শিরোনাম
◈ ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের ◈ চলতি বছরের পাঁচ মাসে বাংলাদেশে এক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব, বাস্তবায়নে অগ্রসর ২০% ◈ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট মুনাফা সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ◈ মেট্রোরেলের ১৪টি স্টেশনে রিটেইল শপ ভাড়ার ঘোষণা, পেতে হলে যা করবেন ◈ ‘পিআর’ নিয়ে বিরোধে জড়াবে না বিএনপি: স্থায়ী কমিটির বৈঠক ◈ জামায়াতের ভয় এবং নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা ◈ জেল ভাঙার এক বছর পরও ৭০০ বন্দি পলাতক, নাম বদলাচ্ছে ‘কারাগার’ হচ্ছে Correction Services Bangladesh ◈ বিমানের নতুন চেয়ারম্যান শেখ বশিরউদ্দীন ◈ শুনানিতে বিএনপি-এনসিপি মারামারির ঘটনায় ইসির জিডি ◈ ট্রাম্পের শুল্কে ভারতীয় রপ্তানির বড় ধাক্কা, সুযোগে বাংলাদেশ-পাকিস্তান

প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট, ২০২৩, ১০:৫৬ দুপুর
আপডেট : ০৮ আগস্ট, ২০২৩, ১২:৩৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জীবনের খারাপ সময়ে যেসব আমল করা উচিত

মুসবা তিন্নি: [২] মাঝে মাঝে জীবনের খারাপ সময়ে আমরা ভেঙে পড়ি, হতাশায় ভুগি, ডিপ্রেশনে চলে যায়। আবার অনেকে টেনশন সইতে না পেরে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে  ফেলে।

[৩] অথচ মুমিনের উচিত, যতকাল সে বেঁচে থাকবে আল্লাহর রহমতের কাছে আশাবাদী হয়েই  বেঁচে থাকবে। কারণ যারা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করে, যারা মুমিন, যারা সঠিক পথের অনুসারী, দুনিয়াবী না পাওয়া, ব্যর্থতা, আর হারিয়ে ফেলায় তারা কিছুতেই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে না। সামান্য দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়তে পারে না।

[৪] হতাশা মানুষকে আল্লাহর রহমতের কথা ভুলিয়ে দিতে চায়। আল্লাহর কুদরত থেকে তার দৃষ্টিকে সরিয়ে দিতে চায়। আল্লাহর সীমাহীন অনুগ্রহ এবং দয়াকে আড়াল করে দিতে চায়। তাই জীবনে চলার পথে আমরা যখন হতাশার মুখোমুখি হবো, তখন কিছু বিষয়  মেনে চলার করবো তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা হতাশাকে জয় কওে জীবনকে সুন্দও কওে সাজাতে পারবো।

১.ধৈর্য ধারণ করা : জীবনে যখন খারাপ সময় আসবে, তখন ধৈর্য ধারণ করুন। বিশ্বাস রাখুন, আপনার সঙ্গে আপনার রব আছেন, কষ্টের পরে তিনিই স্বস্তি দিবেন। আর এটাও মনে রাখবেন, বিপদে ধৈর্য ধারণকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলা পরকালেও মহাপুরস্কার  রেখেছেন। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও- যাদের ওপর কোনো মসিবত এলে বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তার কাছেই ফিরে যাব।' -সুরা বাকারা (২) : ১৫৫-১৫৬

২. তাকদিরের ওপর ছেড়ে দেয়া : ভালো-মন্দ যাই হোক না কেনো, তাকদিরের ওপর  ছেড়ে দিন। সমস্যার সমাধান একমাত্র রবই করতে পারে এই বিশ্বাস রাখুন। দেখবেন, দুশ্চিন্তা কখনোই আপনাকে কাবু করতে পারবে না, হতাশা আদৌ আপনার মনোবল দুর্বল করতে পারবে না।  

আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহ তোমাদেও ক্লেশ দিলে তিনি ছাড়া তা মোচনকারী আর  কেউ নেই। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তার অনুগ্রহ রদ করার কেউ  নেই...। ’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ১০৭)

৩.বিপদে আল্লাহকে ডাকা : আল্লাহ ছাড়া কেউ বিপদ থেকে মুক্তি দিতে পারে না। তাই বিপদাপদ, চিন্তার সময় বেশি বেশি দোয়া করা উচিত, বিশেষত, দুশ্চিন্তা ও মানসিক অস্থিরতা থেকে নাজাতের উদ্দেশ্যে হাদিসে বেশ কিছু দোয়া শিক্ষা দেয়া হয়েছে। ওই  দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ুন। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি, কোনো বিপদগ্রস্থ  লোক তা পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা তার সেই বিপদ দূর কওে দেন। সেটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুস (আ.)-এর দোয়া। দোয়াটি হলো ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বলিমীন। ’

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫০৫)

৪.চিন্তায় পরিবর্তন আনা : দুনিয়ার চাকচিক্য আর অঢেল বিত্ত বৈভবের কথা না ভেবে চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে নিজের চেয়ে নিম্ন আয়ের  মানুষদের অবস্থার দিকে তাকান। ভাবুন, আল্লাহ আপনাকে তার থেকে কতোটা ভালো রেখেছেন। 

খাব্বাব (রা.) বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে অভিযোগ করলাম এ অবস্থায় যে, তিনি কাবাঘরের ছায়ায় একটি চাদওে ঠেস দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য দোয়া করবেন না? 

জবাবে তিনি বলেন, ‘তোমাদের জানা উচিত, তোমাদের আগের মুমিন লোকেদের এই অবস্থা ছিল যে একজন মানুষকে ধরে আনা হতো, তার জন্য গর্ত খুঁড়ে তাকে তার মধ্যে পুঁতে রাখা হতো। অতঃপর তার মাথার ওপর করাত চালিয়ে তাকে দুই খন্ড কওে দেয়া হতো এবং দেহের গোশতের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনি চালিয়ে শাস্তি দেয়া হতো। কিন্তু এই কঠোর পরীক্ষা তাকে তার দ্বিন থেকে ফেরাতে পারত না। (বুখারি, হাদিস : ৩৬১৬)

৫.ইস্তেগফার করা : চিন্তা পেরেশানি অনেক সময় আর্থিক সঙ্কটের কারণে হয়ে থাকে। এজন্য নিয়মিত ইস্তেগফার করলে আর্থিক টানাপোড়েনসহ সব সঙ্কট আল্লাহ তা’আলা দূর কওে দেন । 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট  থেকে উত্তরণের পথ বের কওে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস  থেকে তার রিজিকের সংস্থান কওে দেবেন। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫২০)

৬. সুধারণা পোষণ করা : আল্লাহর ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করুন। তার ওপর ভরসা রাখুন। আশা রাখুন যে, তিনি আপনাকে আপনার দুরবস্থা থেকে নাজাত দেবেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। ’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৩)

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, আমি আমার বান্দার ধারণা অনুসারে তার সাথে আচরণ করি। সে যদি আমার ব্যাপারে ভালো ধারণা করে তবে তার জন্যই , আর সে যদি আমার ব্যাপারে খারাপ ধারণা করে তবে তাও তার জন্য। (সুনানে আহমদ, ৯০৭২)


[৫] দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার দোয়া-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ ضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকেও আপনার আশ্রয় চাই। 

লেখক: শিক্ষার্থী, উচ্চতর গবেষণা বিভাগ শায়েখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়