আশরাফুল নয়ন,নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর বাজারগুলোতে আম আসতে শুরু করেছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আম সংগ্রহে উদ্বুদ্ধ করন ও ব্যাপক প্রচারের লক্ষে শুক্রবার জেলার পোরশা উপজেলায় গোপালভোগ আম নামানোর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়। আমের প্রকার ভেদে আগামী প্রায় এক মাসের মধ্যে সবগুলো আম বাজারে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সবগুলো আম এক সাথে বাজারে আসায় সংরক্ষণের অভাবে অনেকটা ন্যায্য দাম পাওনা থেকে বঞ্চিত হন আম চাষিরা।
জেলার সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর উপজেলা এবং পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলার আংশিক বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে খ্যাত। পানি স্বল্পতার কারণে বছরের বেশির ভাগ সময় জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। ফলে সেখানে ধানের আবাদ না হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে আম বাগান। লাভ বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক এখন ধান ছেড়ে আম চাষে ঝুকেছেন। প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার হেক্টর অধিক জমিতে আম বাগান গড়ে উঠছে। এঁটেল মাটি হওয়ার কারণে এ এলাকার আম বেশ সুস্বাদু। সুস্বাদু হওয়ায় আমের রাজা চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ছাড়িয়ে গেছে নওগাঁর আম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জেলার ১১টি উপজেলায় ১৪ হাজার ৬৭০ হেক্টোর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ৩ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে নাগ ফজলি আম গাছের সংখ্যা ৪ লাখ ১৬ হাজার ১১০টি, ১ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে ল্যাংড়া আম গাছের সংখ্যা ২ লাখ ১৪ হাজার ৫৮০টি, ৭৫৫হেক্টর জমিতে ফজলি আম গাছের সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ৯১০ টি, ১ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে আম্রপালি আম গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ১৬ হাজার ২১০টি, ১৫০ হেক্টর জমিতে কুমড়াজ্বালী আম গাছের সংখ্যা ২০ হাজার ৪২৫টি, ২ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে গোপালভোগ আম গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ২৭ হাজার ১৩০টি, ২ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে খিসড়াপাত আম গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ১১ হাজার ৩১৫টি, ৫৮০ হেক্টর জমিতে আশ্বিনা আম গাছের সংখ্যা ৭৯ হাজার ১২৫ টি এবং ২৮৫ হেক্টর জমিতে স্থানীয় আম গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৯ হাজার ২২০টি। এর মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১২ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন হিসেবে এ বছর আম উৎপাদন হওয়ার কথা ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৪০ মেট্রিক টন।
পোরশা উপজেলার পোরশা গ্রামের শাহ আবু সাঈদ চৌধূরী বলেন, প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে ২৭টি বাগানে বিভিন্ন জাতের আম গাছ আছে। এবছর কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও রোগ বালাই না থাকায় আমের ফলন ভাল হয়েছে। সম্পন্ন প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে আমি দেশের বিভিন্ন জেলায় ও বিভিন্ন অফিসে পার্সেল করি। এছাড়া ই-কর্মাসের মাধ্যমে আম সরবরাহ করে থাকি।
পোরশা আম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক রেজাউন শাহ বলেন, আমাদের আম অত্যান্ত সুস্বাদু। যা চাঁপাইনবাবগঞ্জকে আমরা অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছি। এ এলাকার আম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করা হয়েছে। কিন্তু প্রচারনার অভাবে এখানকার আমকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বলে প্রচার করা হচ্ছে।
পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজ আলম বলেন, এ উপজেলায় প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এতে প্রতি হেক্টরে লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১০ থেকে ১১ মেট্রিকটন। এ উপজেলার আম স্বাধে-গন্ধে-মানে-মিষ্টিয়তায় অতুলনীয়। আমের ব্যাপক প্রচার ও বিভিন্ন তথ্য প্রদানের জন্য ‘উপজেলা কৃষি অফিস পোরশা’ নামে একটি ফেসবুক আইডি ও ‘পোরশার আম’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলা হয়েছে। সেখানে আমের বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাবে। বাগানগুলি হতে ২৫ মে গোপালভোগ, ১জুন খিরসাপাত/হিমসাগর, ৬ জুন ল্যাংড়া, ১৫ জুন ফজলি, ২০জুন আম্রপালি ও ১জুলাই আশ্বিনা গাছ থেকে নামানো হবে। আমের ব্যাপক প্রচারের জন্য আগামীতে সাইকেল র্যালী ও আমের মেলা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
পোরশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফিরোজ মাহমুদ বলেন, অপরিপক্ক আমকে পাকানোর জন্য কোন চাষি এবং ব্যবসায়ী যদি কেমিক্যাল ব্যবহার করে তাৎক্ষনিক ভাবে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেহেতু এ উপজেলায় আমের চাষ বেশি হয়। সেদিকটি বিবেচনা করে আম সংরক্ষনাগার স্থাপনের বিষয়টি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনোজিৎ কুমার মল্লিক বলেন, এ জেলায় উৎপাদিত প্রায় সব আম আধুনিক প্রজাতির। এ জেলার আমের কোনো পরিচিতি না থাকায় ব্যবাসায়ীরা সেগুলোকে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আমের ব্র্যান্ডিং (প্রচার-প্রচারণা)-এর অভাবে অনেকটাই পিছিয়ে আছে নওগাঁ জেলা। নওগাঁর আমকে ব্রান্ডিং হিসেবে পরিচিত করার জন্য সকলের সহযোগিতা চান তিনি।