মাহবুব সৈয়দ, পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি: রাশিয়ায় চাকরির প্রতিশ্রুতিতে দালালের মাধ্যমে পাঠিয়ে যুদ্ধের ময়দানে পাঠানো হয় নরসিংদীর পলাশ উপজেলার সোহান মিয়াকে। রুশ বাহিনীর হয়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে অংশ নিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এই যুবক। শনিবার (২১ জুন) বিকাল সাড়ে ৩টায় সোহানের সহযোদ্ধা ও বন্ধু জাফরের ফোনে তার মাকে মৃত্যুর খবর জানানো হয়। পরে মরদেহের ছবিও পাঠানো হয়। মৃত্যুসংবাদের পর সোহানের পরিবার ও গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।
সোহান মিয়া (২৬) উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মৃত সোহরাব মিয়ার ছেলে। পরিবারে রয়েছে মা নূরুন্নাহার, স্ত্রী হাবিবা আক্তার এবং ১৬ মাসের একমাত্র ছেলে ফারহান।
সরেজমিনে সোহানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভাগ্য বদলাতে সোহান ও তার বোনজামাই আকরাম মিয়া ১৪ লাখ টাকা খরচ করে রাশিয়ায় যান। ঢাকার বনানীর একটি ট্রাভেল এজেন্সি ‘ড্রিম হোম ট্রাভেলস’-এর জেরিন নামে এক দালালের মাধ্যমে তারা সাইপ্রাসে চাকরির প্রলোভনে কাগজপত্র জমা দেন। কিন্তু পরে তাদের পাঠানো হয় রাশিয়ায়।
২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর ১০ সদস্যের একটি দলের সঙ্গে সোহান ও আকরাম রাশিয়া পৌঁছান। সেন্ট পিটার্সবার্গে চার দিন থাকার পর সোহানসহ কয়েকজনকে নিয়ে যাওয়া হয় সেনা ক্যাম্পে। দেওয়া হয় সামরিক পোশাক, শুরু হয় অস্ত্র প্রশিক্ষণ। সোহান প্রশিক্ষণ নিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধর, খাদ্যনিরঞ্জন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
আকরাম মিয়া ভাগ্যক্রমে পালিয়ে দেশে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, “সোহান আমাকে সব জানিয়ে পালাতে বলেছিল। আমি দেড় লাখ টাকা পাঠিয়ে দেশে ফিরি।”
সোহানের মা নূরুন্নাহার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ধারদেনা করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম সংসারের হাল ধরবে বলে। কিন্তু আমার বুক খালি হয়ে গেল। আমি দালালদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি চাই। আর সরকারের কাছে অনুরোধ—আমার ছেলের লাশ যেন দেশে ফেরত আনা হয়।”
স্ত্রী হাবিবা আক্তার বলেন, “ড্রিম হোম ট্রাভেলস বারবার টাকা নিয়েও কিছু করেনি। এখন আমার স্বামী লাশ হয়ে ফিরছে। ১৬ মাসের ছেলেকে নিয়ে কীভাবে বাঁচবো জানি না। আমি দালালদের বিচার চাই, শাস্তি চাই এবং সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি—আমার স্বামীর মরদেহ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন।”
পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুবক্কর সিদ্দিকী বলেন, “পরিবার থেকে লিখিত আবেদন করলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মরদেহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো। উপজেলা প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।”
এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। প্রশাসন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ চেয়ে পরিবারসহ এলাকাবাসী দ্রুত বিচার ও মরদেহ ফেরত আনার দাবি জানিয়েছে।