বাংলাদেশে জমি বা সম্পত্তি হস্তান্তরের একটি প্রচলিত উপায় হলো হেবা দলিল। পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী বা নিকট আত্মীয়দের নামে অনেকেই হেবা দলিল করে থাকেন। কিন্তু আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দলিল চিরস্থায়ী নয়। নির্দিষ্ট কিছু শর্ত ভঙ্গ হলে আদালতের রায়ে হেবা দলিল চিরতরে বাতিল হয়ে যেতে পারে।
হেবা দলিল কেউ ইচ্ছেমতো বাতিল করতে পারে না। কোনো জেলা প্রশাসক, ক্যাডার কর্মকর্তা, ইউএনও, ম্যাজিস্ট্রেট বা সাব রেজিস্ট্রারও এটি বাতিল করতে পারেন না। সাব রেজিস্ট্রারের কাজ কেবল দলিল রেজিস্ট্রি করা, বাতিল করা নয়। তবে মালিক নিজে চাইলে আদালতে মামলা করে দলিল বাতিল করতে পারেন। আদালতের আদেশ হলে দলিল স্থায়ীভাবে অকার্যকর হয়ে যাবে।
কারা হেবা নিতে পারে?
হেবা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে মাত্র ১৪ শ্রেণির নিকট আত্মীয়কে—পিতা-মাতা, পুত্র-কন্যা, স্বামী-স্ত্রী, দাদা-দাদী, নানা-নানী, নাতি-নাতনী, ভাই-বোন। এ তালিকার বাইরে কাউকে হেবা দেওয়া হলে তা “অননুমোদিত” হিসেবে গণ্য হয় এবং আদালতে সহজেই বাতিল হয়ে যেতে পারে।
হেবা বৈধ হওয়ার মূল শর্ত
হেবা দলিল কার্যকর হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ বাধ্যতামূলক—
১. হেবা ঘোষণা দিতে হবে।
২. গ্রহীতা হেবা গ্রহণ করতে হবে।
৩. সম্পত্তি হস্তান্তর বা দখল বুঝিয়ে দিতে হবে।
এর যেকোনো একটি শর্ত না মানা হলে দলিল অবৈধ হয়ে যাবে। যেমন, মালিক হেবা করলেও যদি দখল নিজের কাছে রাখেন, তবে সেই দলিল বাতিলযোগ্য হবে।
ওয়ারিশি বা প্রতারণাপূর্ণ হেবা বাতিল হয়
অবিভক্ত ওয়ারিশি জমি বা সরকারি রেকর্ডে মৃত পিতামাতার নামে থাকা সম্পত্তি হেবা করার অধিকার নেই। এমন সম্পত্তি হেবা করলে ওয়ারিশরা আদালতে মামলা করে তা বাতিল করতে পারেন।
এছাড়া অনেকেই বিক্রির টাকা লেনদেন গোপন করে হেবা দলিল করেন, যাতে সরকারি খরচ কম হয়। আইন অনুযায়ী এটি প্রতারণাপূর্ণ হেবা, যা পরবর্তীতে আদালতের রায়ে বাতিল হয়ে যায়।
অনেকে ভুল করে মনে করেন সাব রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে হেবা দলিল বাতিল করা যায়। আসলে সাব রেজিস্ট্রার কেবল কারিগরি ভুল সংশোধন করতে পারেন, কিন্তু দলিল বাতিলের ক্ষমতা একমাত্র আদালতের হাতেই।
যদি সব শর্ত পূরণ করে আন্তরিকভাবে হেবা দেওয়া হয়, তবে সেই দলিল বাতিল হবে না। কিন্তু সামান্য ভুল, প্রতারণা বা শর্তভঙ্গের কারণে হেবা দলিল বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই হেবা দলিল করার আগে অবশ্যই আইন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।