মো. বায়েজিদ খান: একটি উন্নত দেশে একইসঙ্গে অর্থ সম্পৃক্ত ও নৈতিকতা সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিক ধারা থাকা উচিত। একটি উন্নত দেশে শিল্প, কৃষি, অবকাঠামো, আইসিটি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, পর্যটন, প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অর্থ-সম্পর্কিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ দৃশ্যমান হয়। অন্যদিকে নৈতিকতা-সম্পৃক্ততার বিকাশ নাগরিকদের আচরণকে প্রতিফলিত করে। এটি নাগরিকদের সফট স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও অনুশীলন হিসেবে হয়। নাগরিক বোধ এবং নৈতিকতা প্রয়োগ করা, আর্থিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতি থেকে দূরে থাকা, আইনশৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, শৃঙ্খলা বজায় রাখা, ইতিবাচক মনোভাবের সঙ্গে মানবতা ধারণ করা প্রভৃতি দৈনন্দিন জীবনে তার নাগরিকদের দক্ষতার অনুশীলন না করে একটি দেশ কখনোই উন্নত বলে দাবি করতে পারে না। সরকারি ও বেসরকারি সম্পদের অপব্যবহার এড়ানো, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, মিথ্যা বলা এড়ানো ইত্যাদি। অর্থ-সংশ্লিষ্ট ও নৈতিকতা-সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন উভয়ই একটি দেশকে উন্নত করার পূর্বশর্ত।
অর্থ-সম্পৃক্ততা উন্নয়নের জন্য অগত্যা বহুমুখী মেগা ও ছোট প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ব্যাপক সাশ্রয়ী দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। একটি দেশকে উন্নত করার প্রক্রিয়ায় অর্থ-সম্পর্কিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের পথে বিনিয়োগের ব্যয় বহন করার জন্য তাদের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আরোপ করা বিবেচনা করে মানুষের আত্মত্যাগের ক্ষেত্রে সুবিধা ও প্রতিকূল পরিণতি উভয়েরই ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
উন্নয়নের মেগা প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা নিশ্চিতভাবে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে নীরবে কাঠখড়ের মতো বিপন্ন করে তোলে। বিপরীতে অর্থের বিপুল সম্পৃক্ততার কারণে বা বিনিয়োগ-সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে নাগরিকদের ঋণ পরিশোধের বোঝা বহন করার কারণে তাদের পরিশোধ করার সুযোগ রয়েছে। দিনের শেষে অর্থ-সম্পৃক্ততামূলক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য কঠোর-উপার্জন ও সাশ্রয়ী মেগা প্রকল্পগুলোর সাফল্য এবং ফলাফলগুলো টেকসইয়ের পাশাপাশি প্রকল্পগুলোর ব্যয় এবং সুবিধা পর্যালোচনা করে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। যদি দেশের নাগরিকরা দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক সফট স্কিল আচরণকে লালন করে তাহলে সাশ্রয়ী অর্থ-সম্পৃক্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার সমস্ত প্রচেষ্টা অর্থহীন প্রমাণিত হতে পারে। সুতরাং অর্থ-সম্পর্কিত উন্নয়নের জন্য মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে একটি দেশকে তার নাগরিকদের মধ্যে মূল্যবোধ ভিত্তিক সফট স্কিল বিকাশের উপর জোর দিতে হবে। বাংলাদেশের একটি উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে।
রূপকল্পকে সফল করতে অবকাঠামো, আইসিটি, শিল্প ও অর্থনীতির অন্যান্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয় সম্পন্ন হয়েছে বা চলমান রয়েছে। কিন্তু নাগরিকরা অনৈতিক ও মূল্যবোধহীন আচরণ ও মনোভাবের চর্চা করে আসছে, যা দেশকে উন্নত করার সঠিক পথ হতে পারে না। সরকার একদিকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে, অন্যদিকে দেশ সরকারি-বেসরকারি ও প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহারের সম্মুখীন হচ্ছে, নাগরিক অনুভূতি প্রয়োগের অনুপস্থিতি, অসততা ও অনৈতিকতার অনুশীলন, আইনশৃঙ্খলা অমান্য করার প্রবণতা, শৃঙ্খলা বজায় রাখার নেতিবাচক মনোভাব ইত্যাদি। দৈনন্দিন জীবনে উপরে উল্লিখিত অনুশীলনগুলো অবশ্যই নীরব ঘাতক হিসাবে প্রমাণিত, যা অর্থনীতিকে পঙ্গু করে চলেছে এবং শেষ পর্যন্ত দেশকে উন্নত করার সাফল্যের জন্য হুমকি।
সুতরাং দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অবকাঠামো ও অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতে উন্নয়নের অনিবার্যতার মতোই নাগরিকদের মধ্যে মূল্যবোধ-নির্মাণ সফট স্কিল গড়ে তোলাও গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য নাগরিকদের মনোভাবের পরিবর্তন প্রয়োজন ও অবশ্যই এটি মোকাবেলা করা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে। সুতরাং শিক্ষার তিনটি স্তরের পাঠ্যক্রমটি শিক্ষার্থীদের দ্বারা শেখার মূল্যবোধ সম্পর্কিত সফট দক্ষতার বিধান রাখার লক্ষ্যে সংশোধন করা যেতে পারে। যেহেতু তারা দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ চালক তাই পূর্বোক্ত মূল্যবোধ-নির্মাণ সফট স্কিল ডেভেলপমেন্ট উদ্যোগ সফল হতে পারে এবং ভবিষ্যতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রতিফলিত হবে। অধিকন্তু মূল্যবোধ-নির্মাণ, সফট স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। কারণ শিক্ষার্থীরা শিক্ষাকে নাগরিকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে এবং যখনই দৈনন্দিন জীবনে নৈতিকতা অনুশীলন বা মূল্যবোধ-নির্মাণ দক্ষতার কোনো ধরনের বিচ্যুতি পাওয়া যাবে তখনই তারা প্রতিরোধের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
লেখক : প্রাথমিক শিক্ষার জন্য কাজ করেন। সূত্র : নিউনেশন। অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