মহসীন কবির, তরিকুল ইসলাম: ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, জবাবদিহির আওতায় না আসা পর্যন্ত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এ নিয়ে আমাদের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। এই নীতি ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দায়বদ্ধতা ও সংস্কার হচ্ছে।
এ বিষয়ে আমরা সরকারকে যেমন বলেছি ঠিক তেমনি প্রকাশ্যে বলেছি উল্লেখ করে মার্কিন দূত বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য কাউকে শাস্তি দেওয়া নয়। এর ফলে তারা যাতে তাদের আচারণ পরিবর্তন করে। গত বছরের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এটা খুব ভালো।
বৃহস্পতিবার গুলশানে একটি হোটেলে ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসংঙ্গে সাংবাকিদের প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, নির্বাচন কমিশনের করণীয় বা সংবিধান সংশোধনী বিষয়ে আমাদের কোনও মন্তব্য নেই। তবে, আমরা বহুমুখী সমাজ দেখতে চাই। সাধারণভাবে পেশাদার কূটনীতিকরা ‘হতে পারে’ এমন কোনও বিষয়ে মন্তব্য করেন না নির্বাচন শুধু একটি দিনের ঘটনা নয়। বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে হবে কি না, তা নির্ভর করছে বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপরে। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারছে কি না, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ তাদের মতপ্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে কি না, তার ওপর নির্ভর করছে এটি।
বাংলাদেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে তা একটি সঠিক নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয়। নির্বাচনের আগে ও পরের ঘটনাও একটি অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অংশ, তাই বাংলাদেশের বর্তমান সহিংসতার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও বিশ্ব সম্প্রদায় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশের জনগণ ঠিক করবে সুষ্ঠু ও স্বাধীন নির্বাচনের বিষয়। এমন কোনও নির্বাচন নেই যেখানে সহিংসতা ভালো পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
একজন কূটনীতিকের কি কোন দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে বিশেষ করে, নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে এ ধরণের মন্তব্যেও এখতিয়ার রাখে কিনা? আর এমন মন্তব্যে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, আমি কূটনৈতিক শিষ্টাচার সম্পর্কে অবহিত যে অন্য কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা যায় না। আমি এটাও অবহিত যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে নির্বাচন করার বিষয়ে অনেক পরামর্শ ও সুপারিশ রয়েছে। আমি যখন নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করি, আমি ওই পরামর্শ বিষয়ে কথা বলি এবং আমি বলতে চাই যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অর্জনে সহায়তা করতে চায়। কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেয় না যুক্তরাষ্ট্র।
ইন্দো প্যাসিফিক কৌশলে (আইপিএস) বাংলাদেশের যোগ দেওয়া বা না দেওয়াটা কোনো বিষয় নয়। এটা একটি নীতি। এটা বাংলাদেশ কীভাবে নেয় সেটাই দেখার বিষয়। আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের নীতি। এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও উন্নয়নে আঞ্চলিক কানেকটিভিটিকে আমরা প্রাধান্য দিয়ে থাকি। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যোগ দেওয়াটা বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত এবং বাংলাদেশ কোন জোটে যোগ দেবে, কোন জোটে যোগ দেবেনা সেটা বাংলাদেশর বিষয় বলেও মন্তব্যে করেন মার্কিন দূত।
বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কারীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরতে নজর দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন পিটার হাস। তিনি বলেন, বিশেষ করে বাংলাদেশের শ্রমমান ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের এখনও উদ্বেগ রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র চায়, বাংলাদেশে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ থাকুক। এতে করে তারা নিজেদের অধিকার আদায়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে দরকষাকষি করতে পারবে। অবশ্য বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রশ্নে বলেন, আমরা মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দেওয়ারও চেষ্টা করছি। এছাড়া রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিচ্ছি। আমাদের নানা উদ্যোগ রয়েছে। আমরা এই সংকট সমাধানে আমাদেও জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ও জার্মান গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটাং মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, সাবেক রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।