মানবজমিন: অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। দূরত্ব কমানোর তাগিদ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু দূরত্ব কমছে না। বরং শেষ মুহূর্তে এসে ফারাক আরও বাড়ছে। আগে ছিল প্রস্তাব, এখন শর্তে পরিণত হয়েছে। প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি’র সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি’র মধ্যে নানা বিষয়ে যোজন যোজন দূরত্ব।
ঐকমত্য কমিশন প্রায় প্রতিদিনই বৈঠকে বসছে অনানুষ্ঠানিকভাবে। কিন্তু কোনো বিষয়েই তাদের মধ্যে ঐকমত্য হচ্ছে না। পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি’র সাফ কথা- আমরা এতে নেই। এমনকি উচ্চকক্ষেও তাদের আপত্তি। জামায়াত-এনসিপি’র সুর একই। তারা বলছে, পিআর পদ্ধতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না হলে তাদের পক্ষে নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব নয়। গণভোট প্রশ্নেও ভিন্নমত স্পষ্ট। বিএনপি বলেছে, এটা সংবিধানে নেই। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়েও বিরোধ। সংস্কার ও বিচার প্রশ্নে দূরত্ব কম, তবে সময় নিয়ে আপত্তি আছে।
জামায়াতে ইসলামী শঙ্কিত। তাদের শঙ্কার কারণ কী? তারা ভয় পাচ্ছে- এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে বিএনপি সর্বাধিক আসন লাভ করবে। তখন তাদের অভ্যুত্থানের অর্জনগুলো প্রশ্নের মধ্যে পড়বে, অথবা হারিয়ে যাবে। একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছিলেন, অভ্যুত্থানে জামায়াতের অর্জন সবচেয়ে বেশি। তারা অন্তত ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। জামায়াত সমর্থকরাই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনোনীত হয়েছেন। কেবিনেট সেক্রেটারি থেকে শুরু করে প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলো তাদের সমর্থকরা দখল করে আছেন। মাঠ প্রশাসনেও একই অবস্থা। ব্যবসা-বাণিজ্যেও তাদের এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ। তারা মনে করে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে সবকিছু ওলটপালট হয়ে যাবে। এসব কারণেই জামায়াত এই মুহূর্তে নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহী নয় বলে মনে হচ্ছে। তাই তারা প্রতিদিনই নতুন করে শর্ত আরোপ করছে। যে সব শর্ত বিএনপি’র পক্ষে মানা সম্ভব নয়। দুই পক্ষকেই অনড় থাকতে বলছে একটি শক্তি। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো বড় গেইম প্ল্যান আছে।
যাই হোক, ডাকসু নির্বাচনের দিকেই জামায়াত তাকিয়ে আছে। সেই নির্বাচনেও তাদের বিনিয়োগ নানা কৌশলে। এনসিপি’র সমস্যা অন্য। তারা এখনো দলটিকে গোছাতে পারেনি। এমনকি নিবন্ধনও পায়নি। দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে দলটি প্রচণ্ড চাপের মুখে। এর মধ্যে দুজন উপদেষ্টাকেও সরে যেতে হবে। এনসিপি মনে করে, এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে তাদের পক্ষে ভালো ফলাফল আসবে না। তাই তারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহী নয়।
এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম ইতিমধ্যেই বলেছেন, নির্বাচন হয়তো ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে না। অভ্যুত্থানের তিন শক্তির মধ্যকার অনৈক্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সংকট তৈরি করতে যাচ্ছে বলেই মনে হয়। এখানে বিএনপি কী করবে। নির্বাচন ছাড়া তাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচন না হলে শুধু বিএনপি নয়- জামায়াত, এনসিপিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অভ্যুত্থানের চেতনা হিংসায় বিলীন হয়ে যেতে পারে। হতাশ হবে জনগণ। এ থেকে অনেক কিছুই হতে পারে। এক অনিশ্চিত যাত্রাপথে দীর্ঘমেয়াদি ফৌজিশাসন কিংবা উগ্রবাদীদের উত্থান ঘটতে পারে। হিংসা রূপ নিতে পারে গৃহযুদ্ধে।