সালেহ্ বিপ্লব: [২] বিএনপি থেকে বহিস্কৃত নেতা ও সাবেক এমপি মেজর আখতারুজ্জামান (অব.) বলেছেন, দেশের স্বার্থে তিনি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান। তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতার একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। সরকারি দল ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দি বিএনপি নেতাদের মুক্তিসহ বেশ কিছু ছাড় দিতে রাজি আছেন। এখন বিএনপি কথা বলতে রাজি হলেই সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
[৩] রোববার রাতে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী সিনিয়র সাংবাদিক আমান উদ দৌলার সঙ্গে ফোন সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন আখতারুজ্জামান।
[৪] আমান তার ভূমিকায় বলেন, বিএনপি এখন তিন ভাগে বিভক্ত। শমসের মোবিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপি। একটি শোনা যাচ্ছে মেজর আখতারের নেতৃত্বে। আরেকটি তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন। তারেক রহমানের বিএনপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যে, তারা নির্বাচনে যাবেন। প্রধানমন্ত্রী পদে শেখ হাসিনাই থাকবেন সিম্বলিক হিসেবে, তবে কেবিনেট ভেঙে দিতে হবে। আওয়ামীমনা ৫ জন ও বিএনপিমনা ৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে কেবিনেট করতে হবে। এটা প্রথম প্রস্তাব।
দ্বিতীয় প্রস্তাব হলো বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি দিতে হবে। তাদের হিসেবে লাখখানেক নেতাকর্মী জেলে রয়েছেন।
এরপর বলা হয়েছে, আওয়ামীপন্থী আমলাদের নড়াচড়া করতে হবে। নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে আসতে হবে।
আরো কিছু বিষয় আছে। নির্বাচনও কিছুদিন পেছাবে, সে প্রস্তাবও আছে।
[৫] জবাবে আখতারুজ্জামান বলেন, আমি দলের কোনো অংশ না, কোনো অংশ তৈরির চেষ্টাও করছি না। আমি বলেছি, নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে তারেক রহমানের যে সিদ্ধান্ত সেটা নিয়ে। নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। এর মধ্যে আমি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে একটা সমন্বয়ের চেষ্টা করছি।
[৬] তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করে বলেছে, তারা একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। তারা জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বলেছে। আমি দেশটাকে একটা সংঘাতের দিকে না নিয়ে কীভাবে দুটি বড় দলের মধ্যে সমন্বয় করা যায়, সেই চেষ্টা করছি।
[৭] ইতিমধ্যে সরকারি দলের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে আমি কথা বলতে পারিনি। আমি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম, দেখা করতে পারিনি। তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি। কথা বলতে পারিনি। বিভিন্ন মাধ্যমে ওনার কাছে আমি সংবাদ পাঠিয়েছি। প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আপনি যে কয়েকটি প্রস্তাবের কথা বলেছেন, আমরা সেগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। গত ১৫ দিনে এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে।
[৮] তিনি বলেন, এখন সরকার বলেছে, বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে, তাহলে স্বাগতম জানাবে। বিএনপি যদি এক দুই দিনের মধ্যে ঘোষণা দেয়, তারা নির্বাচনে আসবে, তাহলে নির্বাচন এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে পেছাতে পারে।
[৯] দ্বিতীয়ত কেবিনেট ভেঙে দেওয়ার যে প্রস্তাব, সেটার সুযোগ সংবিধানে নেই। কেবিনেট ছোটো করা যাবে কিন্তু ভেঙে দেওয়া যাবে না। সুতরাং ৫ জন করে নেওয়ার যে সুযোগ ২০১৪ সালে ছিলো, সেটা এখন নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কথা দিয়েছেন, তিনি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করাবেন।
[১০] তৃতীয়ত প্রশাসনে রদবদলের কথা বলেছেন। আমার মনে হয় প্রশাসনে রদবদল এখন প্রয়োজন নেই। পুরো প্রশাসনটাই আওয়ামী লীগের হয়ে গেছে। বদলালে লাভ হবে না। তাদের ওপর বিশ^াস রাখতে হবে।
[১১] তিনি বলেন, একটা বিশেষ ব্যাপার। ২৯৮ জনের প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর বাইরেও যে কেউ স্বতন্ত্র দাঁড়াতে পারেন। দল তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না। এটা একটা সিগনিফিক্যান্ট সিদ্ধান্ত। এতে করে তারা কেন্দ্রে ভোটার নিয়ে আসতে পারবে। নির্বাচনটা প্রতিযোগিতামূলক করতে পারবে। নির্বাচনটা অবাধ হবে।
[১২] মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান বলেন, আমি যেটা করতে পারি, নেগোশিয়েট করতে পারি। দুদলের সঙ্গে কথা বলতে পারি। আলোচনা করতে পারি। তবে প্রথম কথা হলো, বিএনপিকে আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, নির্বাচনে আসবে।
[১৩] দ্বিতীয় যে কথা, রাজবন্দীদের মুক্তি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মুক্তি হতে পারে। তালিকা দাও। আমরা দেখবো। তিনি উদার আছেন। তিনি ওনার বিরোধিতা করলে উনি ছাড় দেবেন না। তিনি বলেছেন, আপনি যতোজন চান, গত ৬ মাসে যাদের গ্রেপ্তার বা সাজা হয়েছে, তাদের ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করা যাবে। সেক্রেটারি জেনারেলসহ স্থায়ী কমিটির যতো নেতা গ্রেপ্তার হয়েছে, সবাইকে ছাড়িয়ে আনা যাবে। এটা বিরাট কোনো ইস্যু নয়। কিন্তু প্রথম কথা হচ্ছে, বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা নির্বাচনে আসবে কি না। কোনো শর্ত নয়, তবে নির্বাচনে এলে বিএনপিকে ছাড় দেওয়া হবে।
[১৪] তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মন পরিস্কার। উনি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করাবেন। এবং নির্বাচনের পর মানুষ যাতে বলে, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। উনি বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসুক। দেখুক। সুষ্ঠু না হলে তখন আমরা ব্যবস্থা নেবো।
[১৫] আখতারুজ্জামান বলেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে আমরা যে সুবিধাটা পাবো, গত এক বছরে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের মুক্তি মিলবে। দ্বিতীয়ত, যে নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে, তাদের পালানো বন্ধ হবে। আর এটা করতে পারবো খুব তাড়াতাড়ি।
[১৬] এখন বিএনপি যদি চায়, যদি সময় দেয়, আমি রাত বারোটায় গিয়ে হলেও দেখা করবো। দেশের স্বার্থে জাতির স্বার্থে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা সমঝোতার চেষ্টা করবো।
[১৭] প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বিএনপির লোক। আমি শহীদ জিয়ার লোক। খালেদা জিয়ার লোক। দেশের শান্তির জন্যে দুই দলের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে চাই।
[১৮] মেজর (অব.) আখতার বিএনপিকে অনুরোধ করেন, ২৭ তারিখ বিকেল চারটার মধ্যে আমাকে জানান, আলোচনা করবেন কি না। সেক্ষেত্রে আমি সমঝোতার উদ্যোগ নেবো। কিন্তু তার প্রস্তাবটি বিএনপি আমলে নিয়েছে কি না, জানা যায়নি।
আপনার মতামত লিখুন :