শিরোনাম
◈ নিষেধাজ্ঞার পর গোপনে সক্রিয়তা: পাল্টে যাবে কি আওয়ামী লীগের কৌশল? ◈ বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতিতে টেকসই সংস্কারে জাতিসংঘের সহযোগিতার আশ্বাস ◈ মুস্তা‌ফিজ‌কে আই‌পিএ‌লে তিন ম্যাচের জন্যই এনওসি দি‌লো বি‌সি‌বি ◈ দ‌ক্ষিণ আ‌ফ্রিকার বিরু‌দ্ধে সিরিজ জিতলো বাংলা‌দেশ ইমা‌র্জিং দল ◈ ক্রিশ্চিয়া‌নো রোনাল‌দো টানা তৃতীয়বার সর্বোচ্চ, এবা‌রের আয় সা‌ড়ে ৩ হাজার কো‌টি টাকা ◈ নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা: বৈষম্য-সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে ন্যায়ভিত্তিক সমাজের শপথ ◈ আই‌পিএল: মুস্তা‌ফিজ‌কে দলে নি‌য়ে ভারতীয়দের বিতর্কের মুখে দিল্লি ক‌্যা‌পিটালস ◈ শনিবার খোলা থাকবে ব্যাংক ও শেয়ার বাজার ◈ আমরা সঠিক পথে এগোচ্ছি এবং জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে: মুহাম্মদ ইউনূস ◈ সাম্য হত্যা: শাহবাগ থানা ঘেরাও, আসামিদের গ্রেপ্তারে আলটিমেটাম (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৬ মে, ২০২৫, ১০:০৫ দুপুর
আপডেট : ১৬ মে, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

কারও জন্য ওয়াটার স্প্রে আর কাউকে লাঠিপেটা- সড়কে আন্দোলন নিয়ে সরকারের ভিন্ন আচরণ কেন?

এল আর বাদল : আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনের সড়ক আটকে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান কর্মসূচির পরই দলটির কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের ঘােষণা আসে এ সপ্তাহেই। তার পর থেকে রাজধানী ঢাকার সড়কজুড়ে নানা দাবিতে বিক্ষােভের সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন অনেকে।

গত বুধবার (১৪ ‌মে) ঢাকার অন্তত দুটি জায়গায় সড়ক আটকে বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষােভ চলেছে।যমুনার সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং শাহবাগে নার্সিং শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে অনেকটাই অচল হয়ে পড়ে ঢাকা। -- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

বৃহস্পতিবারও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে আর ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়।
এর আগে, সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের দেশ ছাড়ার খবর আসার পর আটই মে রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ।

পরে এনসিপিসহ ইসলামপন্থি বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা এতে যোগ দেন। পরে অবস্থান কর্মসূচি শাহবাগে নিয়ে আসা হয়। এর পরপরই, গত ১০ই মে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি। তবে এতে নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত রাখা হয় শাহবাগকে। 

তবে সেই আদেশ না মেনে দাবি আদায়ে বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে লংমার্চ শুরু করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়।

আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে একপর্যায়ে ব্যবহার করা হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান। এই ঘটনায় বুধবার রাতে কাকরাইলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে এলে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে একটি পানির বোতল ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটে, যা নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা।

পরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে উপদেষ্টা জানান, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার পাশে আন্দোলন করতে দেয়া হবে না এবং এবিষয়ে সরকার কঠোর ভূমিকায় যাবে।

এরপর থেকেই আন্দোলনের পক্ষভেদে সরকারের পৃথক অবস্থান নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। কারণ এর আগে প্রজ্ঞাপন থাকা সত্ত্বেও, অর্থাৎ সরকারি সিদ্ধান্ত না মেনে এনসিপি নেতাদের যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হয়নি। বরং বাধা দেয়ার পরিবর্তে শাহবাগে তাদের সমাবেশে ওয়াসাকে খাবার পানি বিতরণ করতে এবং গরম আবহাওয়ায় পরিবেশ শীতল করতে সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিয়ে পানি ছিটাতে দেখা যায়।

ফলে কোনো আন্দোলনে কেন সরকারের 'সদয় আচরণ' আর কোনো আন্দোলনে কেন বলপ্রয়োগ, উঠছে এমন প্রশ্নও।

-- প্রশ্ন উঠছে সরকারের অবস্থান নিয়ে --

১০ই মে'র আগে গত ১৩ই মার্চ সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশপাশের এলাকায় সব ধরনের গণজমায়েত, মিছিল ও সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তারপরও এসব এলাকায় জমায়েত করতে দেখা গেছে।

এরমধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল গত আটই মে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অবস্থান।

সেসময়ও সরকারের আদেশ অমান্য করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। বরং সরকারের পক্ষ থেকেই আন্দোলনকারীদের জন্য নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। ফলে অনেকেই সরকারের এই অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

এনিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সাব্বির আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এনসিপির প্রতি সরকারের সদয় আচরণের কারণ খুব স্পষ্ট। এনসিপি তাদের আশীর্বাদপুষ্ট কিংস পার্টি- এটা বললে ভুল হবে না। কিন্তু জগন্নাথের আন্দোলন তো সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট না।"

ফলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আইন লঙ্ঘন করলে সরকার তাদের প্রতি সদয় আচরণ না করাটাই স্বাভাবিক–– বলে মন্তব্য করেন এই বিশ্লেষক। "এই যে একেক সময়ে একেক আচরণ, এই যে দ্বিচারিতা – এটা আসলে এই সরকারও শিখে গেছে পূর্বের সরকারের মতো," বলেন অধ্যাপক আহমেদ।

সমাধান কী?--

এই পুরো ঘটনার কারণ হিসেবে "চরম সমন্বয়হীনতাকেই" দেখছেন অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ, যা তার মতে এই সরকারের "স্থায়ী বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে"।

"আপনি যত ভিজিবল (দৃশ্যমান) থাকবেন, যত অ্যাক্টিভ (সক্রিয়) থাকবেন, আপনার গুরুত্ব তত বেশি বাড়বে। কিন্তু এটা কোনো স্থায়ী সমাধান না," বলেন তিনি। ফলে পুরো বিষয়টিকে প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে হবে বলেই মত এই বিশ্লেষকের। আর সেক্ষেত্রে নির্বাচনকেই একমাত্র সমাধান হিসেবে দেখছেন তিনি।

"আল্টিমেট সমাধান হলো একটা নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিলেন," বলেন অধ্যাপক আহমেদ। একইসঙ্গে শিক্ষাঙ্গনে প্রতিনিধিত্বমূলক ছাত্র সংসদ করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন অধ্যাপক আহমেদ।
তিনি বলেন, তাহলে এই ধরনের জমায়েত করার প্রবণতা কমে আসবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়