শিরোনাম
◈ ইসরায়েলে মাইক্রোসফট কার্যালয়ের কাছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত, ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলী ◈ গ্লোবাল সুপার লিগ খেল‌তে  ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাচ্ছে রংপুর রাইডার্স ◈ অপারেশন ট্রু প্রমিজ-৩: ইরা‌নের এক রা‌তের হামলায়  তেল আবিবে অন্তত ৫০ ইহুদিবাদী নিহত ◈ ইরানে হামলার সিদ্ধান্তের আগে দুই সপ্তাহ সময় নিলেন ট্রাম্প (ভিডিও) ◈ পর্যটনে সেরা ১০ মুসলিমবান্ধব অমুসলিম দেশ ◈ ৫ সচিবকে এবার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার ◈ রেললাইনে বসে গল্প করছিলেন, ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেলেন তিন বন্ধু ◈ ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি: হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের নিরাপত্তা বৈঠক, বড় ঘোষণা আসছে ◈ চীন সফরে যাচ্ছে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ২২ জুন ◈ দিনে বিএনপি, রাতে আ.লীগ করা নেতাদের সদস্যপদ নবায়ন নয়: আমিনুল হক

প্রকাশিত : ০৬ জানুয়ারী, ২০২৪, ১১:৪৭ দুপুর
আপডেট : ০৬ জানুয়ারী, ২০২৪, ১১:৪৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আপনার যোগ্যতা দিয়ে কী হবে যদি তা সমাজের কোনো কাজে না লাগে! 

ড. মঞ্জুরে খোদা: আপনার সততা, শিক্ষা, যোগ্যতা যদি সমাজের কোনো কাজে না লাগে, সমাজ উপকৃত না হয় তাহলে আপনার সততা, শিক্ষা ও যোগ্যতা দিয়ে সমাজ কী করবে? সেক্ষেত্রে সমাজের অসৎ, অশিক্ষিত, অযোগ্যরা যদি সমাজের কাজে এগিয়ে আসে, দেশ সেবা (?) করে তাদের নেতৃত্ব-কর্তৃত্বই আমাদের গ্রহণ করতে হয়। প্লেটোর রিপাবলিকে তিনি সেই কথাই বলেছিলেন, তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি, ‘সুনাগরিকের রাজনীতিতে অনীহার অন্যতম শাস্তি হচ্ছে নিজের তুলনায় নিকৃষ্টদের দ্বারা শাসিত হওয়া।’ 

এ আর নতুন কী? হঠাৎ এমন আলোচনার কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশে মূল ধারার (?) রাজনীতিতে অনেক অপরিচিত, অযোগ্য, সুশিক্ষা, ঐতিহ্য ও আদপহীন মানুষ প্রতিষ্ঠিত। তাঁরা পদ-পদবিতে অনেক উপরে উঠেছেন। সরকার, সমাজ তাদের দ্বারা শাসিত হচ্ছে। তারাই রাষ্ট্রের ভালো-মন্দ ঠিক করছেন। অর্থ-বিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ বিষয়টি সমাজের একদা উপরে থাকা ও উপর ভাবা মানুষগুলো কথিত উচ্চ ও মধ্যবিত্ত দল-রাজনীতি থেকে দূরে থাকা শিক্ষিত শ্রেণি মেনে নিতে পারছেন না। তারা না পারছেন এই অবস্থা হজম করতে, না পারছেন নিজেদের জন্য সেই বাস্তবতা তৈরি করতে।   

আমি যখন সক্রিয় রাজনীতি করেছি তখন অনেক নাক উঁচুওয়ালদের দেখেছি। তারা মনে করেছেন রাজনীতি, মিছিল-মিটিং হচ্ছে ছোটলোকদের কাজ, যাদের লেখাপড়া, ভবিষ্যৎচিন্তা নেই তাদের কাজ। তারা কখনো রাজনীতি করেনি, তার ধারে কাছেও আসেননি। আমি নিজেই অনেকের কটুকথা, সমালোচনা শুনেছি। আমাদের সময়ই অনেক অখ্যাত, অপরিত, অশিক্ষিত, অস্বচ্ছল মানুষ দল-রাজনীতি করেছেন এবং একসময় তাঁরা একে ব্যবহার করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন, প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এখন তাদের দ্বারাই সরকার-প্রশাসন পরিচালিত হচ্ছে। তাঁরাই সমাজের হর্তাকর্তা। 

আপনারাই ড্রইংরুম, রেস্ট্রুরেন্টে, কর্মস্থলে বসে এদের তীব্র সমালোচনা করছেন। ও/এরা হয়েছে নেতা? ও পেয়েছে নোমিনেশন? ওর কী যোগ্যতা, কী লেখাপড়া-পেশা? ওর পারিবারিক ঐতিহ্য কি ইত্যাদি? এই যে যাদের সমালোচনা ও গালমন্দ করছেন তাঁরাই রাজনীতি করেছে। দল ও সমাজের পাশে-সাথে থেকেছে। আপনারা এগিয়ে আসেননি, দল-সমাজ-দেশ আপনাদের পায়নি। কারণ আপনারা ভেবেছেন এগুলো অচ্ছুতদের নিম্নস্তরের কাজ! পরিণতিতে কি হলো আজ তাঁদের দ্বারাই আপনাদের শাসিত হতে হচ্ছে। তাদের কাছেই হাত কচলে, মাথা নিচু করে দাড়াতে হচ্ছে। জ্বি বলে তাদের কাছে নানা তদবির নিয়ে যেতে হচ্ছে। কখনো তাদের সান্যিধ্যে নিজেকে ধন্য মনে করলেও আড়ালে গালি দিচ্ছেন, সমালোচনা করছেন। 

