কবির য়াহমদ: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের অদক্ষতা, খামখেয়ালি, অনুপস্থিতির খেসারৎ দিচ্ছে বাংলাদেশ। অজ্ঞাত কারণে তিনি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখে দূরে। কেবল বাজেট পড়ার জন্য সেদিন তিনি সংসদে এসেছিলেন। খেয়াল করলে দেখবেন বাজেট পেশের আগে এবার প্রাক-বাজেট আলোচনা হয়নি তেমনভাবে। হবে কীভাবে, অর্থমন্ত্রণালয় যে অভিভাবকহীন। মন্ত্রী আছেন, মন্ত্রী নেই অবস্থা অর্থ মন্ত্রণালয়ের। বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি কিছু শুনতে পাচ্ছেন না জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষ করেছেন। দোষ দেওয়া হয়েছে সাউন্ড সিস্টেমের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে নাজুক অবস্থা, তার জন্য দায়ীও অর্থমন্ত্রী।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ৫ জুন দুপুর থেকে বন্ধ। কারণ কয়লা নেই। বকেয়া পরিশোধ হয়নি। কয়লা আমদানি করা হয়নি। কয়লা আমদানির ডলার ছাড়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বারবার আবেদনের পরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাড়পত্র দেয়নি। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আমলাদের ওপর নির্ভরশীল। এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ দুইয়ের মধ্যে কেউ নেই। এখানে অর্থ মন্ত্রণালয় থাকার কথা, সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা, নির্দেশনা দেওয়ার কথা। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর অদক্ষতা-নেতৃত্বের দুর্বলতায় সেটা হচ্ছে না। ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে অর্থনৈতিক নেতৃত্ব, গতিশীলতা।
একজন অর্থমন্ত্রী একটা দেশকে কীভাবে খাদের কিনারায় নিয়ে যেতে পারেন, সেটা এই অর্থমন্ত্রীকে দেখে আমরা টের পাচ্ছি। এই যে বাজার অব্যবস্থাপনা, এখানেও দায় আছে অর্থমন্ত্রীর। পেঁয়াজের দাম যে শ ছুঁইছুঁই, এখানেও আছে অর্থমন্ত্রীর অদক্ষতা। আমদানিও নির্ভর করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একক সিদ্ধান্তের ওপর। এখানেও নেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা। শেষ পর্যন্ত আমদানির অনুমতি মিলেছে, কিন্তু সেটা ভোক্তা সাধারণকে একেবারে শেষ করে দিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে অজ্ঞাত কারণে সরাচ্ছেন না। এর মূল কারণ হতে পারে, পাছে লোকে কী বলে। অর্থমন্ত্রীকে সরালে সরকারের দুর্বলতা ও আর্থিক অব্যবস্থাপনার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি হয়ে যাবে, এই ভয়ে। এখানে জনস্বার্থ উপেক্ষিত, স্রেফ লোকে কী বলবে এই শঙ্কায় মানুষকে জিম্মি করা হচ্ছে। বিদ্যুতের এই লোডশেডিং ও অব্যবস্থাপনার জন্যে আমরা বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে দায়ী করতে পারি। কিন্তু এটা করলে আদতে তাদের প্রতি অবিচারই করা হবে। তারা চেষ্টা করছে, কিন্তু অর্থমন্ত্রীর অদক্ষতায় ভিলেন হচ্ছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, মানুষের আস্থা হারাচ্ছে সরকার। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, ডলার সংকটের মাত্রা এর চেয়েও ভয়াবহ ছিলো আগে, কিন্তু তৎকালে অর্থমন্ত্রীরা তাদের নেতৃত্বগুণ, যোগ্যতা দিয়ে সবকিছু মোকাবেলা করেছেন। এখন পারা যাচ্ছে না। কারণ একটাই, কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই! লেখক : সাংবাদিক