লেটস গো টুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস : কারাকোরাম হাইওয়ে হচ্ছে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে শুরু হয়ে গিলগিত-বালতিস্তানের খুঞ্জেরব পর্যন্ত বিস্তৃত ১৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ্য একটি সড়ক। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ্য পাকা সড়কগুলোর মধ্যে একটি। বিভিন্ন জরিপে এই সড়কটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর, মনোমুগ্ধকর সড়ক বলে অবিহিত করা হয়েছে। কারাকোরাম হাইওয়েকে বলা হয় বিশ্বের ৮ম আশ্চর্য। কারণ যেসব আকাশছোঁয়া পর্বতমালার মধ্য দিকে দুর্গম পথ ধরে একে নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে রাস্তা নির্মান করা কেবল কঠিনই নয়, অসম্ভব ব্যাপার। ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং চীনা ইঞ্জিনিয়ারদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সৃষ্টি হয় আশ্চর্যরকম সুন্দর এই সড়কটি। লোহার মতো শক্ত পাহাড়ী পাথরকে ডিনামাইট বিস্ফোরণের মাধ্যমে ধ্বংস করে রাস্তা তৈরি করা হতো। কারাকোরাম হাইওয়ে কতটা সুন্দর তা বর্ণনা করে তুলে ধরার মতো নয়। সড়কটির ছবি বা কিছু ইউটিউব ভিডিও দেখলে এর সৌন্দর্যের মাত্রা উপলব্ধি করা যায়। এমনকি এই সড়কটি এতটাই মনোমুগ্ধকর যে, এর সৌন্দর্যের কাছে ইউরোপ-আমেরিকার মেরিন ড্রাইভ হাইওয়েগুলোকেও ম্লান মনে হয়। সড়কটি কখনো পাহাড় কেটে, কখনো পাহাড়ের পাদদেশ বা চূড়া দিয়ে, কখনো দীর্ঘ্য লেকের পাশ দিয়ে অথবা কখনো পাহাড় ফুড়ে তৈরি টানেলের ভেতর দিয়ে এগিয়ে গেছে। কারাকোরাম এবং হিমালয় পর্বতমালার ভেতর দিয়ে এঁকেবেকে চলে যাওয়া এই সড়কটির পাশেই রয়েছে বিখ্যাত কিছু লেক। সেসব লেকের নীল, সবুজ, গোলাপী বর্ণের পানি দেখলে আপনি আশ্চর্য হয়ে যাবেন।
এছাড়া কখনো সবুজে ঢাকা পাহাড় অথবা খয়েরী বর্ণের পাথুরে পাহাড়ের সারি আবার কখনো বরফে ঢাকা পর্বতমালা এবং তুষারে ঢাকা জনপদ তো আছেই। শীতকালে কারাকোরাম হাইওয়ের তাপমাত্রা মাইনাস ২০-৩০ ডিগ্রিতে পর্যন্ত নেমে যায়। চারপাশকে তখন দুধের মতো সাদা মনে হয়। কারাকোরাম হাইওয়ের পাশেই রয়েছে বিশ্বের উচ্চতম বেশ কিছু পর্বত। এই অঞ্চলের পর্বতগুলোর এভারেজ উচ্চতাই ৫-৬ হাজার মিটার। এছাড়াও হাইওয়েতে ড্রাইভ করতে করতেই ৭-৮ হাজার মিটার উচু মাউন্ট নাঙ্গা পর্বত, মাউন্ট রকাপুসির মতো আরো অনেক আকাশছোয়া দানবীয় পর্বতেরও দেখা মিলবে। খাইবার পাখতুন প্রদেশের বাবুসর পাস নামক স্থানে সড়কটি ৪,৭১৪ মিটার উচ্চতা দিয়ে গমন করেছে, যা একে পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতম মহাসড়কে পরিণত করেছে। চিন্তা করুন, যেখানে মাউন্ট এভারেন্টের উচ্চতাই ৮, ৮৪৮ মিটার, সেখানে আপনি কারাকোরাম হাইওয়েতে গাড়ি ড্রাইভ করেই এভারেস্টের অর্ধেক উচ্চতায় উঠে যেতে পারবেন। বাবুসর পাস এতোই উচু যে, মেঘমালাও সড়কটির নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়। সই অপরূপ দৃশ্য কি ভোলার মতো? এছাড়া কারাকোরাম হাইওয়ের অন্যতম একটি বিখ্যাত অংশ হচ্ছে পাসু কোন। এটি গিলগিট-বাল্টিস্তান প্রদেশের হুনজা অঞ্চলের কাছে অবস্থিত। এই স্থানটায় গেলে বহুদূর থেকে একসারি সুউচ্চ পর্বতমালা দেখা যায়। মজার ব্যাপার হলো, আপনি যতোই সামনে এগুবেন তাতে লাভ নেই, মনে হবে পর্বতগুলো যতটা দূরে ছিলো ততোটা দুরেই রয়ে গেছে। মনে হবে যেন সারা জীবন ড্রাইভ করলেও সেই পর্বতগুলোর কাছে পৌঁছানো যাবেনা। সে এক অসম্ভব মনমুগ্ধকর দৃশ্য।
কারাকোরাম হাইওয়ের আশেপাশের বেশিরভাগ অঞ্চলই প্রায় মনুষ্যহীন। কিছু কিছু অঞ্চলে স্থানীয় এথনিক সম্প্রদায়, আদিবাসী, উপজাতীরা বসবাস করে। কিছু অঞ্চলে সড়কের পাশে পর্যটকদের জন্য আবাসিক হোটেল রয়েছে, আপনি চাইলে সেখানে রাত কাটাতে পারবেন। সেখানকার স্থানীয় খাবার খুবই সুস্বাদু এবং বিখ্যাত। কারাকোরাম হাইওয়ে যেমন আশ্চর্য রকমের সুন্দর, তেমনি কিছু কিছু স্থানে কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণও বটে। পাহাড় কেটে তৈরি সড়কটি কিছু দূর্গম স্থানে সরু হয়ে গেছে, আর সড়কের পাশ থেকে পাহাড় খাড়া হয়ে নেমে গেছে কয়েক হাজার ফুট নিচে। এসব স্থানে কিছুটা সাবধানে ড্রাইভ করতে হয়। কারাকোরাম হাইওয়ের মাধ্যমে কোথায় যাওয়া যায়? উত্তর পাহাড় কেটে তৈরি এই সড়কটি পাকিস্তানের মেইন ল্যান্ডের সঙ্গে এশিয়ার সুইজারল্যান্ড হিসেবে খ্যাত নর্থ পাকিস্তানকে সংযুক্ত করেছে। অর্থাৎ কারাকোরাম হাইওয়ে দিয়ে খাইবার পাখতুন প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চল, গিলগিট-বাল্টিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল (হুনজা, স্কার্দু) সহ পাকিস্তানের বেশকিছু অসম্ভব সুন্দরতম পর্যটন অঞ্চলে যাওয়া যায়। এছাড়া সড়কটি পাকিস্তানের সীমান্ত পেরিয়ে চীনের রোড-৩১৪ সড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ এই সড়ক দিয়ে চীনেও চলে যাওয়া যাবে। অর্থাৎ পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল ভ্রমণের প্রান ভ্রমর হচ্ছে এই কারাকোরাম হাইওয়ে। শুধু কারাকোরাম হাইওয়েকে নিজ চোখে দেখতেই প্রতিবছর বহু পর্যটক পাকিস্তান ট্যুরে আসে। ১৯-৫-২৪। ফেসবুক থেকে