আপনারা যাঁরা নিজেদের মূল্যায়নের কথা ভাবছেন নিজেরা কি কখনো মিছিল-মিটিং এসব করেছেন? শরীরের ঘাম ঝড়িয়েছেন? রাজপথের লাঠালাঠি, গোলাগুলির মধ্যে থেকেছেন? প্রান্তিক মানুষের সাথে মিশেছেন? বছরের বছর ঘর ছাড়া হয়েছেন? অথবা কখনো মনে হয়েছে জেলই আপনার ঠিকানা। আপনাদের চোখে এই অযোগ্যরা, খারাপরা সেই কাজটা করেছে। ওরাই জিন্দাবাদ করছে। আজ ওরা যখন পতাকা লাগানো গাড়িতে ঘুরছে, প্রশাসনের কর্তারা ওদের হুজুর হুজুর করছে, তখন আপনাদের মনে হচ্ছেÑ আরে ওদের এত সম্মান করার কি আছে? ওর কী যোগ্যতা? ওর ফ্যামিলি কী? ওর বাপ তো দোকানদার, স্কুল মাস্টার, কৃষক, কেরানী ইত্যাদি। 

এই সব ছাড়েন। ছেড়ে রাজনীতিতে নামেন। আপনাদের সন্তানদের বলুন রাজনীতি করতে। না হলে এদের সন্তানদের গাড়ির ধোঁয়া খেতে হবে আপনার সন্তানদের, তাঁদের কাছে হাত কচলাতে হবে। রাজনীতিতে আবার নতুন ধারার ডায়নেস্টি তৈরি হয়েছে। উপর থেকে নীচে পর্যন্ত নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বে পরিবারতন্ত্র চালু হয়েছে। এরা নিজেদের অঞ্চলগুলোকে জমিদারি ও মালিকানা ভেবে নিয়েছে। ওদের সন্তানরা বিদেশ থেকে লেখাপড়া করে এসে এই জমিদারি চালাবে। আর আপনারা বসে বসে সেই একই সমালোচনা করবে এবং নিজের আগুনে জ্বলেপুড়ে মরবেন। আপনার মতো জ্ঞানী উচ্চবিত্তের চেয়ে সমাজে তাঁদের দাম বেশি প্রয়োজন যাঁরা দেশ, সমাজ, মানুষের পাশে থাকে তাদের জন্য ছিটফোটা করে নিজের জন্য পাহাড়া বানায়। সমাজে সেই শিক্ষিত, জ্ঞানী, তথাকথিত বনেদি উচ্চবিত্ত-মধ্যেবিত্তের দরকার নেই যাঁরা সমাজের কোনো দায়িত্ব পালন করে নাÑ সমালোচনা ও অনুশচনার জ্বলুনিতে অঙ্গার হয়।  সবার বিষয়ই আবার এক নয়। অনেকের যোগ্যতা ও রাজনৈতিক ঐতিহ্য, সমাকজকর্ম না থাকলেও কোনো কারণ-সমীকরণে উপর থেকে বর পেয়ে নেতা বনে যান। তারাও আবার ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। তারাও বুঝাতে চান তাদের হ্যাডম, ক্ষমতা, উপরের লিংক। তাঁরাও বুঝাতে চান দেখ্ তোরা কী করলি? সারা জীবন মিছিল-মিটিং করলি, চুঙ্গা ফুকলি, দলের কামলা দিলি, কিন্তু নেতা হলাম আমি! আমার পেছনেই আজ তোদের থাকতে হচ্ছে ইত্যাদি।  

দেশশাসন করতে গেলে নীতিবান, সৎ হতে হবে, শ্রদ্ধা-ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে- প্রচলিত এই বিশ্বাসে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পুরোধা ম্যাকিয়াভেলি অনেক আগেই আঘাত করেছেন। তার মতে, শাসনক্ষমতার বৈধতা কোনো নৈতিকতার মাপকাঠিতে আবদ্ধ নয়। কর্তৃত্ব আর ক্ষমতাই এর মূল বিষয়। যার ক্ষমতা আছে তারাই শাসন করবে। নৈতিকতা কাউকে ক্ষমতায় বসায় না। ম্যাকিয়াভেলির মতে, ক্ষমতা অর্জন আর ক্ষমতা রক্ষা করাই রাজনীতির মূলকথা। ‘সিংহের মতো বলিষ্ঠ এবং শৃগালের মতো ধূর্ত হও। তোমার যারা সত্যিকারের শত্রু, তাদের তো বটেই, তাদের পরিবারের সদস্যদেরও নিশ্চিহ্ন করে দাও, যেন তুমি শাসন করতে পারো নির্ভাবনায় (দ্য প্রিন্স)।’ আজ থেকে আটশ বছর আগে ম্যাকিয়াভেলি কথাগুলো বলেছিলেন, বুর্জোয়া রাজনীতিতে তার বাস্তবতা এখনো এতটুকু না কমেনি বরং বেড়েছে। 

ড. মঞ্জুরে খোদা (টরিক), লেখক-গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়