 
    
মহসিন কবির: রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াইয়ের নেমেছে। একে অন্যের দিকে কাঁদা ছুড়ছেন। যেটা ফ্যাসিবাদ আসার পথ সুগম করছে। ইতোমধ্যে ফ্যাসিবাদের দোসররা রাজধানীতে প্রতিদিন মিছির করছে। ফেসবুকে নানাভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। কারণ তাদের কাছে প্রচুর টাকা আছে। দেশে-বিদেশে টাকা ছেড়ে দেশে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। এজন্য সবাইকে একাতাদ্ধ থাকবে হবে।
ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়ায় চলতি বছরের গত ১০ মাসে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের
উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানান। আজ রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ঝটিকা মিছিল থেকে ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গণঅধিকার পরিষদের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়নই হবে নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভিত্তি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত ঐক্য ভেঙে গেলে ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তনের পথ খুলে যাবে বলেও সতর্ক করেন নেতারা। অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গণঅধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় নেতারা এসব কথা বলেন।
এ সময় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য যদি কোনো কারণে নষ্ট হয় তাহলে সেটা ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তনকেই কেবল টেনে নিয়ে আসবে বা ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তনকেই আহ্বান জানাবে। আমরা যেন সেদিকে না যাই। তিনি বলেন, আমরা চাই সবাই যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, বিজয়ী হয়েছিলাম। যে কারণে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে, সেই রকম ঐক্য যেন আমরা বজায় রাখি। এই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যই হবে আমাদের সামনের দিনে এগিয়ে চলার একমাত্র শক্তি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা সবাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এই প্রশ্নে এক থাকবো। আর দ্বিতীয়ত, ফ্যাসিবাদকে আমরা কোনোভাবে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন হতে দেবো না। সব দরজা বন্ধ করে দিতে হবে এই ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তনের। সেই জায়গায় যেন আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি।
জুলাই সনদকে জাতীয় জীবনে রাজনৈতিক সমঝোতার একটা ঐতিহাসিক পূর্ণাঙ্গ দলিল উল্লেখ করে বিএনপি’র এই নেতা বলেন, এটি বাস্তবায়নের জন্য আমরা সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট ফোরাম হচ্ছে একটি নির্বাচিত জাতীয় সংসদ। এখানে কোনো দলের সে বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য যাতে জাতীয় সংসদ বাধ্য থাকে, সেটার একটা প্রস্তাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে অথবা সরকারের কাছে দেয়া হবে। সেই সুপারিশটা দেয়ার পরেই আমরা জানতে পারবো কি কি প্রক্রিয়ায় সে আইন ভিত্তিটা রচনা করতে চাচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জাতীয় নির্বাচনের যে অভিযাত্রা সূচিত হয়েছে তা যেন বিঘ্নিত না হয়। নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে বিভিন্ন পরাশক্তি ও এজেন্সি সক্রিয় হবে। কিন্তু সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে পরাশক্তি ও অভ্যন্তরীণ শক্তি নির্বাচন ও নতুন দেশ গঠন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
তিনি বলেন, এদেশের মানুষ জানে গণঅধিকার পরিষদ ছাত্রসমাজের একটি মৌলিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মধ্যদিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়। একটি রাজনৈতিক দল এবং এই দলের যিনি সভাপতি, এদেশের মানুষ জানে অধিকার আদায় করতে গিয়ে ছাত্রজীবন থেকেই তার ওপরে যে নিষ্ঠুর নির্যাতন চলেছে তা অস্বাভাবিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের মতো একটা সম্মানিত জায়গায় ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর তার ওপর শারীরিক যে নির্যাতন হয়েছে, পুলিশের যে নির্যাতন হয়েছে, এগুলো এদেশের মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। দেশবাসীর সহানুভূতি নুরুল হক নুরের প্রতি এসেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পুলিশ তার ওপর নির্যাতন করেছে।
তিনি বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচনের যে অভিযাত্রা শুরু হয়েছে, সেই অভিযাত্রা যেন আবার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য জাতীয় ঐক্যের যে দৃষ্টিভঙ্গিতে জুলাই চেতনা আমরা ধারণ করেছি, সেই চেতনাও যেন আমরা ধারণ করতে পারি। অনেক পরাশক্তি, দেশের ভেতরে নানা এজেন্সি সক্রিয় হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, গণঅধিকার পরিষদের ভাইয়েরা জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে মার খেয়েছেন। নুর ভাইকে রক্ত ঝরাতে হয়েছে। জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে কোনোভাবেই যেন ফ্যাসিবাদের কেউ অংশগ্রহণ করতে না পারে সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগ সামনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না, সে ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদী হওয়ার জন্য যে দলটা (জাতীয় পার্টি) সব থেকে বড় দায়ী, সেই দলটার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। জাতীয় পার্টি কিন্তু জাতীয় পার্টি না। জাতীয় পার্টি মানেই আওয়ামী লীগ।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন হবে আমাদের উচিত ওই নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করা। হাসিনা দিল্লিতে বসে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন বানচাল হয়ে যায়, তাহলে আবার ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি, নানাভাবে, নানান পন্থায় আরেকটি এক-এগারো সরকার গঠনের চেষ্টা চলছে। আমি সকলকে আহ্বান জানাই, বাংলাদেশে আর কখনই ফ্যাসিবাদকে ফিরতে দেয়া যাবে না। এজন্য গণঅধিকার পরিষদসহ বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে এক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
