শিরোনাম
◈ অভিনেত্রী তানিন সুবহা মারা গেছেন ◈ ফের ছড়িয়ে পড়েছে করোনা, মহামারির শঙ্কায় বিজ্ঞানীরা ◈ করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে উদ্বেগ, ঈদের ফিরতি ট্রেনযাত্রায় মাস্ক পরার অনুরোধ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ◈ এভারেস্টের পাদদেশে কিং কোবরার হানা: জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ বার্তা দিচ্ছে নেপালের পার্বত্য অঞ্চল ◈ নেইমার করোনায় আক্রান্ত. আ‌ছেন আই‌সে‌ালেশ‌নে ◈ চার দিনের সরকারি সফরে কাল সোমবার যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা  ◈ টেস্ট ক্রিকেটের চে‌য়ে প‌রিবা‌রের পেট চালানো জরুরি: আ‌ন্দ্রে রাসেল ◈ আই‌পিএ‌লে আরসিবির শিরোপা উদযাপনে নিহত ১১, বিরাট কোহলির নামে থানায় অভিযোগ ◈ সৌদি আরবের ভিসা কত দিন স্থগিত থাকবে?  ◈ এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে সরকারের সামনে যত চ্যালেঞ্জ 

প্রকাশিত : ০৮ জুন, ২০২৫, ০৫:৪২ বিকাল
আপডেট : ০৮ জুন, ২০২৫, ০৯:১১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সৌদি নারীরা যেভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন গোপন কারাগারে, চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল অনুসন্ধানে

সৌদি আরবে শত শত নারী পরিবার ও স্বামীর পক্ষ থেকে অবাধ্যতা, সামাজিক নিয়ম ভঙ্গ, বা বাড়ি থেকে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে গোপনীয়তা বজায় রেখে পরিচালিত ‘পুনর্বাসন কেন্দ্র’ বা দার আল-রেয়া নামক প্রতিষ্ঠানে বন্দী রয়েছেন। গার্ডিয়ানের এক বিস্তারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সেখানে নারীরা ‘নারকীয়’ পরিবেশে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন, যেখানে তাদের ওপর সাপ্তাহিক চাবুকের দণ্ড, জোরপূর্বক ধর্মীয় শিক্ষাদান এবং বাইরের কারো সঙ্গে যোগাযোগের নিষেধাজ্ঞাসহ নৃশংস নির্যাতন চালানো হয়।

এই পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে বন্দী নারীরা বাধ্যতামূলকভাবে সেদেটিভ খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে বাধ্য হন, নগ্ন অনুসন্ধান করা হয় এবং তাদের কুমারীত্ব পরীক্ষা করা হয়। অনেকেই জানান, শুধু মাত্র প্রার্থনা না করার জন্য দণ্ডিত হয়েছেন, আবার একাকী অবস্থায় অন্য নারীর সঙ্গে থাকার অভিযোগে ‘সমকামী’ হওয়ার দোষে চাবুক খেতে হয়েছে। এমনকি, নিজের পরিবার থেকে যৌন নির্যাতন সহ্য করেও তাদের শাস্তি হিসেবে এই কেন্দ্রে পাঠানো হয়, যেখানে নারীদের ‘পরিবারের সম্মান রক্ষার’ নামে আটকা রাখা হয়।

নির্বাসনে থাকা অধিকারকর্মী সারা আল-ইয়াহিয়া জানিয়েছেন, তিনি কয়েকজন বন্দীর সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা বলছেন তারা একা, ভীত এবং হুমকির মুখে রয়েছেন। ইয়াহিয়া নিজেও ১৩ বছর বয়সে যৌন নির্যাতনের শাস্তি এড়াতে এই কেন্দ্রে পাঠানোর হুমকি পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা আমার ওপর যৌন নির্যাতন চালাতো, আর আমাকে এই কেন্দ্রে পাঠানোর হুমকি দিয়ে তার দমন চালাতো।’

মানবাধিকার সংস্থা আলক্বস্ত জানিয়েছে, এই কেন্দ্রে বন্দী নারীদের নিরাপত্তাহীনতা এতটাই গভীর যে অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। অনেক নারীর অভিযোগ, তারা পুলিশের কাছে নির্যাতনের অভিযোগ জানালেও বরং তাদের পরিবার বা অভিভাবকের ইচ্ছায় এই কেন্দ্রে বন্দী রাখা হয়েছে।

সরকার অবশ্য এই অভিযোগগুলো কঠোরভাবে অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, এই কেন্দ্রগুলো ‘আদালতের নির্দেশে’ প্রতিষ্ঠিত এবং নারীরা ‘স্বেচ্ছায়’ কেন্দ্রে আসতে পারেন, ব্যক্তিগত ও শিক্ষাগত কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন এবং পরিবারের অনুমতি ছাড়াই কেন্দ্রে প্রবেশ-প্রস্থান করতে পারেন। তবে অধিকাংশ সাক্ষ্য ও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীরা বাস্তবে কেন্দ্রে আটকা পড়ে এবং পরিবার বা অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে মুক্ত হতে পারেন না।

২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান নারীদের অধিকারের জন্য কিছু সামাজিক সংস্কার এনেছেন, যেমন নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি এবং পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া দেশের বাইরে যাত্রার সুবিধা। তবে বাস্তবে নারীদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং অধিকারে বাধা এখনও অনেক ক্ষেত্রে বজায় আছে। গত কয়েক বছরে, নারীর অধিকার নিয়ে আওয়াজ তোলার অপরাধে বহু নারী দণ্ডিত হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরবের এই পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো নারীর স্বাধীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট নিদর্শন। তারা বলছেন, এসব কেন্দ্র বন্ধ করে নারীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিকল্প নেই, যাতে নির্যাতিত নারীরা দমনের শিকার না হয়ে সুরক্ষিত জীবন যাপন করতে পারে।

এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সৌদি সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে এবং নারীদের বিরুদ্ধে এই ধরনের নৃশংস আচরণ বন্ধ করতে আহ্বান জানাচ্ছে। অনুবাদ: চ্যানেল২৪

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়