ব্লুমবার্গ, টিআরটি গ্লোবাল, রয়টার্স: বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা গেছে, চীনের তৈরি এই জে-১০সি জেট কিনতে এরই মধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে মিসর ও আজারবাইজান। অন্যদিকে ব্রাজিলের কাছে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিমান কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। ফ্রান্সের তৈরি রাফায়েল তার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ধরাশায়ী হলো চৈনিক প্রযুক্তির কাছে।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যেই আলোচনায় এসেছে চীনের তৈরি যুদ্ধবিমান। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে পাকিস্তান পরিচালিত চীনা যুদ্ধবিমান কমপক্ষে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করার পর আগ্রহ আরো বেড়ে যায়, যা যুদ্ধক্ষেত্রে বেইজিংয়ের প্রযুক্তির জন্য বড় মাপের অগ্রগতি বিবেচিত হচ্ছে।
রয়টার্সের মতে, দুই মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, পাকিস্তান আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে চীনা জেট ব্যবহার করেছিল। যার ফলে কমপক্ষে দুটি রাফায়েল ভূপাতিত হয়। বুধবার একজন ফরাসি কর্মকর্তাও সিএনএনকে বলেছেন, পাকিস্তানি বিমানবাহিনী ভারত পরিচালিত একটি ফরাসি রাফায়েল জেট ভূপাতিত করেছে।
উল্লেখ্য, প্রথমবারের মতো উন্নত চীনা অস্ত্রব্যবস্থা পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এটি বিশ্বের প্রতিটি দেশের অস্ত্রশিল্প এবং বিশ্বব্যাপী চীনা সামরিক প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। জে-১০সির নির্মাতা এভিআইসি চেংডু এয়ারক্রাফট কম্পানি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার তাদের শেয়ারের দাম ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এদিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও জানিয়েছে, তারা বৃহস্পতিবার ২৫টি ইসরায়েলি হারোপ ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
এই ঘটনাও সমরবিজ্ঞানে প্রভাব ফেলেছে। কারণ পাকিস্তান চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করেই মার্কিন প্রযুক্তিতে তৈরি ইসরায়েলি ড্রোন ভূপাতিত করল। গতকাল শুক্রবার ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনার মধ্যে দুই দিনে চীনা জেট নির্মাতার শেয়ার ৩৬ শতাংশ বেড়ে গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সম্ভাব্য ভারতীয় বিমান হামলা মোকাবেলায় পাকিস্তান চীনা তৈরি জে-১০সি এবং জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান মোতায়েনের খবর থেকেই শেয়ারের এই উত্থান শুরু হয়।
জানা গেছে, বুধবার চেংডুর শেয়ারের দাম ১৭% বেড়েছে, তারপর বৃহস্পতিবার ১৬.৩৭% বেড়েছে, যার ফলে দাম ৮০.৬৮ ইউয়ানে পৌঁছেছে, যা চীনা প্রতিরক্ষা কম্পানিটির জন্য সর্বকালের সর্বোচ্চ। সর্বশেষ চেংডুর শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা করে দিয়েছে রাফায়েল জেট ভূপাতিত করা ঘটনাটি।
সমর বিশ্লেষকদের মতে, প্রথম উড্ডয়নের ২৭ বছর পর চীনের জে-১০সির ভেরিয়েন্ট পশ্চিমা জেটের শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হলো। বিশ্লেষকরা চীনের পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রেরও প্রশংসা করেছেন। কারণ রাফায়েল ধ্বংসে চীনের পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে।
অন্যদিকে জেট ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় রাফায়েল নির্মাতা ফরাসি প্রতিষ্ঠান দাসোর শেয়ারবাজারে বড় ধস দেখা দিয়েছে। রাফায়েল হারানোর খবর প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের মূল্য ৩ শতাংশের বেশি (৩.৩) কমে যায়। বৃহস্পতিবার রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি গ্লোবাল। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ফ্রান্সের রাফায়েল ফাইটার জেট প্রস্তুতকারক কম্পানি দাসো এভিয়েশনের শেয়ারদর হুড়মুড়িয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, ফ্রান্সের দাসো এভিয়েশনের তৈরি রাফায়েল হলো ভারতীয় বিমানবাহিনীর সম্ভারে থাকা সবচেয়ে আধুনিক ও বিধ্বংসী যুদ্ধবিমান। এই বিমান বর্তমানে ভারতসহ ছয়টি দেশের কাছে রয়েছে। এগুলো হচ্ছে—ফ্রান্স, মিসর, ক্রোয়েশিয়া, গ্রিস, ভারত ও কাতার।
সূত্র : বিডি প্রতিদিন