আহসান হাবিব: [১] বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো পুঁজিবাদের পক্ষের একেকটা মুখপাত্র। তারা বুর্জোয়া রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই তাদের যাবতীয় কর্মপন্থা নির্ধারণ করে। মূলগতভাবে তারা একই, তবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের প্রশ্নে কর্মসূচির সামান্য এদিক সেদিক। [২] যেমন ধরুন, আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাচ্ছে না, বিরোধীরা চাইছে। লক্ষ্য কী? নির্বাচন। যেভাবেই নির্বাচন হোক, একদল লোক নির্বাচিত হয়ে সংসদে যাবে এবং আইন বানাবে। কাদের পক্ষে? বুর্জোয়াদের পক্ষে। কারণ নির্বাচন উৎপাদন ব্যবস্থার কোনো রূপান্তর ঘটায়নি, একই আছে। অর্থাৎ উৎপাদনের হালহাতিয়ারের মালিকানা বদল হয়নি, এখনো বুর্জোয়াদের হাতেই আছে। যারা সংসদে যাবে, তারা সবাই তাদের দাস হিসেবে কাজ করবে। এই কাজ করতে গিয়ে তারা তথাকথিত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভোগ করবে, যা প্রতিষ্ঠা করেছে বুর্জোয়াদের থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে। সংসদ সদস্যরা তাদের দেখভাল করে, তারা তাদের শোষণকর্মটিকে মসৃণ করার কাজে নিজেদের ব্যপ্ত রাখে। তাহলে তাদের মধ্যে এতো কামড়াকামড়ি কেন? রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা। তাদের মধ্যে পার্থক্যের জায়গা হলো ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা। একদল চাইছে ক্ষমতাটা একক ব্যক্তির হাতে না থেকে কয়েকজনের হাতে বণ্টিত হোক। এখানে জনপ্রিয় বুলি হচ্ছে জনগণের ক্ষমতায়ন। আসলে এটা একটা মিথ্যা আশ্বাস বা বিভ্রম যা জনগণের নামে চালানো হয়। মূল কথা হচ্ছে রাষ্ট্রকে বুর্জোয়া অনুকূলে আরো শক্তভাবে বেঁধে ফেলা। তারা সবাই একই ঘাটে জল খাওয়া গরু।
[৩] তাহলে যারা ব্যবস্থার রূপান্তর চায়, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ চায়, তারা কেন নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে? প্রসঙ্গত বলে রাখি পুঁজিবাদী ব্যবস্থার রূপান্তর চায়, এমন রাজনৈতিক দল দেশে নেই। যারা আছে তারা বুর্জোয়াদের চেয়ে পশ্চাদপদ। কারণ তারা এক একটা পেটিবুর্জোয়া দল যাদের কাজ বুর্জোয়াদের কাছে দেন-দরবার করা এবং কিছু হালুয়া রুটি পাওয়া। তথাপি প্রকৃত বামপন্থী দল কেন নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামায়? কারণ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ব্যক্তি তার মতামত প্রকাশ করতে পারে, এখানে সে স্বাধীন। এটা বুর্জোয়া ব্যবস্থার একটি প্রগতিশীল বিকাশ। কারণ ব্যক্তি যদি স্বাধীন না হয়, তাহলে তারা মুক্তির লড়াইয়ে নামতেই পারবে না। এজন্য ইতিহাসে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব একটি চরম প্রগতিশীল ঘটনা। এটা শুধু বুর্জোয়াদের নয়, শ্রমশক্তি বেঁচা মুক্ত শ্রমিকদের বেলায়ও সত্য। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত সর্বহারা শ্রেণী বিপ্লবী চেতনায় নিজেদের শাণিত করছে এবং পেশাদর বিপ্লবী না গড়ে উঠছে, ততোদিন রূপান্তরের রাজনীতি শুরুই হবে না। এখন যা কিছু চলছে, পুঁজিবাদকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বুর্জোয়া, পেটিবুর্জোয়াদের চলছে কামড়াকামড়ি। নির্বাচন একটি ধূলো যা বোকা জনগণের মুখে ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এরা ধূলাকে মধু ভেবে চেটে চলছে। লেখক: ঔপন্যাসিক