কুমিল্লার গোমতী নদীর তীরে একটি পুরনো তেঁতুল গাছকে ঘিরে বহুদিন ধরেই একটি ভুতুড়ে লোক কাহিনি প্রচলিত ছিল বলে একটি খবর ছাপা হয়েছিল আজ থেকে ১১৫ বছর আগে। খবরটি প্রকাশিত হয় ১৯১০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ভারতের দ্য ইংলিশম্যান ওভারল্যান্ড পত্রিকায়। পত্রিকাটির কুমিল্লা প্রতিনিধি খবরটি লিখেছিলেন।
লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরীতে পাওয়া পত্রিকার সংবাদ থেকে জানা যায়- স্থানীয়দের বিশ্বাস ছিল, ওই পুরনো তেঁতুল গাছের আশপাশে মাঝে মাঝে এক তরুণীর আবছা ছায়া দেখা যায়। ছায়াটি যেন কিছু খুঁজে বেড়ায়—চোখ বারবার গাছের গোড়ার দিকেই যায়, যেন সেখানে লুকিয়ে আছে কোনো হারানো স্মৃতি।
যখন কেউ সাহস করে তার দিকে এগিয়ে যায়, তখন ছায়াটি ধীরে ধীরে গাছের চারপাশে ঘুরে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়। অথচ কিছুটা দূর থেকে তাকালে মনে হয়, সে যেন আবার ফিরে এসেছে—একই জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেমনটি ছিল আগেও।
আরও আশ্চর্য, যদি কেউ একইভাবে তার পেছন পেছন বারবার যায়, প্রতিবারই একই দৃশ্য ঘটে—অদৃশ্য হওয়া, তারপর ফের ফিরে আসা। যেন সময় সেখানে এক অনন্ত চক্রে ঘুরছে।
অনেকে বিশ্বাস করে, এই গাছের রহস্যময়তার পেছনে আছে এক করুণ ভালোবাসার গল্প। কথিত আছে, এক তরুণী এখানে তার প্রেমিকের সঙ্গে ঝগড়া করে আত্মহত্যা করেছিলেন। কেউ বলেন, সে তার প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করছিল—কিন্তু সে আসেনি। অবশেষে তরুণীটি বুকে পাথর বেঁধে গোমতীর জলে ঝাঁপ দিয়েছিল, ভালোবাসার যন্ত্রণা আর অপেক্ষার ক্লান্তি নিয়ে।
তবে এখানেই গল্পের শেষ নয়।
আরও একটি গুজব প্রচলিত আছে—কেউ কেউ নাকি এক গোপন মন্ত্রের সাহায্যে সেই আত্মাকে বশে আনতে চেয়েছিল। এমনকি বলা হয়, এক স্থানীয় ওঝা তরুণীর আত্মাকে একটি কৌটায় আবদ্ধ করে রাখে। সেই কৌটা রাখা হয়েছিল একটি কাঠের লাঠি দিয়ে তৈরি গায়ে লাগানো বাক্সের ভেতর, যা আজও গাছের গোড়ার নিচে পুঁতে রাখা আছে।
লোকজন বলে, মাঝে মাঝে সেই বাক্সটা নাকি অদৃশ্যভাবে কেঁপে ওঠে—যেন ভেতরে কিছু এখনও মুক্তির জন্য কাঁপছে।
কুমিল্লা, সেপ্টেম্বর ৪ ১৯১০
সূত্র: কুমিল্লার কাগজ