শিরোনাম
◈ আবারও শাহবাগ অবরোধ করেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আহতরা ◈ গেজেট প্রকাশের পরই আ. লীগের নিবন্ধন নিয়ে সিদ্ধান্ত: সিইসি ◈ লড়াই রা‌তে, জিত‌লে বা‌র্সেলোনা চ্যাম্পিয়ন ◈ পরিবারে মা হচ্ছেন এক বিস্ময়কর প্রতিষ্ঠান, খালেদা জিয়াকে নিয়ে আবেগঘন বার্তা তারেক রহমানের ◈ পাকিস্তানের শক্ত জবাবেই যুদ্ধবিরতি করতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হয় ভারতঃ সিএনএনের সাংবাদিক (ভিডিও) ◈ মেসির গোলে কাজ হয়‌নি, বড় ব্যাবধা‌নে হে‌রে গে‌লো ইন্টার মায়ামি ◈ জনরোষ ঠেকাতে লুঙ্গি-গেঞ্জি-মাস্ক পরে বিমানবন্দরে যান আবদুল হামিদ, গোপনে তুলে দেওয়া হয় বিমানে ◈ রেকর্ড হ্যাটট্রিকসহ সরলথের চার গোল, জিত‌লো অ্যাথ‌লে‌তি‌কো মা‌দ্রিদ ◈ আরব আমিরাতের বিরু‌দ্ধে দুই ম‌্যা‌চের ‌টি- টো‌য়ে‌ন্টি খেল‌বে বাংলাদেশ  ◈ ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় চীনা জে-১০সি জেটের উত্থান: রাফায়েল ভূপাতিত, বিশ্বজুড়ে চীনা অস্ত্রপ্রযুক্তির চাহিদা বৃদ্ধি

প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০১:১৩ রাত
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০১:১৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুধু অর্থনৈতিক যুদ্ধ নয়

ড. মতিউর রহমান

ড. মতিউর রহমান: ঢাকার একজন ৪৫ বছর বয়সী শ্রমিক রহিম তার পাঁচজনের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। সাম্প্রতিক সময়ে খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় রহিমকে টেবিলে খাবার রাখা ক্রমশ কঠিন মনে হচ্ছে। কয়েক বছর আগে তিনি তার বাজেটে খুব বেশি চাপ ছাড়াই চাল, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, মসুর ডাল, শাকসবজি এবং রান্নার তেল কিনতে পারতেন। যাইহোক ক্রমবর্ধমান দাম তাকে তার পরিবারকে সরবরাহ করা খাবারের পরিমাণ এবং গুণমান হ্রাস করতে বাধ্য করেছে। ‘আগে আমি ৫০ টাকায় এক কেজি চাল কিনতে পারতাম, কিন্তু এখন তার দাম ৬০ টাকা। সবজির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে এবং রান্নার তেল আমাদের আর সামর্থ্য নয় এখন বিলাসিতা,’ রহিম দুঃখ করে। 

রহিমের গল্পটি বাংলাদেশের অগণিত নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলোর মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতিফলন। কারণ তারা মুদ্রাস্ফীতির কঠোর বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করে। গাজীপুরের ২৭ বছর বয়সী গার্মেন্টস কর্মী নাসরিন বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ডের অংশ। সে তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য একটি পোশাক কারখানায় দীর্ঘ সময় কাজ করে। যাইহোক লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি তার ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস করেছে, তার জন্য তার মৌলিক চাহিদা পূরণ করা কঠিন করে তুলেছে। নাসরিন বলেন, ‘আমি আমার বাবা-মাকে বাড়িতে টাকা পাঠাতাম এবং আমার ভবিষ্যতের জন্য কিছুটা সঞ্চয় করতাম। ‘কিন্তু এখন জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সঙ্গে, ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা একটি অসম্ভব স্বপ্নের মতো মনে হয়।’

নাসরিনের গল্পে বোঝা যায় যে কীভাবে মুদ্রাস্ফীতি শুধু ভোক্তাদেরই নয়, পোশাক খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে কর্মরতদের জীবিকাকেও প্রভাবিত করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে, যার ফলে নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এই ঘটনাটি সাধারণত মুদ্রাস্ফীতি হিসাবে পরিচিত, মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে, তাদের ক্রয় ক্ষমতা এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে  পণ্য ও পরিষেবার সাধারণ মূল্য স্তরের ক্রমাগত বৃদ্ধিকে মুদ্রাস্ফীতি বলে। এটি কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) দ্বারা পরিমাপ করা হয় এবং এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে বর্ধিত চাহিদা, সরবরাহে ব্যাঘাত, মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং সরকারী নীতি রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমান মূল্যবৃদ্ধি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় কারণের দ্বারা চালিত একটি বহুমুখী সমস্যা। 

বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতিতে অবদান রাখার প্রাথমিক অভ্যন্তরীণ কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো ক্রমবর্ধমান উৎপাদন এবং বিতরণ ব্যয়। এটি বিশেষ করে কৃষি খাতে স্পষ্ট, যেখানে কৃষকরা সার, কীটনাশক এবং শ্রমের মতো ক্রমবর্ধমান খরচ সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। সাপ্লাই চেইনের অদক্ষতাও ফসল কাটার পর লোকসানের দিকে নিয়ে যায়, দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। তদুপরি পরিবহন এবং স্টোরেজ সুবিধার মতো অপর্যাপ্ত অবকাঠামো সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এই সমস্যাগুলো শুধুমাত্র কৃষি পণ্যকেই প্রভাবিত করে না বরং জ্বালানি, বিদ্যুৎ এবং পরিবহন পরিষেবার মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর প্রাপ্যতা এবং মূল্য নির্ধারণকেও প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের অর্থনীতি জ্বালানি, ভোজ্য তেল এবং বস্ত্র শিল্পের কাঁচামাল সহ অনেক প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক মূল্যের ওঠানামা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা সরবরাহ শৃঙ্খলকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে এই আইটেমগুলোর দাম আকস্মিকভাবে বেড়ে যায়।

প্রধান মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশী টাকার অবমূল্যায়নও মুদ্রাস্ফীতিতে অবদান রাখতে পারে, কারণ এটি আমদানিকে আরও ব্যয়বহুল করে তোলে। সিন্ডিকেট ব্যবসা বলতে পণ্য বা পরিষেবার সরবরাহ এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যক্তি বা সংস্থার একটি গোষ্ঠীর দ্বারা বাজার শক্তির যোগসাজশ এবং হেরফের বোঝায়। বাংলাদেশে সিন্ডিকেট কার্যক্রমের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং কৃষি, পরিবহন এবং নির্মাণ সহ বিভিন্ন খাতে অনুপ্রবেশ করেছে। সিন্ডিকেট গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুদ করে কৃত্রিমভাবে মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ রয়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের খরচে মুনাফা হচ্ছে। এই অনুশীলনগুলো বর্তমান মূল্যবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে, যা অনেক বাংলাদেশীর জন্য তাদের দৈনন্দিন খাবারের ব্যয় বহন করা কঠিন করে তুলেছে। বাংলাদেশের জনগণ ক্রমবর্ধমানভাবে সচেতন হচ্ছে যে সিন্ডিকেট ব্যবসার মূল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করছে। 

বাংলাদেশে বর্তমান মূল্যবৃদ্ধি একটি জটিল সমস্যা যা সর্বস্তরের মানুষকে প্রভাবিত করে। এটি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক কারণগুলোর সংমিশ্রণ দ্বারা চালিত হয়, এটি সমাধান করা একটি চ্যালেঞ্জ। যদিও সরকার তার নাগরিকদের উপর বোঝা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে, সেখানে একটি ক্রমবর্ধমান ধারণা রয়েছে যে মুদ্রাস্ফীতির মূল কারণগুলোকে মোকাবেলা করার জন্য আরও কিছু করা দরকার। ভর্তুকি বিতরণে স্বচ্ছতা, বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের উন্নতি নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত নীতিনির্ধারকদের জনগণের কণ্ঠস্বর শুনতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের দিকে কাজ করতে হবে যা সমস্ত বাংলাদেশীদের জন্য একটি স্থিতিশীল এবং সাশ্রয়ী মূল্যের জীবনযাত্রা নিশ্চিত করে। মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুধু একটি অর্থনৈতিক লড়াই নয় বরং এটি একটি সামাজিক ও মানবিক লড়াই, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের মঙ্গল ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

লখক : একজন গবেষক ও উন্নয়নকর্মী। সূত্র : নিউনেশন। অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়