আনিসুর রহমান: সাতটি স্থানীয় শোধনাগার তাদের কাঁচামালের উচ্চ আমদানি ব্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে চিনির খুচরা মূল্য বৃদ্ধি চেয়েছে। কারণ বিনিময় হার বৃদ্ধি বিশ্ব বাজারের অস্থিরতার কারণে। সরকার এর আগে চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করেছিল প্রতি কেজি ১৩০-১৩৫ টাকা। কিন্তু সরকারি দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। গত সপ্তাহে খুচরা দাম ছিল ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা কেজি। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা চিনির দাম ৪০ বছরের সর্বোচ্চ ৬৮০-৬৯০ মার্কিন ডলার প্রতি টন। অন্যদিকে গ্রিনব্যাকের প্রশংসার পরিপ্রেক্ষিতে আমদানিকারকদের এখন তাদের লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে হবে প্রতি ডলারের দাম ১২১-১২৩ টাকা দিয়ে। সুতরাং আমদানি ব্যয় সর্বোচ্চ ১৪৫ টাকায় উন্নীত হবে বলে রিফাইনারদের দাবি। এমতাবস্থায় বর্তমান বাজার পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে রিফাইনাররা খুচরা পর্যায়ে চিনির সরকারী দর সমন্বয়ের জন্য হট্টগোল করবে এটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশ এখন চিনির স্থানীয় চাহিদা মেটাতে আমদানির উপর অনেক বেশি নির্ভর করে যা আনুমানিক ২.৪-২.৫ মিলিয়ন (২৪-২৫ লাখ) টন বার্ষিক হিসেবে। গত অর্থবছরে দেশে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২২ হাজার টন। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) আওতাধীন রাষ্ট্র পরিচালিত চিনিকলগুলো ৩৩ হাজার টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এটি স্থানীয় চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়, যদিও বিএসএফআইসি প্রতি কেজি ১২৫ টাকা দামে চিনি বিক্রি করে। বিএসএফআইসির উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো গেলে স্থানীয় বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেতে পারে ও প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ও ডলারের সংকটের বিদ্যমান সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। এ ছাড়া কৃষকরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন।
দুর্ভাগ্যবশত বিএসএফআইসি-এর অধীনে ১৫টি রাষ্ট্র-চালিত মিলের মধ্যে ছয়টি ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে যায় কারণ তারা আখের কম সরবরাহের কারণে লোকসানের মুখে পড়েছিল। এমনকি ত্রিশ বা চল্লিশ বছর আগে, এটি একটি ভিন্ন গল্প ছিল। দেশের আনাচে কানাচে আখ ও পাটের প্রচুর চাষ হতো। তাদের বছরের লীন ঋতুতে কৃষকদের জন্য অর্থকরী ফসল হিসাবে গণ্য করা হত। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই এই দুই ফসলের দীপ্তি হারিয়ে ফেলে। যে কারণগুলো কৃষকদের অন্য ফসলের দিকে যেতে বাধ্য করেছে তা বোঝার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কি যথেষ্ট আন্তরিক ছিল? বাংলাদেশে বন্যা ও খরা একটি সাধারণ ঘটনা। অন্যান্য ফসলের তুলনায় আখ এই দুটি প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাই সহ্য করতে পারে। আখের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে আমাদের যেন কোনো কসরতের কমতি না থাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) আখের একটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে, যা কৃষকদের জন্য ভাল পরিমাণে মুনাফা এনেছে বলে জানা গেছে। উচ্চ ফলনশীল এই জাতের উপকারিতা সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করতে হবে। লাভজনক মনে হলে তারা আগের মতোই আখ চাষে ফিরে আসবে। আমদানী প্রতিস্থাপনের এই সুযোগকে আমাদের হাতছাড়া করা উচিত নয়। ধহরংঁৎবীঢ়ৎবংং@ুধযড়ড়.পড়স. সূত্র : দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস। অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ
আপনার মতামত লিখুন :