রসুন, পেঁয়াজ, ব্রোকলি, ফুলকপি ও লিকের মতো সবজি ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে—সম্প্রতি এমনই এক আশাব্যঞ্জক তথ্য প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। তাঁদের মতে, এসব সবজি ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সক্ষম হলেও, স্বাভাবিক কোষে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না।
গবেষণায় দেখা গেছে, রসুনের এমন একটি মাত্রা যা পরীক্ষাগারে প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করেছে, সেটি সুস্থ কোষের উপর কোনো প্রভাব ফেলেনি। একই ফল পাওয়া গেছে পেঁয়াজ, লিক, ব্রোকলি ও ফুলকপির ক্ষেত্রেও। অর্থাৎ, এসব সবজি দেহের সুস্থ কোষে কোনো ক্ষতি না করেই ক্যানসার কোষকে টার্গেট করার এক অনন্য ক্ষমতা রাখে।
গবেষকরা জানান, এসব সবজিতে থাকা প্রাকৃতিক বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ—যেমন রসুনে অ্যালিসিন এবং ব্রোকলি ও ফুলকপিতে সালফোরাফেন—ক্যানসার কোষের বৃদ্ধির পথ বন্ধ করে দেয়। এরা “অ্যাপোপটসিস” নামে পরিচিত এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আক্রান্ত কোষের স্বাভাবিক মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে, তবে আশেপাশের সুস্থ কোষের কোনো ক্ষতি করে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৈশিষ্ট্যটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রচলিত কেমোথেরাপি ক্যানসার কোষের পাশাপাশি সুস্থ কোষকেও নষ্ট করে দেয়। ফলে রোগীরা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও দীর্ঘ পুনরুদ্ধার সময়ের মুখোমুখি হন।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, নিয়মিত এসব সবজি খাওয়া ক্যানসার প্রতিরোধে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করতে পারে। অল্প পরিমাণেও এসব সবজি টিউমার কোষের বৃদ্ধি ধীর করতে সক্ষম, একই সঙ্গে দেহের সামগ্রিক কোষস্বাস্থ্য রক্ষা করে। ক্যানসার প্রতিরোধ ছাড়াও রসুন ও ব্রোকলি জাতীয় সবজি প্রদাহ কমায়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে।
গবেষকরা মনে করেন, এই ফলাফল প্রমাণ করে যে প্রকৃতির সাধারণ খাবারও দেহের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাঁদের মতে, রসুন, পেঁয়াজ, ব্রোকলি ও ফুলকপির মতো সবজি শুধু পুষ্টিকর নয়, বরং শরীরের ভেতরে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করা প্রাকৃতিক যোদ্ধা।
তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এসব সবজি অন্তর্ভুক্ত করা কেবল পুষ্টির জন্য নয়, বরং ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতেও হতে পারে প্রকৃতির সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়।
সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