বাংলাদেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করা গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথম জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার কথা। এই প্রেক্ষাপটে অনলাইনে ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের ঢল নেমেছে। এর মধ্যে একটি ভুয়া ভিডিও ছড়ানো হয়েছে। তাতে ভুলভাবে দাবি করা হয়েছে যে, সাবেক শাসকদলের ছাত্রসংগঠনের এক নেত্রীকে ‘ধর্ষণ করে ফেলে রাখা হয়েছে’। বাস্তবে ভিডিওটি একজন ভারতীয় কমেডি ইউটিউবার আপলোড করেন। সেখানে এক নারীকে মদ্যপ অবস্থার অভিনয় করতে দেখা যায়।
এএফপি ফ্যাক্ট চেকে এ তথ্য ধরা পড়েছে। এতে বলা হয়, ১৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে এক নারীকে রাস্তার পাশে কাঁপতে দেখা যায়। পাশে পড়ে আছে একটি পানির বোতল ও একজোড়া স্যান্ডেল। ভিডিওটি ৫ ডিসেম্বর ফেসবুকে শেয়ার করা হয় এবং এটি ১ লাখ ৭৩ হাজার বার দেখা হয়েছে। এই ভিডিওতে বাংলায় ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘ঢাকার বনানীতে তিন যুবক ছাত্রলীগের এক নেত্রীকে ধর্ষণ করে ফেলে রেখে গেছে।’ ভিডিওটির ওপর দেওয়া বাংলাভাষার ভয়েসওভারে শোনা যায়, দুষ্কৃতকারীরা ওই নারীকে নির্যাতন করে রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে।
বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো যখন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন একই ভিডিও ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামেও ছড়ানো হয়। ১৭ কোটি জনসংখ্যার এই দক্ষিণ এশিয়ার দেশে নির্বাচন সামনে রেখে উত্তেজনা তুঙ্গে। নভেম্বরে ঢাকায় একাধিক স্থানে তাজা বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। একই সময়ে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা ও নির্বাচনী প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় গুলি করা হয়।এএফপি বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে ছড়ানো একাধিক ভুয়া দাবি আগেও খণ্ডন করেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোও আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ভুল তথ্য প্রচারের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার খবর জানিয়েছে। তবে, আলোচিত ভিডিওটির সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কোনো সম্পর্ক নেই। ভুলভাবে ছড়ানো ভিডিওটির কী-ফ্রেম ব্যবহার করে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে দেখা যায়, এর একটি উচ্চ রেজ্যুলুশনের সংস্করণ ‘নাপাতি হাজেহাওয়ারি’ নামের একটি কমেডি ইউটিউব চ্যানেলে ৩রা ডিসেম্বর আপলোড করা হয়েছে। চ্যানেলটির ব্যানারে লেখা আছে ‘ইউনিক কমেডিয়ান’ এবং ছড়ানো ভিডিওতে দেখা ওই নারী চ্যানেলটির অন্যান্য ভিডিওতেও উপস্থিত।
মূল ভিডিওতে এক পুরুষ কণ্ঠে বোড়ো ভাষায় (ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের একটি সরকারি ভাষা) কথা বলতে শোনা যায়। তিনি ওই নারীকে জিজ্ঞেস করছেন তিনি মাতাল কি না এবং কেন এত বেশি পান করেছেন। একই ভিডিওটি ইউটিউবারের ফেসবুক পেজেও শেয়ার করা হয়েছে। তার ইনস্টাগ্রাম বায়োতেও নিজেকে ‘ইউনিক কমেডজ ক্রিয়েটর’ হিসেবে উল্লেখ করা আছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে এএফপি সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট নির্মাতা ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো জবাব পায়নি।