ভারতের পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটির এক বিশেষ বৈঠকে বিশেষজ্ঞ ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ‘সামনে এগিয়ে নেয়ার’ জোরালো সুপারিশ উঠে এসেছে।
দেশটির কংগ্রেস দলের এমপি শশী থারুরের নেতৃত্বে এই কমিটির সঙ্গে চার শীর্ষ বিশেষজ্ঞের আড়াই ঘণ্টার দীর্ঘ আলোচনা হয়। বৈঠকটিতে দুই দেশের সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভারতের ‘হারানো অবস্থান’ পুনরুদ্ধার করার কৌশল নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।
শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অংশ নেন ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শংকর মেনন, বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাস, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন (অব.) এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ডিন অমিতাভ মাত্তু। তারা দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে মতামত দেন।
শশী থারুর বলেন, প্যানেলকে বলা হয়েছে যে ভারতে আসা বাংলাদেশিদের সংখ্যা কমে গেছে। বৈঠকে সংসদ সদস্যরা মত দেন, দুই দেশের মধ্যেকার তিক্ততা কমাতে ভারতের উচিত পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কূটনীতি বা ‘সফট লঞ্চ’ শুরু করা। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশও এই দিকে পদক্ষেপ নিয়েছে।
বৈঠকে সংসদ সদস্যরা বাংলাদেশে চীনের প্রভাব, বাংলাদেশ থেকে ভারতে ‘অবৈধ অভিবাসন’ এবং গত ১৯ জুন কুনমিংয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র দ্য হিন্দুকে জানায়, সব সংসদ সদস্য ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সমস্যাগুলো সম্পর্কে গভীর সহমর্মিতা ও বোঝাপড়া দেখিয়েছেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মেরামত করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁদের মধ্যে সত্যিকারের আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়েছে।
২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। এই সম্পর্ক কীভাবে ঠিক করা যায়, সে বিষয়ে সবার পরামর্শ শুনতে এমপিরা গতকাল আড়াই ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন। সূত্রের খবর অনুযায়ী, বৈঠকে এটি সাধারণ উপলব্ধি ছিল যে, বাংলাদেশ ও ভারত সাধারণ সংস্কৃতি ও ভাষার মাধ্যমে সংযুক্ত। বাংলাদেশকে ‘পাকিস্তানের মতো একটি বৈরী প্রতিবেশী’ হিসেবে দেখা উচিত নয়।
সংসদ সদস্যরা আরও মত দেন, দুই দেশের মধ্যকার তিক্ততা কমাতে ভারতের উচিত পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কূটনীতি বা ‘সফট লঞ্চ’ শুরু করা। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশও এইদিকে পদক্ষেপ নিয়েছে। গত সোমবার (২৩ জুন) কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম. রিয়াজ হামিদুল্লাহর একটি বৈঠক হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির আলোচনা সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র জানায়, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ সাধারণ ভাষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলামের উত্তরাধিকারের মাধ্যমে সংযুক্ত। এই গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে জনসাধারণের অনুষ্ঠান ও যোগাযোগের মাধ্যমে ‘প্যারা-ডিপ্লোমেসি’র জন্য ব্যবহার করা উচিত।
বৈঠকে সংসদ সদস্যরা বাংলাদেশে চীনের প্রভাব, বাংলাদেশ থেকে ভারতে ‘অবৈধ অভিবাসন’ এবং গত ১৯ জুন কুনমিংয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এই আলোচনাগুলো ইঙ্গিত দেয়, ভারতের নীতিনির্ধারকেরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে এবং ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগ্রহী।