ভূমিকম্পের সময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় থাকে কয়েক সেকেন্ড। আতঙ্কে মানুষ সাধারণত দৌড় দিতে চায়, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠিক এই চিন্তা আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে। কানাডার ন্যাচারাল রিসোর্সেসের সিসমোলজিস্ট অ্যালিসন বার্ডের মতে, ভূমিকম্পে দৌড় শুরু করলে পড়ে যাওয়া বা ছিটকে আসা জিনিসের ধাক্কায় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ভূমিকম্পের সময় করণীয়
আতঙ্কিত হবেন না।
বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে টেবিল, ডেস্ক বা মজবুত আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন।
রান্নাঘরে থাকলে গ্যাস বন্ধ করে দ্রুত নিরাপদ স্থানে যান।
বিম, কলাম বা পিলারের পাশে অবস্থান নিলে আঘাতের ঝুঁকি কমে।
স্কুলে থাকলে ব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত বেঞ্চ বা টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন।
বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু ভবন, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে খোলা স্থানে দাঁড়ান।
বাজার, গার্মেন্টস, হাসপাতাল বা সিনেমা হলে থাকলে দরজার দিকে ভিড় করবেন না; মাটিতে বসে মাথা ঢেকে রাখুন।
ধসে পড়া দেয়ালের নিচে চাপা পড়লে নড়াচড়া কম করুন; কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন যাতে ধুলা শ্বাসনালিতে না ঢোকে।
প্রথম ধাক্কার পর আবারো কম্পন হতে পারে। পরিস্থিতি বুঝে খোলা জায়গায় চলে যান।
ওপরতলায় থাকলে কম্পন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন; লিফট ব্যবহার করবেন না এবং লাফ দেবেন না।
কম্পন থামলে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত বের হয়ে খোলা জায়গায় অবস্থান নিন।
গাড়িতে থাকলে ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার বা খুঁটি থেকে দূরে গাড়ি থামিয়ে ভেতরেই থাকুন।
বাড়িতে ব্যাটারিচালিত রেডিও, টর্চলাইট, পানি ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম রাখুন।
ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানুন।
ভূমিকম্পের আগে প্রস্তুতি
বিদ্যুৎ ও গ্যাসলাইন কীভাবে বন্ধ করতে হয়, তা পরিবারের সবাইকে শিখিয়ে রাখুন।
জরুরি অবস্থার জন্য হেলমেট রাখুন।
ঘরের ওপরের তাকে ভারী জিনিস রাখবেন না।
বাড়ি নির্মাণে বিশেষভাবে নজর দিন
–ভবনের উচ্চতা অনুযায়ী শক্ত ভিত
–পাশের ভবন থেকে নিরাপদ দূরত্ব
–নিরাপদ গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন
–দুর্বল বা নরম মাটিতে ভবন না তোলা
ভূমিকম্পের পরে করণীয়
ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলে ধীরে ও শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে বাইরে বের হন।
রেডিও-টিভিতে প্রচারিত জরুরি নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোন লাইনে সমস্যা আছে কি না পরীক্ষা করুন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
সরকারি সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহযোগিতা দিন।
উদ্ধারকাজে অংশ নিন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অস্থায়ী আশ্রয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করুন।
যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে সহায়তা করুন।
কোথায় সবচেয়ে নিরাপদ?
এটি নির্ভর করে আপনি কোথায় আছেন তার ওপর। তবে ঘর ও কর্মস্থলের প্রতিটি ঘরে আগেই নিরাপদ জায়গা চিহ্নিত করে রাখা এবং নিয়মিত অভ্যাস করা জরুরি। এতে জরুরি সময়ে সেই জায়গায় সরে যেতে পারবেন।
ভুল ধারণা
ভূমিকম্পে দরজার চৌকাঠে দাঁড়ানো নিরাপদ—এই ধারণা এখন পুরোপুরি ভুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। এই বিশ্বাসের উৎস একটি শতবর্ষ পুরোনো ছবি, যেখানে একটি মাটির তৈরি অ্যাডোবি ঘর ভেঙে পড়লেও দরজার ফ্রেমটি দাঁড়িয়ে ছিল। তখন ধারণা করা হয়েছিল, দরজার চৌকাঠই সবচেয়ে শক্ত জায়গা। কিন্তু আধুনিক ভবনগুলোতে দরজার ফ্রেম এমন শক্ত কাঠামো নয়, এমনকি হাত-পা আটকে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে। মূলত ভূমিকম্পে অধিকাংশ মানুষ আঘাত পায় এসব পড়ে যাওয়া বা ছিটকে আসা জিনিসে। তাই দরজার নিচে দাঁড়ানো নিরাপদ তো নয়ই, বরং ভুল সিদ্ধান্ত আপনাকে আরও বেশি বিপদে ফেলতে পারে।
ভূমিকম্প কখন হবে তা কেউ জানে না, কিন্তু কীভাবে নিজেকে ও পরিবারকে নিরাপদ রাখা যায় সেটি আগে থেকে ঠিক করে রাখা যায়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, আতঙ্ক কমিয়ে সচেতনভাবে কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই জীবনের ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব। ঘর, কর্মস্থল বা বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন, নিরাপদ জায়গা আগে থেকে চিহ্নিত করে রাখুন। পুরোনো ভুল ধারণা বা অন্ধভাবে ছুটে যাওয়ার প্রবণতা এড়িয়ে চললেই বড় দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট