ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী মেঘনা। এ নদীকে কেন্দ্র করেই ভৈরবে স্থাপিত হয়েছে দেশের বৃহত্তর নৌ-বন্দর। মেঘনায় বড় দুটি রেলসেতু, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নদীর ওপর নির্মিত বৃহৎ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু বন্দরনগরী ভৈরবকে করেছে দৃষ্টিনন্দন।কিন্তু সম্প্রতি কয়লার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে উদীয়মান এ পর্যটন নগরীর পরিবেশ-প্রতিবেশ। এখানে অবস্থিত তিতাস গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউশন রেগুলেটিং স্টেশনও (ডিআরএস) রয়েছে হুমকিতে।
কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই সেতু দুটির নিচে, আশপাশে রেলওয়ের এলাকা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংরক্ষিত এলাকা দখল করে কয়লার স্তূপ গড়েছে প্রভাবশালী মহল। এর প্রভাবে চারদিকের সবুজ-শ্যামল পরিবেশ কালচে রঙ ধারণ করছে। মরে যাচ্ছে সেতু এলাকার গাছপালা, ছোট উদ্ভিদ, এমনকি সড়কের ঘাসও।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় নেতারা জানান, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কতিপয় প্রভাবশালী এ কয়লা ব্যবসায় জড়িত। কয়লা একটি উচ্চমাত্রার দাহ্য পদার্থ হওয়ায় যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এখানে রাখা কয়লা সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্নিষ্ট ব্যবসায়ীদের কয়েক দফা নোটিশ দিলেও কাজ হয়নি।
বন্দরনগরী ভৈরব ও আশুগঞ্জের মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু নির্মাণ করার পর থেকে এ সেতু ও পাশাপাশি থাকা দুটি রেলসেতুকে ঘিরে এখানে পর্যটন শিল্প বিকশিত হয়। বাড়তে থাকে পর্যটকের ভিড়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ক্রমে সেই চেনা দৃশ্যটি হারিয়ে যাচ্ছে।
এখন আর পর্যটক কিংবা দর্শনার্থীর ভিড় নেই। আগের সবুজ-শ্যামল দৃশ্যের পরিবর্তে চারদিকে শুধু কয়লার স্তূপ। বাতাসে ছড়াচ্ছে উৎকট গন্ধ। ইতিমধ্যে রেলওয়ের বড় দুটি আমগাছ, দুটি কাঁঠালগাছসহ অনেক গাছ মরে গেছে। প্রভাবশালী চক্র সড়ক সেতুর লোহার বেষ্টনী ভেঙে এর ভেতরেও রাখছে কয়লা। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। আতঙ্কের সবচেয়ে বড় কারণ তিতাস গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউশন রেগুলেটিং স্টেশন। কয়লার উত্তাপে এখানে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বিস্টেম্ফারণ, বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে কোনো তৎপরতা বা ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। গত ১৩ এপ্রিল ভৈরবের পরিবেশবাদী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দ্য ব্ল্যাকহোল অ্যাসোসিয়েটের আয়োজনে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গোসল উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় কেপিআইভুক্ত এলাকা থেকে কয়লা ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নিতে ও পরিবেশ রক্ষাসহ দেশের নদীনালা, খালবিল ভরাট বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেন সংগঠনের সদস্য ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
এ বিষয়ে ভৈরব পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা ফখরুল আলম আক্কাছ বলেন, শহরের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মেঘনা নদীপাড়ের ত্রিসেতু এলাকাটি। কিন্তু কতিপয় কয়লা ব্যবসায়ীর কারণে এলাকাটি সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে। কয়লায় পরিবেশ দূষণের ফলে মুক্ত বাতাস এখন দুষণযুক্ত হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসন, সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাজী ফয়সাল জানান, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিরচেনা স্থানটির রূপ ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। স্থানটি উদ্ধারে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
এ ব্যাপারে ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সায়েদুল্লাহ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সেন্টুর বক্তব্য জানতে তাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।
ভৈরব শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আতিক আহমেদ সৌরভ বলেন, আওয়ামী লীগের কিছু সমর্থকসহ অন্য দলের নেতাকর্মীরা এ ব্যবসায় জড়িত। ব্যবসাটি ভৈরবে একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পটে এ ধরনের ব্যবসা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নিলে তারা সক্রিয় সহযোগিতা করবেন।
স্থানটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা নরসিংদী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান মোবাইল ফোনে বলেন, সংরক্ষিত এলাকাটিতে বেড়া ও খুঁটি ভেঙে প্রবেশ করে প্রভাবশালী মহলের কিছু লোক কয়লার ব্যবসা পরিচালনা করছে। এলাকাটি উদ্ধার ও কয়লা ব্যবসা উচ্ছেদে ইতিমধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন বরাবরে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে সংরক্ষিত এলাকাসহ আশপাশ দখলমুক্ত ও কয়লামুক্ত করার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই তা বাস্তবায়ন করা হবে। সূত্র : সমকাল