শিরোনাম
◈ মিরপুরে শতাব্দী পরিবহনের বাসে আগুন ◈ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রামীণ ব্যাংক কার্যালয়ে আগুন (ভিডিও) ◈ নতুন পে স্কেল বাস্তবায়ন নিয়ে যে বার্তা দিলেন অর্থ উপদেষ্টা ◈ গাজীপুর-৬ আসন পূর্ণ বহালের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ ◈ উত্তরার জসিমউদ্দিনে মাইক্রোবাসে আগুন ◈ বাংলাদেশে নতুন উগ্রবাদী ঘাঁটি তৈরি করছে জামায়াত, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের টার্গেট করছে সংগঠন: সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ অর্ধ বি‌লিয় ডলার ব‌্যয়ে গাজায় বিশাল সেনা-ঘাঁটি তৈ‌রির প‌রিকল্পনা  আ‌মে‌রিকার, হাজার হাজার সেনা পাঠানোর উদ্যোগ ◈ রাতভর সন্ত্রাসী‌দের তাণ্ডব, বৃহস্প‌তিবার লকডাউন রুখে দি‌তে প্রস্তুত পুলিশ, কী করবে আওয়ামী লীগ?  ◈ আওয়ামী লীগকে নিয়ে রাজনীতিতে ফের অস্থিরতা ◈ বাজি কেলেঙ্কারিতে তুর‌স্কে ১ হাজার ২৪ ফুটবলার নিষিদ্ধ

প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:৫৭ দুপুর
আপডেট : ১২ নভেম্বর, ২০২৫, ০৩:০৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অস্ট্রেলিয়ায় অবৈধ ট্রানজিট: বৈধ ভিসা থাকলেও মালয়েশিয়ায় ঢুকতে পারছেন না বাংলাদেশিরা

বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে মালয়েশিয়া। কিন্তু, বৈধ ভিসা থাকার পরও শত শত বাংলাদেশি ঢাকা বিমানবন্দরেই আটকে দেওয়া হচ্ছে হচ্ছে বা কুয়ালালামপুরে পৌঁছানোর পর ফেরত পাঠানো হচ্ছে। কারণ, দুই দেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এখন যাচাইয়ে আরও কঠোর হয়েছে—মালয়েশিয়াকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশিদের অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা ঠেকাতে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশিকে ঢাকা বিমানবন্দরে দেশত্যাগে বাধা দেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৩ হাজার মালয়েশিয়াগামী পর্যটক ভিসাধারী। অন্যদিকে, বাংলাদেশে ইমিগ্রেশনের ক্লিয়ারেন্স পেয়েও ঝুঁকি কমেনি অনেকের; জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ৩,২২৪ বাংলাদেশিকে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ ফেরত পাঠিয়েছে।

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন ও ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে পাওয়া তথ্য ও নথি পর্যালোচনা করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড দেখেছে, এসব প্রত্যাখানের পেছনে বিস্তারিত কারণও রয়েছে। ফেরত পাঠানো অনেক যাত্রীর বিরুদ্ধে সন্দেহ ছিল—তারা মালয়েশিয়া হয়ে ইন্দোনেশিয়ার পথে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।

২০২৪ সালের ৭ জুন, অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশ ঢাকায় তাদের হাইকমিশনের মাধ্যমে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল দুটি মানবপাচার প্রচেষ্টার বিষয়ে—যেখানে ৪১ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া হয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া উভয় দেশের চাপের কারণেই এখন বাংলাদেশি পর্যটকদের যাচাই-বাছাই অনেক কঠোর করা হয়েছে।

ফেরত পাঠানোর কারণগুলো

মালয়েশিয়ার উপপর্যটনমন্ত্রী খাইরুল ফিরদাউস আকবর খান গত ৪ নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জানান, জানুয়ারি–আগস্ট সময়ে ২,০২,৯২৯ জন বাংলাদেশি পর্যটক দেশটিতে গেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ১২৮ শতাংশ বেশি। তবে একই সময়ে ফেরত পাঠানোও বেড়ে যাওয়ায়, বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পুলিশ মালয়েশিয়া হাইকমিশনের কাছে কারণ জানতে চায়।

গত ১৫–১৬ অক্টোবর বিশেষ শাখা বা এসবির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মালয়েশীয় কর্মকর্তারা এর পেছনে ২৩টি কারণ উল্লেখ করেন, যেগুলোর ভিত্তিতে বৈধ ভিসাধারীদেরও ফেরত পাঠানো হচ্ছে। সবচেয়ে সাধারণ কারণ ছিল—ভিসা আবেদনের সময় দেওয়া নথি ও আগমনের সময় প্রদর্শিত নথির সামঞ্জস্য না থাকা।

বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, অনেক বাংলাদেশি আবেদনকারী ভিসা পাওয়ার আগে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অনেক টাকার ব্যালেন্স দেখান, কিন্তু ভিসা অনুমোদনের পরই এসব অর্থ তুলে নেওয়া হয়। মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ এটিকে "ভুয়া পর্যটন ইচ্ছার" প্রমাণ হিসেবে দেখে।

