নূরুল আনোয়ার : ছাত্ররা যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে, তার কিছুটা যৌক্তিকতা আছে। প্রথমেই আমি বলবো, সরকারি চাকরীতে কোটা সংস্কার দাবি থেকে এ আন্দোলনের সুত্রপাত। সরকার এর ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে, তার কর্যক্রম এখনো চলমান। এখন আন্দোলনকারীদেরকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। এই দিক থেকে যেহেতু সরকারের একটি কমিটি আছে, তার ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা দ্বিতীয় বার আন্দোলনে না গিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করা উচিত ছিলো। তা না করে সরকারকে চাপে ফেলে এর ফলাফল আদায় করতে চেয়েছিলো, যার জন্য একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়। আমি এই প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করবো না। এটি আমন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া। এর উৎস কি তা আমার জানা নেই।
আমার কাছে মনে হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের আরো ধৈর্য ধরা প্রয়োজন। তাদের ধৈর্য কাজে না আসলে পত্রিকায় একটি বিবৃতির মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন করা দরকার ছিলো। এই পন্থায় হাটলে খুবই ভালো হতো। তা না করে হুট করে কিছু সংখ্যক শিক্ষক এতে মত দিয়ে ময়দানে গেছেন। এ আন্দোলনের পেছনে শিক্ষকদের কোনো ভুমিকা আছে কি? শিক্ষকরা সরকারকে বলতে পারতেন, শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তার জন্য সরকারের কাছে এর সমাধান চেয়ে একটি চাপ সৃষ্টি করতে পারতেন। অভিবাবক হিসেবে শিক্ষকদের কাছ থেকে কখনো নিরবতা আশা করি না। আমাদের বর্তামানে ছাত্র সমাজ ১৯৭০ এর মত নই।
এখনকার ছাত্র সমাজের কার্যক্রম অনেক বেশি অধৈর্যশীল এবং মারমুখি। একটি সরকারী কাজ হতে টেবিল ঘুরে এবং ফাইল চালাচালি হয়। মানুষ মনে করে, কোটা সংস্কার আন্দোলন মুলত মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে চলে। বিজ্ঞ বুদ্ধিজীবিরা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০% কোটা দিলে আপত্তি নাই। এটা নিষ্ঠুর রশিকতা। সকল মুক্তিযোদ্ধা এখন কবরের যাত্রী। তাদের সন্তানরা যথাযথ শিক্ষার সুযোগ পান নাই। তাদের নাতীরা এখন লেখাপড়া শিখছে, কোটা তাদের দরকার। রাজনৈতিক বা সামরিক সরকারের সময় মেধাবী আমলারা নিজ ইচ্ছায় কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এছাড়া মেধাবীদের কোটা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের শৃন্য কোটায় নিয়োগ পাচ্ছে। তা আন্দোলন কারীরা বলে না। মির্জা ফখরুলতো প্রকাশ্যে এ আন্দলনে সমর্থন দিয়েছেন। ইঙ্গিত বহন করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য ৩০% এর মধ্যে এবং এ পর্যন্ত বৎসরে ওয়ারী কত % পেয়েছে এর হিসাব আন্দোলনকারীদের বা সরকারের প্রকাশ করা দরকার।
রাজনৈতিক সরকারের সময় মেধাবীরা কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। তার কারণ, সরকার যা বলে তাই করতে হয়। তবে মেধাবীদের নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকতে পারে না। অনেক লোকদের বলতে শুনেছি যে, এই আন্দোলন এতো বিস্তার লাভ করার পেছনে কাজ করেছে আগামী নির্বাচ কেন্দ্রীক ভাবনা যে, নির্বাচনের আগে দেশে একটি অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারা যায় কিনা, তার একটি চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সব শেষে ছাত্রদের বলবো, ধৈর্য ধরতে হবে এবং সরকারকে বলবো এ কোটার গ্রহণযোগ্য নীতিমালা ঘোষণা করুন।
পরিচিতি : সাবেক আইজিপি/ মতামত গ্রহণ : তাওসিফ মাইমুন/ সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