শিরোনাম
◈ আসিফ-ইশরাকের পরস্পর দোষারোপ, বাড়ছে উত্তাপ! ◈ উত্তরার অবৈধ ফার্নিচার মার্কেট: কোটি টাকার ভাড়া যাচ্ছে কার পকেটে? ◈ প্রতিষ্ঠানের ভুলে পরীক্ষাবঞ্চিত দুই শিক্ষার্থী: এক বছরের ক্ষতির দায় নেবে কে? ◈ উত্তরায় কিশোর গ্যাং দমনে যুদ্ধের ঘোষণা ডিসি মহিদুলের ◈ হাতিয়ায় গুজবের তোলপাড়: পুকুরে কুমির নয়, ছিল গুইসাপ! ◈ শাজাহানপুরে বিএনপিকে হুমকি দিয়ে আওয়ামী লীগের পোস্টার, রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়ানোর আশঙ্কা ◈ চুয়ান্ন বছরেও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ হয়নি: উপদেষ্টা ফারুক ই আজম ◈ টাঙ্গুয়ার হাওরে ৫ পর্যটকের কারাদণ্ড ◈ ইরানের বিজয়ের কথা শুনেই রেজা পাহলভি হাসপাতালে ভর্তির খবর ভুয়া দাবি তাঁর কার্যালয়ের ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগদাতা আমরা না: সারজিস আলম (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২৭ জুন, ২০২৫, ১২:৫২ রাত
আপডেট : ২৭ জুন, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গর্ভাবস্থায় সতর্কতা: যে ৩টি খাবার বাড়াতে পারে সন্তানের জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি

গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনে অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। এই সময়ে মায়ের খাদ্যাভ্যাস সরাসরি গর্ভস্থ সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ওপর প্রভাব ফেলে। একটি সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা যেমন একটি সুস্থ শিশুর জন্ম নিশ্চিত করে, তেমনই কিছু ভুল খাবার সন্তানের জন্য জন্মগত প্রতিবন্ধকতা, বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে বাধা, এমনকি জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিশ্বের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞরা গর্ভকালীন সময়ে নির্দিষ্ট কিছু খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। এর মধ্যে প্রধান ৩টি খাবার নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা সন্তানের প্রতিবন্ধী হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়।

১. উচ্চ পারদ (Mercury) যুক্ত মাছ: শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি

ঝুঁকি: গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে পারদ বা মারকিউরি একটি মারাত্মক নিউরোটক্সিন (neurotoxin) হিসেবে কাজ করে। এই বিষাক্ত উপাদানটি প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল ভেদ করে সরাসরি শিশুর শরীরে প্রবেশ করতে পারে এবং তার মস্তিষ্কের কোষগুলোকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

যেসব মাছে ঝুঁকি বেশি:

  • হাঙ্গর (Shark)

  • সোর্ডফিশ (Swordfish)

  • কিং ম্যাকেরেল (King Mackerel)

  • টাইলফিশ (Tilefish)

  • বড় টুনা (Bigeye Tuna)

সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা:

  • বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধকতা (Cognitive Disabilities): শিশুর আইকিউ (IQ) কমে যাওয়া এবং শেখার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া।

  • স্মৃতিভ্রংশ ও মনোযোগের ঘাটতি (Memory and Attention Deficits): পরবর্তীতে শিশুর মধ্যে ADHD (Attention Deficit Hyperactivity Disorder)-এর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

  • শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাস: শিশুর শোনা ও দেখার ক্ষমতা সঠিকভাবে বিকশিত না হওয়া।

  • সূক্ষ্ম двигательные навыки (Fine Motor Skills) বিকাশে বাধা: হাত দিয়ে ছোট জিনিস ধরা বা লেখার মতো সূক্ষ্ম কাজে অসুবিধা।

সূত্র ও পরামর্শ:
ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) এবং এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি (EPA) গর্ভবতী নারীদের উচ্চ পারদযুক্ত মাছ সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়। তবে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্কের জন্য জরুরি, তাই কম পারদযুক্ত মাছ যেমন—স্যামন, চিংড়ি, কড, তেলাপিয়া এবং মিঠা পানির ছোট মাছ (মলা, ঢেলা) সপ্তাহে ৮-১২ আউন্স (প্রায় ২-৩ বার) খাওয়া নিরাপদ।

২. অতিরিক্ত ক্যাফেইন: শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা

ঝুঁকি: ক্যাফেইন একটি উদ্দীপক যা রক্তনালীকে সংকুচিত করে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করলে জরায়ু ও প্লাসেন্টার রক্তসঞ্চালন কমে যেতে পারে। ফলে গর্ভস্থ শিশু পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। শিশুর অপরিণত শরীর ক্যাফেইনকে সহজে বিপাক করতে পারে না, ফলে এর ক্ষতিকর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়।

