রাজধানীর একটি ফ্ল্যাটে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হত্যা করে দেহ টুকরো টুকরো করার এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। ফ্ল্যাটের নিচের তলার এক প্রতিবেশীর সন্দেহ থেকে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
সন্দেহজনক কার্যকলাপের সূত্রপাত ও ঘটনার বর্নণা:
নিচের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা জানান, গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই ২০২৫) সকাল থেকে ওপরের ফ্ল্যাট থেকে অস্বাভাবিক শব্দ আসছিল। সাধারণত পানির শব্দের মতো নয়, বরং নুড়ি বা বালু ফেলার মতো শব্দ শুনে তার সন্দেহ হয়। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, হয়তো কেউ দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করছে বা চুরি হচ্ছে।
বাইরে পরীক্ষা করে কোনো সমস্যা না পেয়ে তিনি অনুমান করেন, শব্দগুলো বাথরুম থেকে আসছে, সম্ভবত কেউ বিড়াল বা কবুতরের বর্জ্য ফেলছে। এরপর তিনি দেখেন তার নিজের পাইপ ফেটে পানি পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তিনি ওপরের ফ্ল্যাটে যান।
প্রতিবেশী জানান, গত ৮ তারিখে ওই ভাড়াটিয়ার স্ত্রী ছয়জন পুরুষকে নিয়ে এসেছিলেন, যাদের তিনি আত্মীয় বলে দাবি করেছিলেন। পরে ভাড়াটিয়ার স্বামীকে ফোন করা হলে তিনি বাড়িতে কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানান এবং অন্য একটি স্থানে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি নিশ্চিত করেন যে, তিনি ওই পুরুষদের চিনতেন এবং কোনো সমস্যা ছিল না।
পরে আবার সন্দেহজনক শব্দ শুরু হলে প্রতিবেশী বুঝতে পারেন যে, সমস্যাটি ভেতরের। তিনি ভাড়াটিয়াকে দরজা খুলতে বলেন, কিন্তু ভাড়াটিয়া প্রায় ১৫ মিনিট ধরে দেরি করেন এবং বাথরুমে ব্যস্ত আছেন বলে জানান।
অবশেষে ভাড়াটিয়া দরজা খুললে প্রতিবেশী তাকে শব্দ এবং এতক্ষণ বাথরুমে কী করছিলেন তা জিজ্ঞাসা। বাথরুমে প্রবেশ করে তিনি দেখেন কাপড় এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে এবং কমোডে মাংসের দুটি টুকরো ভাসছে। ভাড়াটিয়া দাবি করেন যে, তিনি ফ্রিজ পরিষ্কার করছিলেন এবং মাংস ফেলে দিচ্ছিলেন। তবে, প্রতিবেশী রক্ত এবং মাংসের ছোট টুকরাও দেখতে পান।
এরপর প্রতিবেশী বুঝতে পারেন যে, ভাড়াটিয়ার স্ত্রী নিখোঁজ। ভাড়াটিয়া দাবি করেন যে, পারিবারিক বৈঠকে আসা লোকজনের সাথে তার স্ত্রী চলে গেছেন। ফ্ল্যাট তল্লাশি করার পর, প্রতিবেশী বক্স খাট তুলে শুধু ভুক্তভোগীর দুটি পা দেখতে পান।
প্রতিবেশী হতবাক হয়ে বাইরে থেকে দরজা তালাবদ্ধ করে সাহায্যের জন্য নিচে যান। তিনি বুঝতে পারেননি যে, খুনি ১০ তলা থেকে গ্রিল ভেঙে পালাতে পারে । ষষ্ঠ তলার এক মহিলা ফোন করে জানান যে, কেউ গ্রিল বেয়ে নিচে নামছে, যাকে তিনি চোর ভেবেছিলেন। এভাবেই খুনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
পরে পুলিশ রান্নাঘরে আরও দেহের অংশ খুঁজে পায়। খুনি একজন চালক এবং একটি পিকআপ ট্রাকের মালিক। পুলিশ তার গাড়ির কাগজপত্র জব্দ করেছে। দম্পতির মধ্যে দীর্ঘদিনের পারিবারিক সমস্যা ছিল এবং স্ত্রী প্রায় দেড় মাস ধরে বাইরে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি ফিরে এসেছিলেন এবং ভাড়াটিয়া প্রথমে তার ফ্ল্যাট ছাড়ার পরিকল্পনা বাতিল করতে বলেছিলেন। সূত্র: চ্যানেল২৪