শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী 

প্রকাশিত : ১৫ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৪:১৯ সকাল
আপডেট : ১৫ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৪:১৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রোহিঙ্গা হত্যায় সেনা সম্পৃক্ততা স্বীকার!

মোহাম্মদ আবু নোমান : সত্য দেরিতে হলেও প্রকাশ পাবেই। রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরুর পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ভুল স্বীকার রীতিমতো বিরল ঘটনা। অবশেষে রোহিঙ্গা নির্যাতনে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করল মিয়ানমার। অথচ নিহত ওই ১০ রোহিঙ্গা বিদ্রোহী ছিল না। সেনাপ্রধান মিন অং লেইংয়ের কার্যালয় থেকে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয়, গত ২ সেপ্টেম্বর ইনদিন গ্রামে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার সঙ্গে সেনাসদস্যরা জড়িত ছিল। ইতোপূর্বে সেনাবাহিনী বার বার দাবি করছিল, রোহিঙ্গাদের জ্বালাও পোড়াও, হত্যা, ধর্ষণ ও দেশত্যাগ করার খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বাড়াবাড়ি।

এবারের স্বীকারোক্তির ভাবখানাও এমনই যে, এতদিনে এই প্রথম মাত্র ১০ জনকে হত্যা করেছে। কিন্তু আসল বাস্তবতা হলো- বার্মার সন্ত্রাসী সেনারা ‘সিন্ধুর বিন্দু’ই কেবলমাত্র স্বীকার করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করে বলছে, বার্মিজ সেনারা নামমাত্র অপরাধ স্বীকার করেছে।
বহুদিন ধরে রাখাইনে গণহত্যা, গণধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিস্তর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুচি বলেছিল, তারা ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছেন। বয়োবৃদ্ধ পুরুষ, মহিলা, শিশুরাও কি সন্ত্রাসী? এরপর দীর্ঘদিন নীরব ও নির্যাতন দেখার পর বাকপটুতার সঙ্গে সুচি বলেছেন, ‘তিনি কিছুই শোনেননি, কিছুই জানেন না। ‘রাখাইন থেকে মুসলিমরা কেন পালিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে খুঁজে দেখবেন’। সারা পৃথিবী দেখছে কেন রাখাইন থেকে মুসলিমরা পালিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে, আর সুচি জানেন না? রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এক হওয়ার ডাক দিয়ে বার্মার সেনাপ্রধান বলেছিল, ‘মুসলমানরা পালাও, নইলে সবাইকে মেরে ফেলব’।

আর সুচি বলেন, ‘রাখাইন থেকে মুসলিমরা কেন পালিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে’?
রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র উদঘাটন ও নিহতের সংখ্যা আসলে কত সেটা সুর্নিদিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। কারণ, সেখানে বিশ্বের কোনো প্রিন্ট মিডিয়া বা গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের যেতে দেওয়া হয় না। স্যাটেলাইটের ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় যা শোনা গেছে তা রীতিমতো ভয়াবহ। কেউ যখন গণহত্যার মতো অপরাধের পরিকল্পনা করে সেটা তো আর কাগজে কলমে করা হয় না। সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে সম্প্রতি প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। প্রথম মাসেই ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা হত্যা করেছে সেনাবাহিনী। নিহতের মধ্যে ৫ বছরের কমবয়সি শিশুর সংখ্যা ৭৩০, যাদের অন্তত ৬০ ভাগকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছে, প্রত্যেককে পেছন থেকে গুলি করা হয়েছে। জরিপে সেইসব পরিবারের কথা ধরাই হয়নি, যাদের কোনো সদস্যই হয়ত বেঁচে নেই অথবা এমন কোনো পরিবার যারা স্বজনদের হারিয়ে মিয়ানমারেই রয়ে গেছে।

গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা নির্যাতন শুরুর পর থেকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সহিংসতার জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দায়ি ও এই আক্রমণকে ‘এথনিক ক্লিনজিং’ বা জাতি-সম্প্রদায়গত নির্মূল অভিযান হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল দেশটির সেনা কর্তৃপক্ষ। জাতিসংঘ ফর্টিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী ম্যাথং স্মিথ বলেন, মিয়ানমার সেনারা যে ঘটনাটির কথা স্বীকার করেছে, উত্তর রাখাইন জুড়ে তেমন অসংখ্য ঘটনার তথ্যপ্রমাণ আছে তাদের কাছে। এছাড়া অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, এমন অসংখ্য তথ্যপ্রমাণ আছে, মিয়ানমারের সেনারা রোহিঙ্গাদের হত্যা ও ধর্ষণ চালিয়েছে এবং তাদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে। অ্যামনেস্টি বলেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে খুন, বলপূর্বক নির্বাসন, নির্যাতন, ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং অন্যান্য অমানবিক কর্মকা-ের প্রমাণ পেয়েছে, যা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের বিধি অনুযায়ী সবই মানবতাবিরোধী অপরাধ।

মিয়ানমার সরকার বলছে অগাস্ট মাসে তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর সন্ত্রাসী হামলার জবাবেই তারা সেখানে অভিযান চালাতে শুরু করে। অথচ বিবিসির তথ্য প্রমাণ দিয়ে বলেছে, বহু আগে থেকেই এই সেনা অভিযানের পরিকল্পনা শুরু করাসহ মিয়ানমার সেনারা স্থানীয় বৌদ্ধদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের কাছে অস্ত্রও সরবরাহ করছিল। সবচেয়ে যা বিস্ময়কর তা হলো, সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করছে মিয়ানমারের বৌদ্ধধর্মাবলম্বী মানুষ, যাদের একসময় নিতান্তই শান্তিকামী ভাবা হতো। বৌদ্ধধর্মে শুধু মানুষ নয়, যেকোনো প্রাণী হত্যাই ভয়ানক অপরাধ। অথচ ভগবান বুদ্ধের সেই অনুসারীরাই এখন পুরো একটা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে উঠেপড়ে লেগেছে।
রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের সময়েও রাখাইন গ্রামে বার্মার সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ চালানো থেকে এটাই প্রমাণিত হয়, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার এই প্রতিশ্রুতি স্রেফ একটি প্রচারণা নয় কি?

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়