ক্যাফেইনের উৎস:

  • কফি

  • চা (সবুজ চা সহ)

  • এনার্জি ড্রিংকস

  • কোমল পানীয় (সোডা)

  • চকলেট

সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা:

  • কম ওজনের শিশু (Low Birth Weight): যা পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।

  • বিকাশে বাধা (Developmental Delays): মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে স্নায়ুবিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।

  • গর্ভপাত ও মৃতপ্রসবের ঝুঁকি: গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ মাত্রায় ক্যাফেইন গর্ভপাত এবং মৃতপ্রসবের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

  • অটিজম ও ADHD-এর সম্ভাব্য যোগসূত্র: কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, অতিরিক্ত ক্যাফেইন শিশুর মধ্যে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (ASD) এবং মনোযোগের ঘাটতির ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যদিও এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

সূত্র ও পরামর্শ:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং আমেরিকান কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস (ACOG) গর্ভবতী নারীদের দৈনিক ক্যাফেইন গ্রহণের পরিমাণ ২০০ মিলিগ্রামের (প্রায় ১ কাপ কফি) মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়।

৩. কাঁচা বা আধা-সিদ্ধ মাংস, ডিম ও অপাস্তুরিত দুগ্ধজাত খাবার: জীবাণু সংক্রমণের ভয়

ঝুঁকি: রান্না না করা বা আধা-সিদ্ধ খাবারে লিস্টেরিয়া (Listeria), সালমোনেলা (Salmonella), এবং টক্সোপ্লাজমা (Toxoplasma)-এর মতো বিপজ্জনক জীবাণু থাকতে পারে। এই জীবাণুগুলো মায়ের শরীর থেকে প্লাসেন্টা অতিক্রম করে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটাতে পারে, যা শিশুর জিনগত গঠন ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশে বাধা দেয়।

ঝুঁকিপূর্ণ খাবার:

  • কাঁচা বা আধা-সিদ্ধ মাংস: স্টেক (রেয়ার), কাবাব (ভেতরটা কাঁচা থাকলে), সুশি।

  • আধা-সিদ্ধ বা কাঁচা ডিম: হাফ-বয়েল ডিম, পোচ, ঘরে তৈরি মেয়োনিজ, কাস্টার্ড।

  • অপাস্তুরিত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার: নরম চিজ (যেমন: ফেটা, ব্রি), এবং সরাসরি খামার থেকে আনা দুধ।

সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা:

  • নিউরাল টিউব ডিফেক্টস (Neural Tube Defects): টক্সোপ্লাজমা সংক্রমণের ফলে শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের গঠনে মারাত্মক ত্রুটি (যেমন: স্পাইনা বিফিডা) দেখা দিতে পারে।

  • মস্তিষ্কের গঠনগত সমস্যা: শিশুর মস্তিষ্কে পানি জমা (Hydrocephalus) বা মস্তিষ্কের আকার ছোট হওয়া (Microcephaly)।

  • জন্মগত অন্ধত্ব ও বধিরতা: টক্সোপ্লাজমোসিস সংক্রমণের ফলে শিশুর দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

  • গর্ভপাত বা মৃতপ্রসব: লিস্টেরিয়া সংক্রমণ গর্ভপাত, মৃতপ্রসব বা নবজাতকের জীবনঘাতী সংক্রমণের (Neonatal Sepsis) কারণ হতে পারে।

সূত্র ও পরামর্শ:
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) অনুযায়ী, গর্ভকালীন সময়ে যেকোনো মাংস ভালোভাবে সেদ্ধ করে খেতে হবে (ভেতরের তাপমাত্রা ১৬৫° ফারেনহাইট বা ৭৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছানো উচিত)। ডিমের কুসুম ও সাদা অংশ উভয়ই শক্ত হওয়া পর্যন্ত রান্না করতে হবে এবং শুধু পাস্তুরিত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের চূড়ান্ত পরামর্শ:
গর্ভকালীন সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। যেকোনো খাবার গ্রহণের আগে তার উৎস ও রান্না করার পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন থাকা আবশ্যক। সবচেয়ে ভালো হয়, একজন পুষ্টিবিদ বা আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি ব্যক্তিগত খাদ্য তালিকা তৈরি করে নেওয়া। মনে রাখবেন, আপনার আজকের সতর্কতা আগামী দিনের একটি সুস্থ জীবনের ভিত্তি।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়