শিরোনাম
◈ যমুনা সেতু থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রেললাইন, নাট-বল্টু খুলে ফেলার কাজ শুরু ◈ ঘর বদল কর‌ছেন না রোনাল‌দো, সৌ‌দির আল-নাসেরেই থাকছেন ◈ ফুটসাল খেল‌বে বাংলা‌দেশ, প‌ড়ে‌ছে চ্যাম্পিয়ন ইরানের গ্রুপে ◈ সৌদি আরব আনছে ৩৫০০ কোটি টাকার লিগ, হুমকির মুখে আই‌পিএল, বড় পদ‌ক্ষেপ নি‌চ্ছে বি‌সি‌সিআই ◈ ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর শাসনে জরুরি অবস্থা জারির আরেক অজানা কাহিনী ◈ আসিফ-ইশরাকের পরস্পর দোষারোপ, বাড়ছে উত্তাপ! ◈ উত্তরার অবৈধ ফার্নিচার মার্কেট: কোটি টাকার ভাড়া যাচ্ছে কার পকেটে? ◈ প্রতিষ্ঠানের ভুলে পরীক্ষাবঞ্চিত দুই শিক্ষার্থী: এক বছরের ক্ষতির দায় নেবে কে? ◈ উত্তরায় কিশোর গ্যাং দমনে যুদ্ধের ঘোষণা ডিসি মহিদুলের ◈ হাতিয়ায় গুজবের তোলপাড়: পুকুরে কুমির নয়, ছিল গুইসাপ!

প্রকাশিত : ২৭ জুন, ২০২৫, ০২:২৭ রাত
আপডেট : ২৭ জুন, ২০২৫, ১১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

আসিফ-ইশরাকের পরস্পর দোষারোপ, বাড়ছে উত্তাপ!

মহসিন কবির: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে শ্রমিকদল নেতাদের একাংশের ওপর স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। 

এদিকে টানা ৪৫ দিন পর নগর ভবনে অফিস করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক শাহজাহান মিয়া। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএসসিসিতে প্রবেশ করেন তিনি। পরে নিজ কার্যালয়ে বসে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন ডিএসসিসি প্রশাসক।

ইশরাক হোসেন বলেন, ডিএসসিসির হামলার ঘটনায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সম্পৃক্ততা আছে কি না, সেটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্তসাপেক্ষে বলতে পারবে। কারণ, প্রমাণ ছাড়া আমরা কাউকে অভিযুক্ত করতে পারি না। তবে যার নেতৃত্বে হামলা হয়েছে তার সঙ্গে উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। 

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বক্তব্য খুবই আপত্তিকর ও বিভ্রান্তিকর। এ জন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।’ গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইশরাক হোসেন। এদিকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইশরাক হোসেনের দেওয়া বক্তব্যের পর গতকাল বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এতে তিনি বলেন, ‘ইতিহাস সবাইকেই যার যার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়। অকারণে আমার ছবিতে জুতা মারার জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে?’

ডিএসসিসির মেয়র পদে ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে টানা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন তার সমর্থকরা। গত সোমবার নগর ভবনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান প্রিন্স এবং আরেকাংশের সভাপতি আরিফ চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহতদের দেখতে গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ওই ঘটনায় আরিফুজ্জামান প্রিন্স ও ডিএসসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া রুবেলকে দায়ী করে তাদের ফ্যাসিবাদের দোসর অ্যাখা দেন ইশরাক হোসেন। এ ছাড়া তাদের আওয়ামী লীগের শাসনামলের সুবিধাভোগী ও উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেন।

এ ছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন ইশরাক হোসেন। ‘ঢাকাবাসীর চলমান আন্দোলন, সেবা কার্যক্রম ব্যাহত করতে পরিকল্পিত হামলা এবং ঢাকাবাসীর আন্দোলন নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের অবমাননাকর দাবি ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের’ প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘সোমবারের হামলা বাস্তবায়ন করা হয়েছে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের প্ররোচনায়। তাদের মূল হোতা ডিএসসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া রুবেল। রুবেল এক দিনও আন্দোলনে ছিলেন না। তিনি এনসিপিতে যোগদান করবেন কিংবা করেছেন। তারাই আন্দোলনের একপর্যায়ে গোলযোগ সৃষ্টি করেন। এই ষড়যন্ত্র না থামালে ফের আন্দোলন শুরু হলে সেটা নগর ভবনের গণ্ডি পেরিয়ে রাজপথে বের হবে।’

প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া রুবেল ও আরিফুজ্জামান প্রিন্স বিএনপি সমর্থিত সংগঠনের পদধারী নেতা হয়েও কীভাবে ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর’ ও ‘উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে কাজ করছেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইশরাক বলেন, ‘ডিএসসিসিতে আরিফ চৌধুরী ও বেলায়েত বাবুই শ্রমিক দলের নেতৃত্বে আছেন। এর বাইরে কেউ যদি নিজেদের জাতীয়তাবাদী আদর্শের দাবি করেন, তবে তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে হবে। তারা বর্তমান উপদেষ্টার প্ররোচনায় আমাদের আন্দোলনে সবচেয়ে পরিচিত মুখদের ওপর নির্মম হামলা করেছে। তাদের আচরণই বলে দেয় তারা দোসরের ভূমিকা পালন করছে।’

