নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রীষ্মের অন্যতম আকর্ষণীয় ফল আম। এর মিষ্টি স্বাদ আর রসে মন ভরে যায় সবার। তবে পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সুস্বাদু ফলটি দিনের আলোতে খাওয়াই শ্রেয়। রাতে আম খেলে তা শরীরের জন্য কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
আম ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু এই ফলটি রাতে খেলে উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। হজম সমস্যা থেকে শুরু করে ওজন বৃদ্ধি ও রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার মতো একাধিক ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক, রাতে আম খেলে কী কী সমস্যা হতে পারে এবং এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কী।
১. হজমে সমস্যা
রাতে আমাদের শরীর বিশ্রামের প্রস্তুতি নেয়, যার ফলে হজম প্রক্রিয়া বা বিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই ধীর হয়ে যায়। আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি (ফ্রুক্টোজ) ও ফাইবার। রাতে এই ফল খেলে ধীর বিপাক ক্রিয়ার কারণে তা সহজে হজম হতে চায় না। এর ফলে গ্যাস, অম্বল, বুক জ্বালা এবং বদহজমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই হজমের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য রাতে আম খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।
২. ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি
আমে ক্যালোরির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। একটি মাঝারি আকারের আমে প্রায় ৪৫-৫০ গ্রাম প্রাকৃতিক চিনি থাকে। রাতে শারীরিক কার্যকলাপ কম থাকায় এই অতিরিক্ত ক্যালোরি খরচ হয় না এবং তা শরীরে চর্বি হিসেবে জমা হতে শুরু করে। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান বা ডায়েট করছেন, তাদের জন্য রাতে আম খাওয়া ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
৩. রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রাতে আম খাওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আমে থাকা উচ্চ মাত্রার প্রাকৃতিক চিনি রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। ঘুমের সময় শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কিছুটা কম থাকে, ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এটি দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
৪. দাঁতের ক্ষতি
আমের মধ্যে প্রাকৃতিক চিনি ও অ্যাসিডিক উপাদান থাকে। রাতে আম খাওয়ার পর অনেকেই দাঁত ব্রাশ না করে ঘুমিয়ে পড়েন। এর ফলে আমের মিষ্টি ও অম্লীয় রস দাঁতের এনামেলের ওপর দীর্ঘক্ষণ জমে থাকে, যা দাঁতের ক্ষয় বা ক্যাভিটির কারণ হতে পারে।
৫. ঘুমের ব্যাঘাত
যদিও বিষয়টি নিয়ে সরাসরি গবেষণা কম, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন রাতে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খেলে তা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে শরীরে এক ধরনের সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে, যা ঘুম আসতে বাধা দেয় বা ঘুমের মানে প্রভাব ফেলে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুস্থ ব্যক্তিরা পরিমিত পরিমাণে আম রাতে খেতেই পারেন, তবে কিছু নিয়ম মানা জরুরি:
পরিমাণ: বেশি না খেয়ে একটি ছোট আম বা কয়েক টুকরো খেতে পারেন।
সময়: ঘুমানোর অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে, অর্থাৎ রাত ৮টার মধ্যে খাওয়া শেষ করুন।
হাঁটাচলা: আম খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হালকা হাঁটাহাঁটি করুন, যাতে ক্যালোরি কিছুটা খরচ হয়।
দাঁত ব্রাশ: ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করে নিন।
তবে সবদিক বিবেচনায়, দিনের বেলায় আম খাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ। দিনের বেলা আমাদের শরীর ও হজম প্রক্রিয়া সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে, ফলে আমের পুষ্টিগুণ শরীর ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে।
সূত্র: বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট ও পুষ্টিবিদদের মতামতের ভিত্তিতে সংকলিত।