শিরোনাম
◈ নির্বাচনের সময় যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ ইসরায়েলের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ইঙ্গিত লেখা ছিল কুরআনে (ভিডিও) ◈ মাছ কেটে প্রতি মাসে অর্ধ কোটি টাকা উপার্জন করেন কুমিল্লা নগরীর শতাধিক মাছকাটা শ্রমিক! ◈ ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠকের পর রাজনীতিতে স্বস্তির ইঙ্গিত: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ◈ নজিরবিহীন সতর্কতা জারি: ইরানি নাগরিকদের যা বলছে ইসরায়েল ◈ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে: সিইসি ◈ যে ইরানি ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছেন! ◈ ঈদের বিরতির পর নগর ভবনে ফের ইশরাক ◈ চীনে কারখানায় রোবটের হামলায় আতঙ্ক, ভিডিও ভাইরাল ◈ দুবাইয়ে ৬৭ তলা ভবনে ভয়াবহ আগুন

প্রকাশিত : ১০ জুন, ২০২৫, ১১:৪২ দুপুর
আপডেট : ১৫ জুন, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গর্ত খুঁড়তে খুঁড়তে পৃথিবীর অপর প্রান্তে পৌঁছানো যায় কি? খুজতে গিয়ে যা জানাগেল (ভিডিও)

ছোটবেলায় আমরা অনেকেই ভাবতাম—যদি পৃথিবীর মাটিতে দাঁড়িয়ে একটানা গর্ত খোঁড়া যায়, তবে কি একসময় আমরা পৃথিবীর অপর প্রান্তে পৌঁছে যাব? এমন ভাবনার বাস্তব পরীক্ষা শুরু করেছিল একদল সোভিয়েত বিজ্ঞানী। উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর কেন্দ্রের রহস্য উন্মোচন করা। সূত্র: যমুনাটিভি

১৯৭০ সালের ২৪ মে, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজ্ঞানীরা মাটির নিচে অভূতপূর্ব এক অভিযান শুরু করেন। উত্তর-পশ্চিম রাশিয়ার কোলা উপদ্বীপে শুরু হয় খননকাজ। নাম দেওয়া হয় "কোলা সুপারডিপ বোরহোল"। লক্ষ্য ছিল যতদূর সম্ভব গভীরে যাওয়া, এবং সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা।

পাতালের পথে বিজ্ঞান

পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের নিচে মূলত তিনটি স্তর—ক্রাস্ট, ম্যান্টেল এবং কোর। বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্য ছিল এই স্তরগুলোর প্রকৃতি সরাসরি বুঝে নেওয়া। শুরুতে খননের গর্তের ব্যাস ছিল মাত্র ৯ ইঞ্চি। ৭,০০০ মিটার গভীরে যাওয়ার পর যন্ত্রপাতি সমস্যায় পড়ে। পরে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এগিয়ে যায় কাজ।

অবশেষে ১৯৮৯ সালে বিজ্ঞানীরা পৌঁছান ১২,২৬২ মিটার, অর্থাৎ প্রায় ১২.৩ কিলোমিটার গভীরে। কিন্তু এখানে এসে তারা চরম তাপমাত্রার মুখে পড়েন—প্রায় ২২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস! এত উচ্চ তাপে ড্রিল বিট গলে যেতে শুরু করে। এরই মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ায় ১৯৯২ সালে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় এই প্রকল্প। ২০০৮ সালে গর্তটি সম্পূর্ণ সিলগালা করে দেওয়া হয়।

ব্যর্থতা নয়, বৈজ্ঞানিক সাফল্য

এই অভূতপূর্ব অভিযান ব্যর্থতা নয়—বরং এটি পৃথিবীর গভীরের অনেক রহস্য উন্মোচন করেছে। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন এমন কিছু জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া), যারা দুই বিলিয়ন বছর ধরে উচ্চ তাপ ও চাপে টিকে আছে! এমনকি তারা ভূগর্ভে পানি ও স্বর্ণের অস্তিত্বও পেয়েছেন, যদিও এত গভীর থেকে তা উত্তোলন প্রায় অসম্ভব।

আবিষ্কৃত হয়েছে ঘন মিথেন গ্যাস এবং পাথরের গঠনে নতুন বৈশিষ্ট্য, যা পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে।

‘ওয়েল টু হেল’: এক রহস্যময় গুজব

এই গহ্বর ঘিরে ছড়ায় এক ভৌতিক গুজব। কেউ কেউ দাবি করেন, গর্তে মাইক্রোফোন নামিয়ে শোনা গেছে নরকের আর্তচিৎকার! ‘ওয়েল টু হেল’ নামে পরিচিত এই গুজবকে অবশ্য বিজ্ঞানীরা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তারা জানান, কোনো মাইক্রোফোন ব্যবহার করা হয়নি, কিছু যান্ত্রিক শব্দ হয়তো বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।

পৃথিবীর কেন্দ্রে পৌঁছানোর দূরত্ব প্রায় ৬,৩৭০ কিলোমিটার। কোলা বোরহোল তার মাত্র ০.২ শতাংশ পথই যেতে পেরেছে। তুলনা করলে এটি যেন বিশাল সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে বালু নেড়েচেড়ে দেখার মতোই।

তবুও, এই অভিযান আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে—আমরা নিজেদের গ্রহ নিয়েই কতটা কম জানি। প্রকল্পটি থেমে গেলেও রেখে গেছে অমূল্য বৈজ্ঞানিক তথ্য, আর প্রমাণ করে দিয়েছে—মানবজ্ঞান সীমাহীন হলেও, পৃথিবীর গহ্বর এখনও রহস্যে মোড়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়