সংবাদ সম্মেলনে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে আসিফ মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির এক নেতার প্ররোচনায় নগর ভবনের আন্দোলন হয়েছে। এই কথায় নগরবাসীকে হেয় করা হয়েছে। আসিফ আরও বলেছেন, ইশরাককে কেউ মিসগাইড (ভুল পথে চালিত) করেছে। এই বক্তব্যে তিনি আমাকে চরম অবমাননা করেছেন। এই বক্তব্যের জন্য তাকে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা না চাইলে বা নিজের বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ হাজির করতে না পারলে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য উপদেষ্টাকেই দায়ী থাকতে হবে।’

উপদেষ্টার একটি বক্তব্যকে ‘আদালত অবমাননার শামিল’ বলে উল্লেখ করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘আসিফ মাহমুদ বলেছেন, সরকার কোনো নির্বাচনকে বৈধতা দেবে না। এটা কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করা হবে এবং কবে? এখন পর্যন্ত তারা কোন কোন নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করতে পেরেছে? একটিও না। এর অর্থ এই দাঁড়ায়, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক বৈধতা বহাল রাখা গেজেটকে সরকার বৈধতা দিচ্ছে না বা মানছে না। সেটা সরকার কর্তৃক উচ্চ আদালত অবমাননার শামিল নয় কি?’

ইশরাক প্রশ্ন রাখেন, ‘এই একই আদালত বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিকেল ১০৬-এর ধারা অনুযায়ী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বৈধতা দেয়নি? বরং উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচন ২০২০ আমাদের মামলা ও রায়ের মাধ্যমে তৎকালীন নির্বাচনটির ফল অবৈধভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল সেটিই প্রমাণিত হয় এবং ফল সংশোধনের মাধ্যমে সেটি আরও বেশি সুদৃঢ় হয়েছে।’

একই সঙ্গে কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়া ছাড়া ওয়ার্ড সচিব হিসেবে ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘এটি আইনত এবং সরকার পরিচালনার যে কোনো মানদণ্ডে অবৈধ। এরা কারা এবং কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে, এই প্রশ্ন নগরবাসীর পক্ষ থেকে আমি করছি। এই অভিযোগ সত্য হলে এর পূর্ণাঙ্গ তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।’

নিজের মেয়র পদে শপথ গ্রহণকে ‘আনুষ্ঠানিকতা’ উল্লেখ করে ইশরাক বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে মেয়র পদে বসে নগর পরিচালনা করার পরিকল্পনা আমার ছিল না। আমাদের শীর্ষ নেতৃত্বের পরামর্শক্রমে অবৈধ তাপসের বিরুদ্ধে পাওয়া রায়টি একটি স্থায়ী দলিল হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের শাসনের চূড়ান্ত বিজয়ের একটি প্রমাণ হিসেবে রাখতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান, যা কেবলই একটি আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে শপথ পড়তে দিচ্ছে না। এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। নতুন গঠিত রাজনৈতিক দল বাধাগ্রস্ত হতে পারে এজন্যই হয়তো শপথ দেয়নি।’

ইতিহাস সবাইকেই প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়—ইশরাককে আসিফ: ইশরাক হোসেন যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, তার জবাবে ফেসবুক পোস্টে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া লিখেছেন, ‘অকারণে আমার ছবিতে জুতা মারার জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে? গুজবকে কেন্দ্র করে আমার পিতাকে চালচোর বলে স্লোগান দেওয়ার জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে? শুরুতেই সরকারপক্ষ থেকে সমাধান চেষ্টা যারা দম্ভভরে প্রত্যাখ্যান করে ভোগান্তির জন্য দায়ী তারা ক্ষমা চেয়েছে? নগর ভবন বন্ধ করে এক কোটির বেশি নগরবাসীকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে? নগর ভবন দখলকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ এবং আহত হওয়ার ঘটনায় কেউ ক্ষমা চেয়েছে? ইশরাক হোসেনের বক্তব্য অনুযায়ী উপদেষ্টা পরিষদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের জন্য আমাকে বারবার ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ, আমার পরিবারকে আক্রমণ, জবাই করার স্লোগান দেওয়াসহ অব্যাহত মানহানির জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে?’

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ, আমি বলেছি কয়েকজন নেতার প্ররোচনায় এই আন্দোলন হয়েছে। আমি সত্যি বলেছি এবং সত্যি যে বলেছি, এটা তিনিও জানেন। তাকে যে ট্র্যাপে ফেলা হয়েছে, ফর আ বেটার নেগোসিয়েশন ব্যবহার করা হয়েছে, তা তিনি ভালো করেই জানেন এবং আমার পরিচিত একাধিক ব্যক্তির কাছে স্বীকারও করেছেন।’

এত নোংরামি করার পরও গত দেড় মাসে একবারের জন্যও ‘ভদ্রতার লাইন’ অতিক্রম করেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একবারও ব্যক্তি আক্রমণ করা কিংবা ছোট করে কথা বলিনি। আমার লড়াই, রাজপথ, রাজনৈতিক পথচলা কিংবা পরিবার কেউই আমাকে এই শিক্ষা দেয়নি। আমি ধৈর্য ধরেছি, জবাব দেইনি বলে যে এসব অন্যায় জবাবহীন থেকে যাবে এমনটা না। ইতিহাস সবাইকেই যার যার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়