বাংলাভিশন টিভি প্রতিবেদন : দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির নেতৃত্ব তৈরি করতে ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তার কর্মকান্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্ররা যোগ দেন ছাত্রদলে। শিক্ষা, ঐক্য, প্রগতি শ্লোগানে তখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এই ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম। বর্তমানে যারা সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে বিএনপির রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের অনেকেই ছাত্রদল থেকে এসেছেন।
বিভিন্ন সময়ে সরকারে পালাবদল ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের সাংগঠনিক সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র রাজনীতিতে শিক্ষার্থীদের আস্থা ফেরাতে করনীয় নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে স্কাইপে একাধিক বৈঠক করেন। দেশব্যাপী সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছাতে ছাত্রদল নেতাদের কর্মসূচি গ্রহণের পরামর্শ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং তাদের মতামত গ্রহণের লক্ষে ৬৪ জেলার জন্য ৩৮টি টিম গঠন করেছে ছাত্রদল। প্রত্যেক টিমে তিনজনের একটি প্রতিনিধি দল থাকবেন। যার নেতৃত্ব দেবেন একজন সহ-সভাপতি।
সম্প্রতি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজ এবং মাদ্রাসায় সফর করে শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়েছেন। গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমূখী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং ছাত্রদলের প্রতিটি সিদ্ধান্তে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার ও অংশীদারীত্বের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই এই কর্মসূচি নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। যাতে স্কুল-কলেজের পাশাপাশি মাদ্রাসা এবং নারী শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হলের সাবেক জিএস রকিবুল ইসলাম বকুল ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হওয়ার পর থেকে ছাত্রদলকে ঢেলে সাজাতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, ছাত্ররাই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি করবে-এই চিন্তাকে সামনে রেখেই ছাত্রদলকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। যাতে করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্টকে ধারণ করে ছাত্রদল আগামীতে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে পারে।
এদিকে নিয়মিত ছাত্রদের থেকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হতে পারে এমন শঙ্কায় নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ্যে কথা না বললেও ভেতরে ভেতরে অনেকের ক্ষোভ এবং হতাশা বিরাজ করছে। প্রত্যাশা তারা যেনো ছাত্রদলের একটি পরিচয় বহন করতে পারেন সেদিকে হাইকমান্ড নজর দেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ২৫৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সিংহভাগই নিয়মিত শিক্ষার্থী নন। এই নেতাদের বেশির ভাগ স্নাতকে ভর্তি হয়েছিলেন এক যুগের বেশি সময় আগে। সেই হিসাবে তাঁদের নিয়মিত স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার কথা অন্তত অর্ধযুগ আগে। বয়সে বেশির ভাগই ত্রিশোর্ধ্ব। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই কমিটিতে থাকা প্রায় শতভাগ নেতাই পড়াশোনায় অনিয়মিত।
এ বিষয়ে ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ১৫ বছর যারা ছাত্রদল করেছেন তাদের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তারা হাসিনাকে পতনের লক্ষে তারা রাজপথে ছিলো। তারপরে পরিস্থিতির বিবেচনায় কাউকে না কাউকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আমাদের একটি লক্ষ ছাত্ররাই ছাত্ররাজনীতি করবে, এটা আমাদের মূলমন্ত্র। এটাকে কেন্দ্র করেই আগামী দিনে নেতৃত্ব তৈরি হবে।
সারাদেশের স্কুল-কলেজগুলোতে যারা ছাত্রদলের আহ্বানে সাড়া দেবেন তাদের মধ্যে থেকেই নতুন নেতৃত্ব বাছাই করা হবে। কাউকেই ছাত্রদল করতে বাধ্য করা হবে না বলেও জানান রকিবুল ইসলাম বকুল।
আপনার মতামত লিখুন :