ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা (বরগুনা): বরগুনার পাথরঘাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর,পায়রা পূর্বে বিষখালী আর পশ্চিমে বলেশ্বর নদের মোহনায় অবস্থিত হরিণঘাটা বনাঞ্চল। এ বন বিভিন্ন বৃক্ষরাজির সুবাদে এ বনের পরিধি ক্রমশ বাড়ছে। তবে নেই কোন হিস্রপ্রাণী। আছে হরিণ,বনমোরগ,বানর,শূকর,গুইসাপ, এ ছাড়াও রয়েছে নানা প্রজাতির সরীসৃপসহ প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি আর বন্য প্রাণীকুল। হরেক রকমের পাখপাখালির কলকাকলিতে মুখর চারপাশ।
জানা গেছে, সুন্দরবনের চেয়ে আকৃতিতে বড় প্রজাতির মায়াবি চিত্রল হরিণের বিচরণস্থল হওয়ায় এই বনের নামকরণ হয়েছে হরিণঘাটা বনাঞ্চল। দৃষ্টিনন্দন ঘন বন আর সবুজে সবুজে ছাওয়া এ বনের সৌন্দর্যকে আরো আকর্ষণীয় করেছে লালদিয়া, পদ্মা, লাঠিমারা পাশাপাশি সুবিশাল তিনটি সৈকত। সূর্যস্ত সুর্যোদয়ের দৃশ্য অবলোকনের জন্য এরচেয়ে উপযোগী স্থান আর বুঝি নেই।
১৯৬৭ সাল থেকে বন বিভাগ এর সম্প্রসারণে নানা প্রজাতির বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে বন সৃজন শুরু করে। বর্তমানে প্রায় ১৮ হাজার একর জুড়ে দৃষ্টিনন্দন এই বনে প্রাকৃতিক কেওড়া, গেওয়া পষুর সহ সৃজিত সুন্দরী ও ঝাউবন রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিলের মাধ্যমে বন বিভাগ হরিণঘাটা বন ও সাগরতীর দর্শনের লক্ষ্যে নির্মাণ করছে ফুট ট্রেইল। এছাড়া বনের ভেতর নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, বিশ্রামাগার ও গোলঘর।
পাথরঘাটা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন অধিদপ্তর ১৯৬৭ সালে হরিণঘাটা বন স¤প্রসারণে পরিকল্পিত বনায়ন শুরু করে। ২০১৩-২০১৬ সালে এখানে ২০০ হেক্টর, এলাকাজুড়ে সমৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় নতুন বন সৃজিত হয়। এটি এখন বন্যপ্রানীর অভয়ারণ্য। আবার সাগরতীরে লালদিয়ার চরে নতুন বন সৃষ্টি হওয়ায় বনাঞ্চলের পরিধি ক্রমশ বেড়ে চলছে। একদিকে বিস্তির্ন সাগরের হাতছানি আর অন্যদিকে অকৃত্রিম বনের মাঝে ছড়িয়ে থাকা সবুজের সমারোহ যেন দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
দেশের দক্ষিণ প্রান্তের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায় অবস্থিত এই হরিণঘাটায় এসে একদিকে যেমন উপভোগ করা যায় সাগরের মাঝে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মোহনীয় দৃশ্য, তেমনি দেখা মেলে নানা প্রজাতির গাছের সমারোহে গড়ে ওঠা সবুজ নিসর্গ আর হরেক রকম বন্যপ্রাণীরও। তবে হরিণঘাটায় অবস্থিত এই বনের সবেচেয়ে আকর্ষণীয় দিকগুলোর একটি হলো বনের ভেতরে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০-১২টি খাল। জোয়ারের সময় যখন খালগুলো পানিতে পরিপূর্ণ থাকে তখন ছোট ছোট নৌকায় করে উপভোগ করা যায় বনের মধ্যকার সবুজের সমারোহ।
এ ছাড়াও বনাঞ্চলের পাশেই রয়েছে লালদিয়া চর নামে পরিচিত ছোট্ট একটি সমুদ্র সৈকতও। যা পর্যটকদের ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে। এই সৈকতে মানুষের উপস্থিতি কম থাকায় এখানে নানা প্রজাতির পাখির নির্বিঘ্ন বিচরণ চোখে পড়ে। এ ছাড়াও সৈকতে ঘুরে বেড়ানো লাল কাঁকড়ার দলও প্রায়শই তৈরি করে দেখার মতো এক দৃশ্য।
পাথরঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান আকন জানান, হরিণঘাটা বনাঞ্চলে ইকো-ট্রুরিজম হিসেবে গড়ে তুলতে দর্শনার্থীদের স্বচ্ছন্দে চলাচলের জন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় জলবায়ু ট্রাষ্টের তহবিলের আওতায় এনে বনের ভেতর আঁকা বাঁকা প্রায় দেড় কি.মি. দৈর্ঘ্য ফুট ট্রেইল সহ ওয়াচ টাওয়ার, বিশ্রামাগার ও গোলঘর নির্মান করা হয়ছে। দর্শনার্থীরা ফুট ট্রেইল দিয়ে স্বচ্ছন্দে হরিণঘাটা বনের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাগরতীরে সূর্যোদয় ও সূর্যস্ত দেখার সুযোগ পায়। এই বনাঞ্চলটি আস্তে আস্তে একটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে।