শিরোনাম
◈ ইস্তাম্বু‌লে শা‌ন্তি আ‌লোচনা ব‌্যর্থ হ‌লে আফগানিস্তানের বিরু‌দ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে পাকিস্তান ◈ স্যর ক্রিকে ভারতের যুদ্ধমহড়া,শঙ্কিত পাকিস্তান বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দি‌লো, পাল্টা সেনা সমাবেশের ঘোষণা ◈ আজ রা‌তে বা‌র্সেলোনা - রিয়া‌ল ম‌া‌দ্রিদ মু‌খোমু‌খি  ◈ ২৫ লাখ কোটি টাকার ঋণে ডুবে পাকিস্তান সরকার দিশাহারা, গত অর্থবছ‌রের তুলনায় আরও বাড়ল ইসলামাবাদের ধার ◈ ইং‌লিশ লি‌গে টানা চতুর্থ পরাজয় লিভারপু‌লের, চেলসিকে হারিয়ে সান্ডারল্যান্ডের চমক ◈ মালয়েশিয়ায় পৌঁছেই নাচে মেতে উঠলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ◈ পি‌সি‌বির অদ্ভুত কাণ্ড, টেস্ট দ‌লের বর্তমান অধিনায়ককে বানিয়ে দেওয়া হলো বোর্ড কর্তা ◈ আরপিও শর্তে বিপাকে ছোট দল, ভোট করতে হবে নিজ দলের প্রতীকে ◈ বিজ্ঞাপনে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প: কানাডার পণ্যে আরও ১০ শতাংশ শুল্ক বাড়ালো যুক্তরাষ্ট্র ◈ বান্দরবানে রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির অভিযোগে যুবক গ্রেফতার

প্রকাশিত : ১৫ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৪:২৩ সকাল
আপডেট : ১৫ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৪:২৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অপসংস্কৃতির কবলে মরণদশায় গোবিন্দ

প্রকৌশলী নওশাদুল হক : আমাদের সবারই জানা, বর্তমান যুগটি ডিজিটাল বা থ্রিজির যুগ। থ্রিজি বা থার্ড জেনারেশনের আগে আরও জি ছিল নিশ্চই! আপাত দৃষ্টিতে সেগুলো জি এবং টু’জি হওয়াই স্বাভাবিক। সহজভাবে বলতে গেলে, প্রথম জেনারেশনকে ট্রেডিশনাল, দ্বিতীয় জেনারেশনকে আধুনিক এবং বর্তমান বা থার্ড জেনারেশরকে ডিজিটাল বলে বিবেচনা করা হয়। এই তিন জেনারেশনের দীর্ঘ সময়ে গোবিন্দের সাথে তার অর্ধাঙ্গিনীর যুগল সম্পর্কের নাম জনিত বিবর্তন মোটামোটি লক্ষনীয়। যেমন-জামাই-বউ, স্বামী-স্ত্রী, হাজবেন্ড-ওয়াইফ উল্লেখযোগ্য। এগুলো সব একই অর্থে ভিন্ন শব্দ মাত্র। তবে একেকটি শব্দে আবেগ ও প্রেম ভালোবাসার গভীরতা কিংবা চাকচিক্যতা মোটেও এক নয়।

রয়েছে অনেক সমীকরণ। চাকচিক্যতার দিক থেকে জামাই-বউ, স্বামী-স্ত্রী ও হাজবেন্ড-ওয়াইফ শব্দাবলী ক্রমানুযায়ী ঊর্ধ্বমুখী, আবার প্রেম ভালোবাসার গভীরতা পরিমাপের ক্ষেত্রে ক্রমশঃই নিম্নমুখী। এ বিষয়ে আজ লিখছি আমি, কিন্তু অভিজ্ঞতাটা অন্যের। জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে কর্মরত আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু, যে কিনা মাননীয় সংসদ সদস্যদের বেতন ভাতাদি শাখার অনেক কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে এমপি সাহেবদের সেবা দিয়ে থাকে। জাতীয় সংসদ ভবনে পোস্টিং এর সুবাধে আমার বন্ধুটির অফিসে অবসর সময়ে বসা হতো, আর তাতে অনেক এমপি সাহেবদের সাথে আলাপচারিতা এবং জ্ঞান আহরনের সুযোগ পেতাম। একদিন একজন এমপি মহোদয় আমাদের কজনার সাথে গল্পে গল্পে তার অভিজ্ঞতার তিন প্রজন্মকে তুলে ধরলেন এভাবে আমি দেখেছি আমার মা, আমার বাবার কথা ছাড়া এক কদমও দিতেন না।

