মো. জামিল হোসেন: ফাইনান্সের জটিল জগতে, যেখানে সংখ্যা শাসন করে এবং ডেটা ড্রাইভ সিদ্ধান্ত নেয়, সেখানে একটি অস্পষ্ট ফ্যাক্টর রয়েছে, যা অপরিমেয় মূল্য রাখে। ব্যাংকিং শিল্প প্রায়শই বিশ^ অর্থনীতির ভিত্তি হিসাবে দেখা হয়, সুনামগত ঝুঁকির বিপদের জন্য অপরিচিত নয়। তাৎক্ষণিক যোগাযোগের যুগে ও উচ্চতর যাচাই-বাছাইয়ের যুগে বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলোর জন্য সুনাম রক্ষা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একটি কলঙ্কিত খ্যাতি থেকে ফলাফল বিপর্যয়কর হতে পারে। সুদূরপ্রসারী পরিণতি-সহ যেসব প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল তাদের উদাহরণ খুঁজে পেতে আমাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না।
২০০৮ সালের আর্থিক সঙ্কট, বেপোরোয়া ঋণদানের অনুশীলনের দ্বারা আংশিকভাবে ইন্ধন যোগায়, অনেক ব্যাংকের সুনামকে চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং জনসাধারণের বিশ্বাসকে ভেঙে দেয়। কিন্তু সুনামগত ঝুঁকি একটি একক বিপর্যয়মূলক ঘটনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি ধ্রুবক আন্ডারকারেন্ট, যা অনৈতিক আচরণ, সাইবার আক্রমণ, ডেটা লঙ্ঘন বা এমনকি বিতর্কিত সত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতাসহ বিভিন্ন কারণের দ্বারা ট্রিগার হতে পারে। এমন একটি বিশে^ যেখানে খবরগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে, সেখানে একটি নামকরা আঘাতের প্রভাব দ্রুত এবং নৃশংস হতে পারে।
[১] সক্রিয় সম্মতি ও নৈতিক আচরণ : ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই সম্মতি ও নৈতিক আচরণের সংস্কৃতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর মানে শুধু নিয়ন্ত্রক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা নয়, বরং প্রত্যেক কর্মচারী কর্মে সততার গুরুত্ব বোঝে তা নিশ্চিত করার জন্য উপরে এবং তার বাইরেও যাওয়া। [২] মজবুত সাইবার নিরাপত্তা : এমন একটি যুগে যেখানে ডেটা একটি প্রধান লক্ষ্য, ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই সাইবার নিরাপত্তায় প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। একটি ডেটা লঙ্ঘন শুধু গ্রাহকের তথ্যের সঙ্গে আপোস করে না বরং আস্থাও নষ্ট করে। ক্রমবর্ধমান হুমকি থেকে এগিয়ে থাকার জন্য ব্যাংকগুলোকে ক্রমাগত তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আপডেট করতে হবে।
[৩] কার্যকর সংকট ব্যবস্থাপনা : প্রস্তুতিই মূল বিষয়। ব্যাংকগুলোর সুসংজ্ঞায়িত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান থাকা উচিত, প্রয়োজনে সক্রিয় করার জন্য প্রস্তুত। এই পরিকল্পনাগুলোর একটি সঙ্কটের সময় সুনামগত ক্ষতি কমানোর জন্য স্পষ্ট যোগাযোগ কৌশল ও দায়িত্বের রূপরেখা থাকা উচিত। [৪] স্বচ্ছতা এবং যোগাযোগ : খোলা এবং সৎ যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকগুলোকে তাদের কার্যক্রম ও আর্থিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্বচ্ছ হতে হবে। যখন একটি সমস্যা দেখা দেয়, খোলাখুলিভাবে এবং দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করা ক্ষতি কমাতে এবং বিশ্বাস পুনর্গঠনে সহায়তা করতে পারে।
[৫] সামাজিক দায়বদ্ধতা : সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি অঙ্গীকার প্রদর্শন একটি শক্তিশালী খ্যাতি-নির্মাণের হাতিয়ার হতে পারে। জনসাধারণের চোখে একটি ব্যাংকের ভাবমূর্তি উন্নত করতে পারে সম্প্রদায়ের উদ্যোগ, পরিবেশগত স্থায়িত্ব ও নৈতিক বিনিয়োগে সহায়তা করা। [৬] প্রযুক্তি ও ডেটা বিশ্লেষণ : উন্নত প্রযুক্তি এবং ডেটা বিশ্লেষণকে আলিঙ্গন করা ব্যাংকগুলোকে সক্রিয়ভাবে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো সনাক্ত করতে এবং হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে। ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণগুলো পূর্ণ-বিকশিত সংকটে পরিণত হওয়ার আগে সমস্যাগুলোর পূর্বাভাস দিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। [৭] তৃতীয় পক্ষের যথাযথ অধ্যবসায় : ব্যাংকগুলোকে তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতা, অংশীদার এবং ক্লায়েন্টদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কগুলো সাবধানতার সঙ্গে মূল্যায়ন করা উচিত। বেআইনি বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত সত্ত্বার সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা একটি ব্যাঙ্কের সুনাম নষ্ট করতে পারে।
হাইপার-সংযুক্ত, তথ্য-স্যাচুরেটেড বিশ্বে, সুনামগত ঝুঁকি ব্যাংকগুলোর জন্য একটি চির-বর্তমান চ্যালেঞ্জ। এটি এমন কিছু নয় যা সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা যায়, তবে কৌশলগত পরিকল্পনা, সততার সংস্কৃতি ও নৈতিক আচরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংকগুলো এই জলে নেভিগেট করতে পারে এবং তাদের খ্যাতি কেবল অক্ষত নয় বরং উন্নত করে। এমন একটি বিশে^ যেখানে বিশ^াস হলো আর্থিক রাজ্যের মুদ্রা, খ্যাতি রক্ষা করা শুধু একটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল নয়, এটা একটি বাধ্যতামূলক মৌলিক ব্যবসা।
লেখক : বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সূত্র : নিউএজ। অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