াই এমন সব বর্বর অপরাধ করে ফেলার পেছনো এসব নিষিদ্ধ জিনিষের সহজলভ্যতা অনেক বড় একটা কারণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সহিংসতার কারণ হিসেবে পাওয়া যায় প্রত্যাখানের প্রতিশোধ নেবার চেষ্টাকে। কারণ যাই হোক নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতাকে কোন যুক্তি দিয়েই যথাযথ বলে মানা যায় না। এমন সমাজে বাস করা পরিবারগুলো নিজেদের নিরাপদ করতে, নারীর প্রতি শ্রদ্ধা তৈরি হয়, এমন শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে পারে। এ শিক্ষার শুরুটা হতে হবে পরিবারগুলোর ভেতর থেকেই। পরিবারের নারী সদস্যদের প্রতি প্রকৃত সম্মান দেখানোর মধ্য দিয়ে।
কিন্তু একই সঙ্গে জনমনে সচেতনতা তৈরি করতে প্রচারণা ও প্রতিবাদী কমসূচি অব্যাহত রাখতে হবে।
বড় প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে পাবলিক স্পেসে। কারণ, নিত্যদিন বাইরের খোলা জায়গাতেই নারী ও শিশুরা নির্যাতনের শিকার হন।
কঠিন সত্যটা হলো, শিক্ষা, প্রযুক্তির এই এগিয়ে থাকা সময়েও মানবজাতির আসল উন্নয়নটাই হয়নি। নিপীড়ক মনন তৈরি হয় এই বিশ্বাসের ওপরেই যে, নারী ও শিশুরা নির্যাতিত হলেও পাল্টা জবাব দেবে না। পাবলিক প্লেসে নিপীড়ক প্রতিবাদ ও বাধার মুখে পড়েছে, এমন উদাহরণ খুব কম থাকাও অপরাধীর উৎসাহ বাড়িয়ে দেয়।
নারী ও শিশুরা এখন ঘরের বাইরে এসে সড়ক দূর্ঘটনার চাইতেও বেশি উৎকণ্ঠায় থাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন নিয়ে।
মনে রাখতে হবে, বড় আকারের জনসম্পৃক্ত আন্দোলন আর পাবলিক পে�সে নিপীড়নের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করে এসব অপরাধকে একটা মাত্রা পর্যন্ত কেবল কমিয়ে রাখা সম্ভব।
সম্পাদনা : ইকবাল খান
আপনার মতামত লিখুন :