কামরুল হাসান মামুন : আবারো প্রমাণিত হলো ঢ়বহ ড়ৎ ড়িৎফ রং সরমযঃরবৎ ঃযধহ ংড়িৎফ! এক জামাল খাসোগি নির্বাসিত জীবন যাপন করেও সৌদি আরবের মত একটি রাষ্ট্রের বাদশাহর ঘুম হারাম করে দিয়েছিলো। খাসোগি কি করেছেন? শুধু বাদশাহর সমালোচনা করে পত্রিকায় লিখেছেন। এই রকম লেখা শুধু না, তারচেয়েও বেশি ব্যাঙ্গাত্বক সমালোচনা দেখা যায় পশ্চিমা দেশের প্রতিদিনের টেলিভশনগুলোতে। অর্থাৎ নিজ দেশে থেকে নিজ দেশের সরকারের বিরুদ্ধে শুধু বলেই না ব্যঙ্গও করে। তারপরওতো তাদের সরকার তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলে না। হ্যাঁ, বর্তমান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাহেব মাঝে মধ্যে বলে ফেলেন এবং হয়তো পারলে ওই সৌদি বাদশাহর মতো কিছু একটা করতেও চান। পারেন না তাদের সিস্টেমের কারণে। সেখানে পাওয়ার এমনভাবে ব্যালেন্স করা যে প্রেসিডেন্ট অনেক কিছুই করতে পারেন না। তারপরও ট্রাম্প যে কিছু একটা করতে চান সেটা বোঝা যায়। তাহলে বোঝা যাচ্ছে সমালোচনা সহ্য করতে পারার সাথে সরকার বা সরকার প্রধানের সভ্য চিন্তা, সুশিক্ষা এবং জ্ঞানের একটা সম্পর্ক আছে।
একটি দেশে বলতে পারা এবং লিখতে পারার স্বাধীনতা কেমন অর্থাৎ মুক্ত চিন্তার পরিবেশ কেমন সেই ইনডেক্স সেই দেশের সরকারের মানের নির্ণায়ক। লেখা বা বলা কারো পছন্দ না হতে পারে কিন্তু বিরুদ্ধে গেলেই তাকে ষড়যন্ত্রের মোড়ক দিয়ে থামিয়ে দেওয়া কোনভাবেই ভালো কাজ নয়। এতে নিজের পরিচয়ই বিশ্বের কাছে প্রকাশিত হয়। এই যে জামাল খাসোগিকে নিয়ে বিশ্ব তোলপাড়, শহিদুল আলমকে নিয়ে বিশ্বে তোলপাড় কেন? কারণ এরা বিশ্বজুড়ে মানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করতে পেরেছে। সহমত বা গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে দিয়ে মানুষ শেষ বিচারে বড় হতে পারে না। তারা কেবল নিজেকেই ছোট করে না বরং রাষ্ট্রকেও ছোট করে। একটা সমাজে যখন একটি থ্রেশহোল্ড পরিমাণ মানুষ সত্যের পক্ষে সোচ্চার থাকে সেই দেশে অন্যায় হতে পারে না।
সুশিক্ষিত এবং আলোকিত মানুষের একটি প্রধান বৈশিষ্ঠ্য হলো এরা প্রতিবাদী হয়। যখনি কাউকে দেখবেন বাতাস দেখে কথা বলে তখন সে নিজেই নিজেকে জানান দেয় যে সে ভালো মানুষ নয়। সে স্বার্থপর মানুষ। যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অন্যায়কে দেখে না বরং অন্যায় কে করছে সেটা আগে দেখে তখন বুঝতে হবে সে মানুষ নয়। এরাই সমাজের ক্ষতিকর কীট। অন্যায়ের সজ্ঞা দিতে গিয়ে কোন ইফ/বাট দেওয়া চলবে না। অন্যায় ইউনিভার্সাল। মানুষ হিসাবে আমাদের কাজ হওয়া উচিত প্রতিবাদ করা।
আমাদের এই সমাজে প্রতিবাদ করার কাজটি দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। দেশ হিসাবে আমরা যে পেছাচ্ছি এটাও তার একটি প্রমাণ। উন্নয়ন মানে কি শুধু মানুষের হাতে টাকা থাকা? উন্নয়ন একটি বহুমাত্রিক বিষয়। এটা একটা বহংবসনষব ধাবৎধমবফ ড়ভ সধহু ড়নংবৎাধনষবং! কোন একটির উন্নয়ন মানেই সামগ্রিক উন্নয়ন নয়। তবে দেশে দেশে যুগে যুগে শিক্ষাকে উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হিসাবে গণ্য করে আসছে।
গতকাল পৃথিবীর সেরা উদ্ভাবনী দেশের একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে প্রথম ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ই আমেরিকায়। তারপর সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় অধিকাংশই আমেরিকা আর ইউরোপে। এশিয়ার মধ্যে তিনটি দেশ এই তালিকায় ঢুকতে পেরেছে সেই তিনটি দেশ হলো জাপান কোরিয়া এবং চীন।
এইবার পৃথিবীর উন্নত দেশ কারা? সভ্য দেশ কারা? শিক্ষিত দেশ কারা? এর তালিকা যদি করা হয় সেখানেও ওই ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশই আসবে প্রথমে। অর্থাৎ মানসম্মত শিক্ষাই হলো টেকসই উন্নয়নের আসল মাপকাঠি।
এই ইনডেস্কে বাংলাদেশ কি দিন দিন এগুচ্ছে না পেছাচ্ছে? সংখ্যা দিয়ে মানকে বিচার করতে যাওয়া হলো আরেক বলদামি। এই বলদামি করে পার পেয়ে যাওয়াও প্রমাণ করে সত্যিকারের শিক্ষায় আমরা এখনো প্রিমিটিভ লেভেলে।