শিরোনাম
◈ কক্সবাজার বিমানবন্দরে কুকুরের ধাক্কায় অল্পের জন্য দুর্ঘটনা এড়াল ইউএস-বাংলার ফ্লাইট ◈ ভালোবাসার টানে বাংলাদেশে আসা চীনা নাগরিক বিয়ে না করে যে কারণে দেশে ফিরছেন ◈ দুই বি‌লিয়ন ডলা‌রে বিক্রি হবে আই‌পিএ‌লে বর্তমান চ‌্যা‌ম্পিয়ন  আরসিবি ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলের বিমান হামলা: নিহত ১, আহত ৯ ◈ পিএসজিতে দুই মওসুম কাটা‌লেও মোটেও উপভোগ করেননি মেসি ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে সাড়া? বিএনপি–জামায়াতের মধ্যে আলোচনা উদ্যোগ ◈ আজ ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ◈ ভয়ানক অভিযোগ জাহানারার, তোলপাড় ক্রিকেটাঙ্গন (ভিডিও) ◈ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও সময়মতো জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতের আহ্বান বিএনপির স্থায়ী কমিটির ◈ কমিশনের মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা, আপ্যায়ন বাবদ ব্যয়  ৪৫ লাখ টাকা

প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর, ২০২৫, ০৮:০০ সকাল
আপডেট : ০৭ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:৪৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মুজাদ্দিদে আলফে সানির দরগাহ: যেখানে লঙ্গরখানায় ভেদাভেদ ভুলে এক সারিতে আহার করেন শত শত মানুষ

সারহিন্দ। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের অন্তর্গত শান্ত ও নিরিবিলি একটি শহর। মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এর ছিল গভীর প্রভাব। এখানে গ্রথিত রয়েছে এমন মহারত্ন, যা শুধু উপমহাদেশই নয়, বরং সমগ্র ইসলামি দুনিয়ার আকর্ষণ। এ মাটিতেই জন্মেছিলেন ইমামে রব্বানি মুজাদ্দিদে আলফে সানি, হজরত শায়েখ আহমাদ সারহিন্দি (রহ.), যিনি সূচনা করেছিলেন ইসলামের ইতিহাসে এক নবজাগরণের। ১৬ শতকের শেষভাগে, যখন সম্রাট আকবর প্রণীত অযৌক্তিক রীতিনীতিসংবলিত দ্বীনে এলাহি নামক বিকৃত ধর্ম মুসলমানদের দিগ্ভ্রান্ত করে তুলেছিল, তখন শায়েখ আহমাদ সারহিন্দি (রহ.) দৃঢ় মনোবল, তীক্ষ্ণ লেখনী ও গভীর আধ্যাত্মিক শক্তি দিয়ে মানুষকে ফিরিয়ে আনেন তাওহিদের পথে। এই অসামান্য অবদানের কারণেই ইতিহাসে তাঁকে স্মরণ করা হয় মুজাদ্দিদে আলফে সানি তথা দ্বিতীয় সহস্রাব্দের সংস্কারক হিসেবে। তাঁর চিরনিদ্রার ঠিকানাও এই সারহিন্দের জমিন।

সারহিন্দ শহরের প্রধান সড়ক থেকে কিছুটা ভেতরের দিকে এগোলেই চোখে পড়ে মুজাদ্দিদে আলফে সানির দরগাহ কমপ্লেক্স। এই দরগাহ কমপ্লেক্স নিছক কোনো দরগাহই নয়, বরং তা ইতিহাস ও আধ্যাত্মিকতার মিশেলে গড়ে ওঠা এক মিলনমেলাও বটে। ভেতরে যেতে পা বাড়ালেই প্রথমে পেরোতে হয় সুবিশাল এক ফটক। ফটক ভেদ করে সামনে এগোলে অনুভূত হয় নিমেষেই শহরের কোলাহল যেন মিলিয়ে গেল অদ্ভুত কোনো এক প্রশান্তিতে। সাদা মার্বেলের মসৃণ পথ, সবুজ গাছপালায় ঘেরা আঙিনা আর মাকবারা অংশে মাথার ওপর ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা ধবধবে সাদা গম্বুজ—সব মিলিয়ে এক মনোরম পরিবেশ।

