মনিরুল ইসলাম: গুম হওয়া পারভেজের কিশোরী মেয়ে বাবাকে দেখে না অনেক বছর। তার ছোট্ট ভাইটিও বাবাকে দেখতে পায়নি। এখন তার একটাই প্রশ্ন ‘আমি আর আমার ভাই বাবাকে কি কোনোদিন জড়িয়ে ধরতে পারবো না’? এমন প্রশ্নে আসলে থমকে যায় পুরো পৃথিবী। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও সেই প্রশ্নে থমকে যান, চোখ থেকে জল ফেলে কষ্ট ভাগাভাগি করেন সেই কিশোরীর সঙ্গে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) স্বৈরাচারের বিনাশ ঘটানো গৌরবের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ পরিবারের সম্মানে বিএনপি ‘জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সদস্যসচিব আবুল হোসেন। এরপর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মূল আয়োজন শুরু হয়। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আলোচনা সভায় শহীদের পিতা, মাতাসহ শহীদ পরিবারের স্বজনরা বক্তব্য রাখেন। আবেগ তাড়িত হয়ে কান্না কন্ঠে বক্তব্য রাখেন কেউ কেউ। অভিযোগ করেন সারজিদ আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে। বলেন ১০০ বার কল করেও তাদের পাওয়া যায় না। এই অভিযোগ করেন শহীদ আবদুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমাতুজ জোহরা।জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় বিমানবন্দর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন আবদুল্লাহ।
ওই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুমের শিকার ছাত্রদল নেতা পারভেজের কিশোরী মেয়ে রিধি এমন প্রশ্ন তোলেন।
অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বাবাকে জড়িয়ে ধরতে কিশোরীর আকুতি শুনে এ সময় কেঁদে ফেলেন তিনি। জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখা যায় চশমার ফাঁক দিয়ে বার বার চোখ মুছছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সভায় সারা দেশ থেকে আসা নির্যাতিত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনরা কষ্ট ও ভোগান্তির গল্পগুলো তুলে ধরেন। জানান স্বজন হারানোর বেদনার সঙ্গে আর্থিক টানাপোড়েন, সন্তান আর তার ভবিষ্যতের চিন্তা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ভুক্তভোগীদের।
অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরামের বাবা শুধু নিজের সন্তানের কথাই বলেননি, তুলে ধরেন অন্য শহীদদের অভিভাবকের কষ্টও। রাষ্ট্রের কাছে শহীদ পরিবারগুলোর দাবি, বিচারের মুখোমুখি করা হোক নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের।
এদিকে, প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখবেন দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভাপতিত্ব করছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
অনুষ্ঠান স্থলে আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারগুলোর জন্য সম্মানসূচক আসনের ব্যবস্থা রাখা হয়।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ,ডাঃ জাহিদ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত রয়েছেন।