আরেকটি বড় উদ্বেগের জায়গা হলো ভুয়া বা বাতিল করা হোটেল বুকিং। অনেকেই ভিসা পাওয়ার পর বুকিং বাতিল করে আত্মীয়দের বাসায় থাকার চেষ্টা করেন। কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা এসব অসঙ্গতি ধরতে পারেন যখন ভ্রমণকারী আবেদনকৃত হোটেল বা রিজার্ভেশনের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হন, যেটা তারা ভিসা আবেদনের সময় ঠিকই দেখিয়েছিলেন।

ঢাকা বিমানবন্দরের একজন ইমিগ্রশন কর্মকর্তা বলেন, অনেক যাত্রীর হাতে পর্যাপ্ত অর্থও থাকে না। "কেউ কেউ দাবি করেন ঘুরতে যাচ্ছেন, কিন্তু সঙ্গে ১০০ ডলারও নেই," বলেন ওই কর্মকর্তা।

অন্যদিকে, মালয়েশিয়ায় বেড়ে যাওয়া অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা—যাদের বৈধতা পেতে ৬,০০০ রিঙ্গিত পর্যন্ত খরচ হয়—তাদের মধ্যে কেউ কেউ পাচারকারীদের মাধ্যমে সমুদ্রপথে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন।

ত্রিপক্ষীয় পাচারচক্র

সিআইডির মানবপাচার প্রতিরোধ শাখা অনুসন্ধানে জেনেছে— বাংলাদেশি, মালয়েশীয় ও ইন্দোনেশীয় পাচারচক্র টিকটক ও ফেসবুক ব্যবহার করে প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলছে। প্রায় ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে তারা অস্ট্রেলিয়ায় নৌকাযোগে পাঠানোর প্রলোভন দেখাচ্ছে।

সিআইডি ইতোমধ্যে কয়েকটি টিকটক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত-ও করেছে। এগুলো হলো– Australia Boy 770, hasanmohammad1312, Australia.sydney40, Md Rakib.rahman এবং KHAN Australia Jisan Khan ইত্যাদি।

ইন্দোনেশিয়ার জলসীমা দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে অস্ট্রেলীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী অন্তত ৪১ জন বাংলাদেশিকে আটক করেছে।

সিআইডির অতিরিক্ত সুপারিনটেনডেন্ট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, "আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করেছি, যেগুলো (অস্ট্রেলিয়ায়) কাজ ও নাগরিকত্ব লাভের ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ প্রতারণা, বড় ধরনের একটি সতর্ক সংকেত।"

অবৈধ অভিবাসনের প্রক্রিয়া

তদন্তে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে পাচারকারীরা প্রথমে অনলাইনে যোগাযোগ করে। বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পা রাখার পরই টাকা দিতে হবে।

যাত্রা শুরু হয় মালয়েশিয়ার জোহর বাহরু থেকে। সেখান থেকে ছোট নৌকায় করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ইন্দোনেশিয়ার কুপাং দ্বীপে। সেখানে পৌঁছে তাদের জিম্মি করে ৬ লাখ টাকা আগাম দিতে বাধ্য করা হয়, এরপর গন্তব্য হয় অস্ট্রেলিয়ার ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ক্রিসমাস আইল্যান্ড।

বেশিরভাগের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছানোর স্বপ্নটা সেখানেই শেষ হয়। কারণ, অনেককে ক্রিসমাস আইল্যান্ডের কাছে আটক করা হয় এবং পরে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২৩ সালে অন্তত ৮ জন ও ২০২৪ সালে আরও ৩২ জন বাংলাদেশি এভাবে আটক হয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক কেটিএম কনসাল্টিং গ্রুপের আহম্মেদ হোসেন জিবু বলেন, "সমুদ্রপথে অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছাতে যারা পাচারকারীদের অর্থ দিচ্ছেন, তারা মূলত প্রতারণার শিকার। শেষমেশ তারা আটক ও ডিপোর্টেড হন, এতে বাংলাদেশের পাসপোর্টের মর্যাদাও ক্ষুণ্ণ হয়।"

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিক্রিয়া

যোগাযোগ করা হলে এক লিখিত জবাবে ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশন জানায়, "অস্ট্রেলিয়া মানবপাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশের মতো আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। প্রতিটি ভিসা আবেদনই নিজ নিজ যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়।"

তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঢাকায় মালয়েশিয়ার হাইকমিশন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রশ্নের জবাব দেয়নি।

ইমিগ্রেশন পুলিশের তথ্যমতে, মালয়েশিয়ায় প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী বসবাস করেন। এর মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশের বৈধ ভিসা নেই বা ব্যবসা চালাতে তাদের প্রয়োজন ট্রেড লাইসেন্স।

"তাই অনেকে ভালো কাজ, উন্নত জীবনের আশায় অস্ট্রেলিয়ায় যেতে চাইছেন। কিন্তু বাস্তবে এটিও একটি মরীচিকা ছাড়া আর কিছু না"- বলেন সিআইডির অতিরিক্ত এসপি মোস্তাফিজুর রহমান। 

সূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়