মনজুর এ আজিজ : অলিম্পিয়াডের আদলে জাতীয় পর্যায়ে আগামী ১০মে থেকে প্রথমবারের মতো শুরু হচ্ছে মাইক্রোসফট অফিস স্পেশালিস্ট বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ। রাজধানীর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন ক্যাটগরিতে অনুষ্ঠিত হবে এই প্রতিযোগিতা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস প্রফেশনালস, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি এবং ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
বুধবার সকালে রাজধানীর হোটেল রেডিসনে প্রতিযোগিতার বিস্তারিত তুলে ধরেন ভি টিউটরের কো-ফাউন্ডার ও চিফ লার্নিং অফিসার কাজী শামীম। এসময় প্রতিযোগিতার লোগো উন্মোচন করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কাজী মোশতাক জহির। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ (এমডিপি) চেয়ারম্যান ড. রিদওয়ানুল হক, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অফ সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্চিনিয়ারিং-এর ডিন ড. আহমেদ ওয়াসিফ রেজা এবং আয়োজনের প্রধান স্পন্সর মেঘনা গ্রুপ অফ ইনডাস্ট্রিজ-এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার কাজী মো. মহিউদ্দিন ও হসপিটালিটি পার্টনার রেডিসন ব্লুর সেলস ও মার্কেটিং পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশ নিতে পারবেন সর্বোচ্চ ৩০০ জন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে গ্রুমিং শেসন। এজন্য ইউটিউবে মাইক্রসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ার পয়েন্ট প্রফেশনাল সার্টিফিকেশন টিউটোরিয়াল। প্রতিযোগিতার কাঠামো অনুযায়ী, বিভাগীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ তিনজনকে ‘চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে নির্বাচিত করা হবে। সেখান থেকে জাতীয় পর্যায়ের জন্য বাছাই করা হবে শীর্ষ ১০ জনকে। জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ীরা পাবেন মাইক্রোসফট সার্টিফিকেশন অর্জনের সুযোগ। এছাড়া এলএস (লং লিস্টেড) প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে সেরা ৩ জনকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে ‘গালা রাউন্ড’, যার আগে আয়োজন করা হবে একটি বিশেষ গ্রুমিং সেশন। গালা রাউন্ডের বিজয়ীরা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রতিযোগিতার মোট পুরস্কার মূল্য যুক্তরাষ্ট্র সফরসহ ২০ লাখ টাকা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম স্থানের জন্য ৮,০০০ ডলার, দ্বিতীয় স্থান ৪,০০০ ডলার এবং তৃতীয় স্থান ২,০০০ ডলার পাবেন।
ব্যক্তিগত ইমেইল ও ফোন নম্বর দিয়ে ক্যারিয়ার গঠনের ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম ভি-টিউটরের ওয়েবে নিবন্ধন করে বাংলাদেশের ১৩ থেকে ২২ বছর বয়সী সকল শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন। অংশগ্রহণকারীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকলেও নিবন্ধন ফি হিসেবে দিতে হবে ৩০০ টাকা। দ্বিতীয় রাউন্ড চলবে ২১ মে পর্যন্ত। জাতীয় রাউন্ড হবে ২৩ মে এবং ২৪ মে গালা রাউন্ড।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে ডিজিটাল দক্ষতায় পারদর্শী ও আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বক্তারা। এসময় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কাজী মোশতাক জহির তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যুথবদ্ধ মেলবন্ধনের ও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, তরুণদের শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে সামনের দিনে দক্ষতাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হবে। এআই এর মতো ভবিষ্যতমুখী সফটস্কিল রপ্ত করতে হবে। এজন্য আমাদের মন্ত্রণালয় এ ধরনের উদ্যোগে সবসময় পাশে থাকে। আমার বিশ্বাস, এই উদ্যোগ ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান ও উচ্চশিক্ষার জন্য তরুণদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ডিজিটাল দক্ষতায় প্রস্তুত ও সার্টিফাইড করা এবং বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে গ্লোবাল আইটি প্রতিযোগিতায় নেতৃত্ব দেওয়ার পথে এগিয়ে নেবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রেদোয়ান হক বলেন, ৩৭তম বিসিএসে এত বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ হয়েছিল যে তা ব্রুনাইয়ের জনসংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই প্রবণতা আমাদের জনশক্তিকে অকার্যকর করে তুলছে। আমাদের নতুন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, বদলাতে হবে চিন্তাধারা।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগের ডিন ড. ওয়াসিফ রেজা বলেন, এই উদ্যোগ দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি যুগান্তকরী পরিবর্তন আনবে। তরুণদের প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ করে গড়ে তোলার পথে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ কাজী মোহাম্মদ মোহিউদ্দিন বলেন, বর্তমান পৃথিবীতে শুধু জ্ঞান নয়, দক্ষতা বা স্কিলসও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি, তরুণরাই আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে।
চিফ ইয়ুথ অ্যাডভাইজার কাজী মুস্তাক জহির বলেন, এই সরকার এখন পর্যন্ত বড়দের জন্য ৫০,০০০ এবং ছোটদের জন্য ২,০০,০০০-এর বেশি প্রযুক্তিভিত্তিক ইভেন্ট আয়োজন করেছে। তরুণরাই আমাদের পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। আমি বিশ্বাস করি, তারাই আগামী দিনের প্রযুক্তিগত বিপ্লব ঘটাবে। এই বিপ্লব ঘটাতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।