অর্থাৎ মা সম্পূর্ণভাবে আমার বাবার কথায় চলত কিংবা কাজ করত। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানের এতটুকু কমতি দেখিনি কোনো দিনও। সেক্ষেত্রে প্রথম প্রজন্মের মৃত কিংবদন্তী আমার বাবা। দ্বিতীয় প্রজন্মের জীবন্ত কিংবদন্তী আমি নিজেই। আমি এবং আমার স্ত্রী সমানে সমান, অর্থাৎ আমি আংশিক আমার স্ত্রীর কথায় চলতে হয়, আবার আমার স্ত্রীও আংশিক আমার কথায় নড়েচড়ে। আর তৃতীয় প্রজন্ম বা থ্রিজি আমার রঙিন চশমার সামনেই। অর্থাৎ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষত আমার প্রযুক্তিবিদ ছেলে। বিবাহ করেছে বছর কয়েক হয়। সে তার ডিজিটাল ওয়াইফের খুবই বাধ্যগত হাজবেন্ড। সম্পুর্ণই তার ওয়াইফের কথায় উঠবস করুয়া। তার ওয়াইফের সিদ্বান্ত ও আদেশ-নিষেধের বাহিরে কোনো কর্ম করেছে, এরকম কোনো দুঃসাহসিক রেকর্ড তার নেই বললেই চলে। বড্ড লক্ষি ছেলে আমার! তার বাবা-মার সাথে কথা বলতে গেলেও ওয়াইফের সম্মতির প্রয়োজন পড়ে বৈকি! আমি অবাক দৃষ্টিতে ছেলেটিকে দেখি আর ভাবি আমার বাবা হতে ছেলে পর্যন্ত তিন প্রজন্মের আচরণগত পার্থক্যের একি বেহাল দশা!

খুব হেঁসেছিলাম সেদিন। মনে মনে ভাবছিলাম, এমপি মহোদয় যেহেতু দাদা-দাদীকে দেখেনি সেদিক থেকে তিনি দ্বিতীয় প্রজন্ম। আমি যেহেতু আমার দাদা-দাদীকে দেখেছি সেহেতু আমার বংশ পরিক্রমায় আমি তৃতীয় প্রজন্ম। তাহলে কি আমরা? আমাদের পরের প্রজন্ম? অনেক অনেক অনেক প্রশ্ন, কিন্তু কোনো উত্তর নেই। জানা থাকলেও! এই এমপি মহোদয় জীবনের অধিকাংশ সময় অর্থাৎ প্রায় পয়ত্রিশ বৎসর কাটিয়েছেন প্রশাসনে, সরকারি চাকরির বদৌলতে। পরবর্তীতে তিনি প্রতিমন্ত্রীও হয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে একজন সৎ সরকারি আমলা ছিলেন। আমার ন্যায় নিজের ঢোল নিজে পিঠানোর মতো অবস্থার কবি সাহিত্যিক নন। আবার পুরোপুরি রাজনৈতিকের ন্যায় ডেলিভারিতে অভ্যস্থ্য নয়।

হয়তবা সেজন্যই তার কথাগুলোতে ছিল সততার ছাপ, ছিল সরল এবং নিছক একজন সাদা মনের মানুষের বাস্তব অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু আমিতো এমপি সাহেবের মতো বড় আমলা কিংবা রাজনীতিবিদ নই। আমি একজন স্বঘোষিত অসাধারণ কবি-সাহিত্যিক। আমিতো আমাদের প্রজন্মের ছেলেদের অনুভূতিগুলো এমপি সাহেবের মতো সাধারণ ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না! নিশ্চই আমার লিখনির ভঙ্গিমা হবে একজন স্বঘোষিত অসাধারণ মাপের কবি-সাহিত্যিকের আদলে। ট্রেডিশনাল বা প্রথম প্রজন্মে ভলোবাসা প্রকাশে বউ বলছে তার জামাইকে বলছে এভাবে-

‘হে গোবিন্দ, রেখো চরণে।’ আধুনিক বা দ্বিতীয় প্রজন্মে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালোবাসাটা এরকম- ‘হে গোবিন্দ, বসো পিছনে।’ ডিজিটাল বা তৃতীয় প্রজন্মে হাজবেন্ডের প্রতি ওয়াইফের ভালোবাসার আর কোনো সীমারেখা নেই বটে! তাইতো হাজবেন্ডকে ওয়াইফ বলছে- ‘হে গোবিন্দ, থাকো চরণে।’
চতুর্থ বা পরের প্রজন্মে কে, কাকে, কি বলবে? নিশ্চয়ই কারোই জানা নেই। হয়তোবা সময়েই ঠিক করে দিবে-
‘হে গোবিন্দ?!?!?!?!’

পরিচিতি : প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগ
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়