এম আর আমিন: ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত। শান-বাঁধানো ফুটপাতে, পাথরে পা ডুবিয়ে এ কাঠখোট্টা গাছ, কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে হাসছে।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে ফুলের পশরা সাজিয়ে বসেছে ফুল বিক্রেতারা। কারণ একই সাথে আজ যে বিশ্ব ভালবাসা দিবসও। বসন্তের সাথে ভালবাসা দিবস যোগ হয়ে তা মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে আরো। বাসন্তী রং শাড়ি খোঁপায় হলুদ গাঁদা, রঙ-বেরঙের চুড়ি পরে শৈল্পীক সাজে তরুণীরা বেড়িয়ে পড়ে বসন্তের টানে।
শীতের তীব্রতা ভেঙে জেগেছে প্রকৃতি। দখিনা বাতাসে ভাসছে পাখিদের গান। হৃদয়ের ব্যাকুলতা নিয়ে এসেছে বসন্ত। এতদিন ধরে যার অপেক্ষা, সেই বসন্ত আজ সমাগত। আজ পহেলা ফাগুন, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। কোকিলের কুহুতান শোনা যাচ্ছিল কয়েক দিন আগ থেকেই। শুকনো পাতা ঝরে জন্ম নিয়েছে নতুন কচি পাতার। আজ সেই পত্রপল্লবে, ঘাসে ঘাসে, নদীর কিনারে।সোনালি রোদের ছোঁয়ায় পলাশগুলো আজ জেগে উঠবে। মৌমাছিদের গুঞ্জরণ, মাতাল হাওয়া ছুঁয়ে যাবে তনুমন।
বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুলের রঙেই আজ সাজবে তরুণ-তরুণীরা। তরুণীরা পরবে বাসন্তী রঙের শাড়ি। খোঁপায় গুঁজবে ফুল আর হাতে পরবে কাঁচের চুড়ি। তরুণরাও বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া পরে নামবে বাংলার পথে ঘাটে।
এ বসন্ত শুধু শুধু উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায় না, বাঙালির জীবনের সঙ্গে একাকার হয়ে আছে বসন্ত। বসন্তের বন্দনা আছে কবিতা, গান, নৃত্য আর চিত্রকলায়। বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। ফুল ফুটবার পুলকিত এ দিনে বন-বনান্তে কাননে কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে উঠবে চারদিক। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতই বাঙালির মনেও লাগবে দোলা। হৃদয় হবে উচাটন। পাতার আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহুকুহু ডাক। বসন্ত বাতাস দোলা দিবে সবার মনে,সাজবে বাসন্তি সাজে। বসন্তরাণীর আগমনে মাতাল হবে সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ। ইতিহাস, বাংলা সনের প্রবর্তনের সময় ধরা হয় ১৫৫৬ সাল। মোঘল সম্রাট জালাল উদ্দীন মোহাম্মদ বাবর।
আরো জানা যায়, খাজনা আদায়ের সুবিধার্তে সভাসদদের পরামর্শে ২৯ বছর পর ১৫৮৪ সালের ১০ কিংবা ১১ মার্চ 'তারিখ-এ-এলাহী' নামে নতুন এক বছর গণনা শুরু হয়।সে যাই হোক, সম্রাট আকবরের সময় প্রতি বছরে বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে অন্যতম ছিল বসন্ত উৎসব। আমাদের দেশে ১৪০১ সাল থেকে বসন্ত উৎসব পালন করে আসছে জাতীয় বসন্ত উৎসব পরিষদ।
প্রতিনিধি/জেএ