মাসুদ আলম: [২] বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা ও রমনা বটমূলে হামলার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি নেতা আব্দুল হাই (৫৭) প্রায় ১৭ বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন।
[৩] বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় অভিযান চালিয়ে করে ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুতে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা ও রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত এবং একাধিক মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি সংগঠন হুজি-বি’র প্রতিষ্ঠাতা আমীর মুফতি আব্দুল হাই (৫৭) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-২। তার বিরুদ্ধে ৭টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে, যার মধ্যে ২টি মৃত্যুদণ্ড ও ২টি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তার নামে ১৩টি মামলা রয়েছে।
[৪] তিনি আরও বলেন, সে নারায়গঞ্জ জেলার দেওভোগ মাদ্রাসায় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত হেফজ বিভাগে পড়ালেখা করে। এরপর ১৯৮১ সালে অবৈধভাবে পার্শ্ববর্তী দেশে গমন করে দেওবন্দ দারুল উলুম মাদ্রাসায় লেখাপড়ার জন্য ভর্তি হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দেওবন্দে পড়ালেখা করে মাস্টার্স সমতুল্য দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে। এরপর দেওবন্দ থেকে ১৯৮৫ সালের শেষে ওই দেশের নাগরিক হিসাবে একটি পাসপোর্ট তৈরি করে পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিক হিসাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং ১৯৮৬ সালে পুনরায় ঐদেশে প্রত্যাবর্তন করে।
[৫] মঈন বলেন, পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পাকিস্তানি ভিসা নিয়ে ট্রেন যোগে পাকিস্তানের করাচিতে গমন করে সেখানকার একটি মাদ্রাসা থেকে ২ বছরের ইফতা কোর্স সম্পন্ন করে মুফতি টাইটেল অর্জন করে। ১৯৮৯ সালে ওই মাদ্রাসায় একাধিক বাংলাদেশিসহ বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি মিরানশাহ বর্ডার দিয়ে আফগানিস্থানে মুজাহিদ হিসাবে গমন করে। সেখানে বাংলাদেশের কয়েকজন জঙ্গি সদস্য ও ৩০ থেকে ৩৫ জন পাকিস্তানি নাগরিক একত্রিত হয়ে একটি ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি এক হুজি নেতা এবং বাংলাদেশী এক জঙ্গির নেতৃত্বে অক ৪৭ রাইফেল ও থ্রি নট থ্রি রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।
[৬] তিনি বলেন, পরবর্তীতে আফগানিস্তানে গমন করে তাদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করে। অতঃপর ১৯৯১ সালে সে বাংলাদেশে ফিরে আসে। আফগানিস্তানে থাকাকালীন “হুজি-বি” অর্থাৎ “হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশ” নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। যার আমীর নির্বাচিত হয় গ্রেফতারকৃত মুফতি আব্দুল হাই। পরবর্তীতে মুফতি আব্দুল হাই আমীর হিসাবেই বাংলাদেশে আসে এবং ১৯৯১ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ নামে প্রচারণা শুরু করে। এরপর ১৯৯২ সালের প্রথম দিকে গ্রেফতারকৃত আব্দুল হাই কক্সবাজারের উখিয়ার একটি মাদ্রাসায় যায় এবং সেখানে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করে।
[৭] মঈন বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশের এক জঙ্গি নেতা ওই ট্রেনিং ক্যাম্পে অস্ত্র সরবরাহ করত এবং মুফতি আব্দুল হাই ও তার দুই সহযোগী সেখানে প্রশিক্ষণ প্রদান করত। উক্ত স্থানে তারা ৪ বছর অবস্থান করে এবং কৌশলে তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। অতঃপর ১৯৯৬ সালে যৌথবাহিনীর অভিযানে উক্ত ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
[৮] তিনি বলেন, আব্দুল হাই “জাগো মুজাহিদ” মাসিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। পত্রিকাটি ১৯৯১ সালে চালু হয় এবং তার অফিস খিলগাঁও থানাধীন তালতলা নামক স্থানে। পরবর্তীতে ২০০০ সালে সরকার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করে। আব্দুল হাই ২০০০ সালে উক্ত পত্রিকার অফিস হতেই গ্রেপ্তার হয় এবং ২মাস কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি পায়। ২০০৬ সালের পর মুফতি আব্দুল হাই আত্মগোপনে চলে যায়। তার পরিবার তখনও নারায়নগঞ্জেই বসবাস করত কিন্তু সে কুমিল্লা জেলার গৌরিপুরে তার শ্বশুরবাড়ী এলাকায় আত্মগোপন করে।
[৯] তিনি আরও বলেন, গৌরিপুর বাজারে তার শশুরের কেরোসিন ও সয়াবিন তেলের ডিলারশিপের ব্যবসা ছিল। সে সারা দিন ব্যবসা দেখাশুনা করে ওই দোকানেই রাত কাটাত। এভাবেই ২০০৯ সাল পর্যন্ত সে তার শ্বশুর বাড়ীর এলাকা গৌরিপুরে আত্মগোপনে ছিল।