কুমিল্লা প্রতিবেদক: কুমিল্লায় হত্যা ও নাশকতার দুই মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আগামী ২৪ জুন পর্যন্ত স্থগিত করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। এর ফলে দুই মামলায় খালেদার জামিন আটকে গেল। ঈদের আগে তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না। কারাগারেই ঈদ করতে হচ্ছে তাকে।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বিভাগ গতকাল বৃহস্পতিবার উভয়পক্ষের শুনানি শেষে
চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন। এদিকে ৩ জুন থেকে সুপ্রিম কোর্টে অবকাশ শুরু হবে। অবকাশের পর সর্বোচ্চ আদালত খুলবে আগামী ২৪ জুন। খালেদা জিয়ার মামলার শুনানি ততদিন মুলতবি থাকবে।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের দেওয়া দুই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। আগামী ২৪ জুন পরবর্তী শুনানি হবে। এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত আপিল করতে বলেছেন আদালত।
আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে দীর্ঘদিন জেলে রাখতে চায়। তবে আইনি লড়াই চালিয়ে খালেদা জিয়াকে বের করে আনা হবে। তিনি বলেন, হাইকোর্ট জামিন বিবেচনা করলেও আপিল বিভাগ তা স্থগিত করছেন। অতীতে এ রকম দেখিনি। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলা চলতে পারে না।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছর সাজা হওয়ার পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের কারাগারে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ঈদের আগেই তার মুক্তির আশা করেছিলেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু কুমিল্লার নাশকতার দুটিসহ কয়েকটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হলে এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
গত ২৮ মে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ হত্যা ও নাশকতার অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় করা দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। একই সঙ্গে নড়াইলে করা মানহানির অন্য মামলায় তার জামিন আবেদন যথাযথভাবে উত্থাপিত হয়নি জানিয়ে তা খারিজ করেন আদালত।
গতকাল আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, এজে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন ও মাহবুবউদ্দিন খোকন।
২০১৫ সালের শুরুর দিকে ২০ দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে নাশকতায় বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং হত্যা মামলায় জামিন আবেদন করেন খালেদা জিয়া। এ দুই মামলায়ই ছয় মাসের জামিন পেয়েছিলেন খালেদা জিয়া।
একই বছর ২১ ডিসেম্বর ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে দেওয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্যে সংক্ষুব্ধ হয়ে ২৪ ডিসেম্বর দুপুরে নড়াইলের চাপাইল গ্রামের রায়হান ফারুকী ইমাম তার বিরুদ্ধে জেলার সদর আমলি আদালতে মানহানির মামলা করেন। এর জামিন আবেদন যথাযথভাবে উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
মানহানির দুই মামলার জামিন মেলেনি :ঢাকায় করা মানহানির দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে করা আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ঢাকার সংশ্নিষ্ট আদালতে খালেদা জিয়ার করা আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং এ জে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ ও এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। গত ২২ মে দুই মামলায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়া।
যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়া ও ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে মামলা দুটি করা হয়। দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখানোর জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ১৭ মে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ৫ জুলাই গ্রেফতার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।সূত্র: সমকাল