দরগাহের আঙিনায় দাঁড়ালে মনে হয় যেন যুগের পর যুগ আল্লাহর ওলিদের বরকতি নুরের আবহে আলোকিত এক প্রাঙ্গণ। রাতের বেলা খোলা আকাশের মিটিমিটি তারকাগুলো দরগাহের আঙিনায় আলো বিলিয়ে যায় অনবরত। এখানটায় অবস্থানকালে অনুভূত হয় অন্তরের ক্লান্তি যেন মিলিয়ে যাচ্ছে স্বর্গীয় স্নিগ্ধতায় আর হৃদয়ে নেমে আসতে থাকে এক অদ্ভুত প্রশান্তি। দরগাহের ভেতরের অংশে গিয়ে দাঁড়ালে পাওয়া যায় কোরআন তিলাওয়াতের মনোমুগ্ধকর ধ্বনি; যা শুনে আগন্তুকদের হৃদয়ে জেগে ওঠে গভীর শ্রদ্ধা ও আবেগ। পশ্চিম দিকে একটু এগোলে নজরে পড়ে সেই সুমধুর ধ্বনির উৎস কোরআনি মারকাজ। দেখা মেলে কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা নিতে শিশুদের ছুটে আসা। ছোট ছোট শিশুর কোরআন বুকে ছুটে আসার দৃশ্য আগন্তুকদের মুগ্ধ করে।

পূর্ব দিকের প্রাঙ্গণে অবস্থিত সুবিশাল লঙ্গরখানা আগন্তুকদের জন্য এক ভিন্ন আকর্ষণ। প্রতিদিন শত শত মানুষের আহার মেলে এই লঙ্গরখানায়। রান্না হয় রুটি, খিচুড়ি, ডাল, সবজি ও গোশতের বাহারি পদ। কেউ থালাবাসন মাজছে তো কেউ পরিবেশন করছে খাবার। যদিও মামুলি খাবার তবে পরিতৃপ্তিদায়ক। ধনী ও গরিব এবং মুসলিম ও অমুসলিম সবাই এক সারিতে বসে গ্রহণ করছে আহার। কারও মাঝেই নেই কোনো ভেদাভেদ।

দরগাহ কমপ্লেক্সের অপর প্রান্তেই দাঁড়িয়ে আছে এক সুবিশাল গুরুদুয়ারা, যা শিখ ধর্মের মানুষের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনা। দুই ধর্মের দুটি স্থাপনা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থেকে যেন ছড়িয়ে দিচ্ছে শান্তি ও সহাবস্থানের এক নীরব বার্তা। একদিকে আজান, অন্যদিকে কীর্তনের সুর। নেই কোনো সংঘাত; নেই কোনো হানাহানি ও বিদ্বেষ। এই সহাবস্থানই যেন সারহিন্দকে পরিণত করেছে মানব সম্প্রীতির এক জীবন্ত প্রতীকে।

শায়েখ আহমাদ সারহিন্দির দরগাহ আগন্তুকদের মাঝে ভাবনার উদ্রেক করে, সত্য ও ইমানের পথে অবিচল থাকলে একজন মানুষই পারে গোটা জাতির ভাগ্য বদলে দিতে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ মুজাদ্দিদে আলফে সানি, যিনি আজ থেকে কয়েক শতাব্দী আগে উপমহাদেশের ইসলামি চেতনায় করেছিলেন নতুন প্রাণের সঞ্চার; যিনি অন্ধকার ভেদ করে ইসলামের আলো নব উদ্যমে আবার করেছিলেন প্রজ্বালন।

শায়েখ আহমাদ সারহিন্দি (রহ.) কয়েক শতাব্দী আগে বিগত হয়ে গেলেও তাঁর প্রভাব ও প্রতিপত্তি আজও অমর। তাই তো তাঁর দরগাহ কমপ্লেক্স যেন নিছক কোনো সমাধি নয়; বরং এক ঐতিহ্যেরও প্রতীক। এখানে মানুষ আসে অনুপ্রেরণা পেতে, আত্মার প্রশান্তি খুঁজতে কিংবা ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায়কে কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখতে। এই সারহিন্দ আজও নীরবে জানান দিয়ে যায়, যদি কোনো মানুষ একাকীও দাঁড়িয়ে থাকে সত্যের পক্ষে, ইতিহাস কোনো না কোনো দিন তার নাম শ্রদ্ধাভরে উচ্চারণ করবেই।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া কওমিয়া (নশাসন মাদরাসা) শরীয়তপুর

সূত্র: আজকের পত্রিকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়