মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অভিবাসন পরিস্থিতি আবারও জটিল হয়ে উঠেছে। পারমিটের অপব্যবহার ও অননুমোদিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ৩০৬ জন বাংলাদেশিকে আটক করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। একই সঙ্গে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রবেশের চেষ্টাকালে আরও ২৬ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
গত ৬ আগস্ট (বুধবার) বুকিত মের্তাজামের সিম্পাং আমপাট এলাকায় একটি কারখানায় অভিযান চালায় মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ। অভিযানে মোট ৭৪৯ জনের কাগজপত্র যাচাই করা হয়। এর মধ্যে ৩০৭ জনকে ইমিগ্রেশন আইনের অধীনে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে ৩০৬ জনই বাংলাদেশি এবং বাকি একজন নেপালের নাগরিক।
ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক দাতুক জাকারিয়া শাবান জানান, আটক ব্যক্তিদের বয়স ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তাদের বিরুদ্ধে পারমিট সেক্টরের অপব্যবহার, অননুমোদিত স্থানে কাজ, মেয়াদোত্তীর্ণ পারমিট থাকা এবং বৈধ ভ্রমণ নথি না থাকার মতো অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, অনেকেই 'পরিষ্কারক' পেশার পারমিট থাকা সত্ত্বেও কারখানায় কাজ করছিলেন, যা স্পষ্টতই পারমিটের শর্ত ভঙ্গ।
এক বাংলাদেশি আটক অভিবাসী জানিয়েছেন, তিনি ২০২৩ সালে একজন এজেন্টের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার রিঙ্গিত (প্রায় ৩ লাখ টাকা) খরচ করে মালয়েশিয়ায় যান। তার পারমিট ‘পরিষ্কারক’ পেশার হলেও এজেন্টের আশ্বাসে তিনি কারখানায় কাজ করেন। তার দাবি, এজেন্ট বলেছিলেন, কারখানার শ্রমিকদেরও ‘পরিষ্কারক’ হিসেবে ধরা হয়।
অন্যদিকে, ৫ আগস্ট (মঙ্গলবার) কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনাল দিয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টাকালে ২৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠায় দেশটির সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা সংস্থা (AKSEM)। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা সন্দেহজনক ও অসংগতিপূর্ণ ছিল। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, এদের সহায়তায় কিছু তৃতীয় পক্ষ সক্রিয় ছিল বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।
তদন্তে আরও জানা যায়, ফেরত পাঠানো ব্যক্তিরা মালয়েশিয়ায় প্রবেশের শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হন। অনেকের কাছে ছিল না পর্যাপ্ত তহবিল, বৈধ কাগজপত্র কিংবা হোটেল বুকিং সংক্রান্ত প্রমাণ। কারও কারও ভ্রমণ উদ্দেশ্য ছিল অস্পষ্ট, যা অভিবাসন আইন অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
একের পর এক এই ধরপাকড় ও ফেরত পাঠানোর ঘটনায় মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থান প্রত্যাশী বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ-আতঙ্ক বিরাজ করছে। মালয়েশিয়া সরকার জানিয়েছে, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ আগমনকারীদের ঠেকাতে প্রধান প্রবেশপথগুলোয় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং এমন অভিযান নিয়মিত চলবে। উৎস: জাগোনিউজ ও সমকাল।