শিরোনাম
◈ ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের হালাল অর্থনীতির অংশীদার হতে চায় বাংলাদেশ: আশিক চৌধুরী ◈ যশোরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে  বিএনপির ৬ নেতা, কর্মীকে বহিঃস্কার ◈ জুয়ার আসর থেকে ইউনিয়ন জামাতের সভাপতি ও ইউপি সদস্যসহ গ্রেপ্তার ১৪ ◈ ৬০০০ রানের মাইলফলকে জো রুট ◈ জুলাই অভ্যুত্থানের গেজেট থেকে ৮ শহীদের নাম বাদ, তালিকা প্রকাশ ◈ এনসিপির ইশতেহার ঘোষণা, ছাত্রদলের সমাবেশে নির্বাচনমুখী বক্তব্য ◈ ১০ লাখ টাকার বেশি আমানত ও সঞ্চয়পত্রে রিটার্ন বাধ্যতামূলক ◈ জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠান: এবার ৮ জোড়া ট্রেন ভাড়া করল সরকার ◈ কুমিল্লায় ইউপি সদস্যকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা ◈ খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান ছাড়া সবাই বিক্রি হয়েছে: রাজিব আহসান

প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট, ২০২৫, ১১:১২ দুপুর
আপডেট : ০৪ আগস্ট, ২০২৫, ০১:৩৯ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদাবাজিতে তোলপাড়

মহসিন কবির: গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় সমন্বয়ককে গ্রেপ্তার করার দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তরুণদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বমহলে। তবে সময় যত গড়াচ্ছে, আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে বিতর্কিত হতে দেখা যাচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, অফিসে তদবির-বাণিজ্যেরও খবর বের হয়েছে। কোথাও কোথাও চাঁদাবাজি করতে গিয়ে হাতেনাতে আটক হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অথচ আপামর জনতার সমর্থন পাওয়া এসব ছাত্র প্রতিনিধির কাছে প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। তাই এ ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন।

খোদ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সমন্বয়ক গ্রেপ্তার হওয়ায় তিনি বেদনায় নীল হয়ে গেছেন। গতকাল সোমবার এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই কি পরিণতি, এটিই কি আমরা চেয়েছিলাম? দেশের মানুষ কি কেউ এটা চেয়েছিল? এত তাড়াতাড়ি যদি এই ঘটনা ঘটে, এক বছরও হয়নি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী?’

গত শনিবার চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আটক হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক (বর্তমানে কমিটি বিলুপ্ত) আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদসহ পাঁচজন। এ ঘটনার পর কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া প্ল্যাটফর্মটির সারা দেশের কমিটি বাতিল করা হয়। 

একই সঙ্গে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সক্রিয় থাকা এসব ছাত্রের বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এক দফা চাঁদা আদায় করে দ্বিতীয় দফায় চাঁদা নিতে গিয়ে আটক হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় সর্বত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় চাঁদা নেওয়ার ভিডিও। অনেকে আন্দোলনের সময় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্ল্যাটফর্মটিকে বিতর্কিত না করার কথা বলছেন। এ জন্য এই প্ল্যাটফর্ম বাতিলের কথা তুলছেন কেউ কেউ।  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমাও গতকাল ফেসবুক লাইভে নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরেছেন।  তিনি বলেছেন, ‘এই প্ল্যাটফর্মটা ওই সময় থেকে যাওয়ার অনেকগুলো ডিমেরিটস আমরা এখনো ভোগ করছি। আমি মুখপাত্র হওয়ার পর প্রথম আবিষ্কার করেছি যে এগুলো দিয়ে লোকজন নানা কিছু করছে। টেন্ডার-বাণিজ্য, তদবির-বাণিজ্য, ডিসি নিয়োগ, তমুক জায়গায় তমুক কাজ- এগুলো নাকি অহরহ করে বেড়াচ্ছে!’

