জীবনের ১৫টি বছর ধরে নিঃস্বার্থভাবে আর্তমানবতার সেবা করে গেছেন মো. ইলিয়াস হোসেন। রাস্তা থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের তুলে এনে সেবাযত্ন করা থেকে শুরু করে বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তা–সবখানেই ছিল তার অক্লান্ত পরিশ্রম। হাসি খোঁজার সামর্থ্য হারানো মানুষের মুখে আনন্দ ফেরাতে ছুটে গেছেন এই স্বপ্নবাজ স্বেচ্ছাসেবক।
খুলনা ব্লাড ব্যাংকের সদস্য ইলিয়াস হোসেন জীবনে ৪০ বার নিজে রক্ত দিয়েছেন, ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছেন মুমূর্ষু রোগীদের জন্য। ঝড়-বৃষ্টি, প্রখর রোদ বা গভীর রাত–কোনো প্রতিকূলতা তাকে থামাতে পারেনি। সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনীর মতো দুর্গত এলাকায় তিনি পৌঁছে গেছেন অসহায় মানুষের পাশে।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস–আজ সেই ইলিয়াস নিজেই জীবনযুদ্ধের যাত্রী। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে দিন দিন ফুরিয়ে আসছে তার জীবনীশক্তি। চিকিৎসা ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২–১৩ লাখ টাকা।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ইলিয়াস এখন চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল আরও অনেক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘সর্বোচ্চটা দিয়ে আমি কাজ করেছি। যদি সুস্থ হয়ে ফিরতে পারি, আমি আরও অনেক কাজ জনগণকে দিতে চাই। আমার বিশ্বাস, মানুষ আমার পাশে থাকবে, দোয়া করবে, যার যতটুকু সামর্থ্য আছে সাপোর্ট দেবে।’
তার সহযোদ্ধা স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, ঝড়, বৃষ্টি, রোদ বা গভীর রাত–যে কোনো পরিস্থিতিতেই সাহায্যের ডাকে সাড়া দিয়েছেন তিনি। একজন স্বেচ্ছাসেবক অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, “যাদের আমরা ‘পাগল’ বলতাম, ড্রেন বা ডাস্টবিনের পাশে পড়ে থাকা মানুষগুলোকে তিনি মমতা দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন পরিবারে। ইলিয়াস না থাকলে অনেকেই হয়তো আজও রাস্তায় পড়ে থাকতেন।”
ইলিয়াসের ভাগনি জানান, তার মামাকে তারা হারাতে চান না। সবাই যেন সামর্থ্য অনুযায়ী তার মামার পাশে দাঁড়ান।
চার সন্তান, স্ত্রী, বৃদ্ধা মা–সাতজনের পরিবার নিয়ে খুলনা নগরীর লবণচড়া বান্দাবাজার এলাকার এই স্বপ্নবাজ মানুষটি আজ বন্দি চার দেয়ালের মধ্যে। অথচ তার থাকার কথা মুক্ত আকাশের নিচে, অসহায়দের পাশে।
বিত্তবান মানুষ, রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনগুলো তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসবে–এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তার পরিবার ও সহকর্মীরা। তাদের আশা, হয়তো ইলিয়াস আবারও হাঁটবেন রাস্তায় রাস্তায়, ফিরিয়ে দেবেন হারিয়ে যাওয়া মানুষদের প্রিয়জনের কাছে। সূত্র: সময়টিভি