তবে এসব অপকর্ম রোধে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাতে তা বন্ধ করা যাবে কি না জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা যখনই অপকর্মের খবর পাই, তখনই শোকজ দিই। যারা অপরাধ করেননি, তারা জবাব দেন। আমরা তদন্ত করি। কিন্তু যারা অপরাধ করেন, জবাব দিতে পারেন না, তাদের বহিষ্কার করা হয়। কমিটিগুলো আমাদের সময়ে হয়নি। এসব অপকর্মকারী মুখোশ পরে ছিলেন। আমরা এ জন্য বাতিল করেছি। রিফাইন্ড করা হবে। এই প্ল্যাটফর্ম হবে গণ-অভ্যুত্থানের ভ্যানগার্ড। কোনোভাবেই আর্থিক সুবিধা পাওয়ার প্ল্যাটফর্ম হবে না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, চাঁদাবাজির ঘটনায় আটক হওয়া রিয়াদের ছবি দেখা গেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও আওয়ামী লীগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে। অনেকেই বলছেন, তিনি ছিলেন সুযোগসন্ধানী। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একজন নেতা জানান, রিয়াদ ছিলেন খুবই ধূর্ত-প্রকৃতির। তার দুটি রূপ ছিল। সবার সামনে দেখাতেন তিনি আন্দোলনের চরিত্র ধারণ করেন। বাস্তবে ছিল উল্টো। শহিদ স্মরণে প্রোগ্রাম শেষ করেই চাঁদাবাজি করতে যান এবং হাতেনাতে আটক হন। এ ছাড়া তিনি শহিদদের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন। তাদের কবর জিয়ারত করতেন। 

এসব কর্মকাণ্ডের ব্যাপক সমালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যাদের বিশ্বাস করে জনগণ রাস্তায় নেমেছিল, তারা দিন দিন হয়ে উঠছে পুরাতন বন্দোবস্তের নতুন খেলোয়াড়। আগের মতোই চাঁদাবাজ, তদবিরবাজ, বদলিবাজ, দুর্নীতিবাজ। এর চেয়ে দুঃখ এই জাতির জন্য আর কিছু হতে পারে না।’

শুধু গুলশানের ঘটনা নয়; ধানমন্ডিতে গত মে মাসে এক প্রকাশকের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ে মব তৈরি করা হয়। সে সময় আটক হন মোহাম্মদপুর থানার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বী, ঢাকা মহানগর শাখার সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ফারহান সরকার দিনার এবং মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের নেতা মোহাম্মদ জিসান উল্লাহ।

পরে তাদের ছাড়িয়ে নেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। পরে সমালোচনার মুখে তাকে শোকজ করে এনসিপি। এর আগে এনসিটিবিতে (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) কমিশন-বাণিজ্য এবং সচিবালয়ে ডিসি নিয়োগে তদবিরসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে এনসিপি নেতাদের সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠতে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। 

অন্যদিকে আরেকটি পক্ষ বলছে, বৈষম্যবিরোধীদের কেউ কেউ যেমন চাঁদাবাজি করছেন, তেমন অন্যরাও করছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি এমন প্রশ্ন তোলেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির। দল বিবেচনা না করে সব অপরাধীর যেন বিচার নিশ্চিত করা হয়, সে বিষয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেককে কমেন্ট করতে দেখা যায়। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের আরেকটি গ্রুপ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ গঠন করে। তাদের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। গুলশানের ঘটনায় তাদেরও এক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সব সময়ই আমাদের শক্ত অবস্থান। যদি কেউ চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত আছেন- এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সর্বশেষ যে ঘটনা, সেখানে আমাদের সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করা হয়নি। জানে আলম অপু নামে ওই নেতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত- এমন পরিচয় ব্যবহার করে গুলশানে চাঁদাবাজি করতে গিয়েছিলেন এবং বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর পরই যেহেতু তিনি সদস্য ছিলেন, তাকে সংগঠন থেকে তাৎক্ষণিক স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। আমাদের কড়া বার্তা, কোনো ধরনের চাঁদাবাজি বা টেন্ডারবাজি করার সুযোগ নেই। যারা এমন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হবে আমরা সংগঠনিক ব্যবস্থা তো নেবই, পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা কীভাবে নেওয়া যায়, তা দেখব।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়