দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, মানুষে-মানুষে যোগাযোগ এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরালো করতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নতুনভাবে আগ্রহ দেখিয়েছে। ফিফথ ফ্রিডম ফ্লাইট ব্যবস্থার আওতায় পরস্পরের মধ্যে আকাশপথে নতুন যোগাযোগ স্থাপন করা হতে পারে। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে তৃতীয় দেশের এয়ারলাইনস সরাসরি দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে, যা দু'দেশের জন্য বাণিজ্য ও ভ্রমণে নতুন পথ খুলে দেবে।
সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ইকবাল হুসাইন খান এবং থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্ক্যাপের স্থায়ী প্রতিনিধি ফাইয়াজ মুরশিদ কাজী-সবাই পাকিস্তান–বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তারা জানান, অতীতের জটিলতা ভুলে পারস্পরিক সম্মান, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং সাংস্কৃতিক নৈকট্যকে ভিত্তি করে সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে হবে।
সরাসরি ফ্লাইট ও বাণিজ্য বাড়ানোর পরিকল্পনা বাংলাদেশ বিমানের বহর সম্প্রসারণের চেষ্টা চালালেও বর্তমানে সরাসরি ঢাকা-ইসলামাবাদ বা ঢাকা-করাচি ফ্লাইট নেই। প্রতিযোগিতা ও লজিস্টিকস চ্যালেঞ্জের কারণে বেসরকারি খাত এখনও এগোতে পারেনি।
হাইকমিশনার ইকবাল খান বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) বা চীনের মতো দেশগুলোর এয়ারলাইনস দুই দেশেই নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে। তাদের ফিফথ ফ্রিডম ফ্লাইট ব্যবস্থার আওতায় সংযুক্ত করা গেলে সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হবে।’
কাজী ফাইয়াজ মুরশিদ কাজী যোগ করেন-উভয় দেশের আর্থিক খাতের সংস্কার প্রয়োজন হলেও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।
‘পাকিস্তানের জন্য বাংলাদেশ হতে পারে উত্তর–পূর্ব ভারত, নেপাল, ভুটান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রবেশদ্বার। আর বাংলাদেশের জন্য পাকিস্তান হতে পারে মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দরজা,’ বলেন তিনি।
বর্তমানে দুই দেশের বাণিজ্য ‘প্রথাগত পণ্যে’ সীমাবদ্ধ। কর্মকর্তারা জানান বাংলাদেশ পাকিস্তানে সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ ও ইলেকট্রনিকস রপ্তানি করতে পারে। পাকিস্তানের ক্রীড়া সামগ্রী, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট/যন্ত্রপাতি ও কৃষিজ পণ্যের বাংলাদেশে চাহিদা রয়েছে। মৎস্য খাতে পাকিস্তানের বিনিয়োগে দুই দেশই উপকৃত হতে পারে। সেই সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তা মোকাবিলায় যৌথ বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে জানান তারা।
কাজীর ভাষায়, 'উভয় দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাড়ছে, খাদ্য ও নিরাপদ প্রোটিনের চাহিদা বাড়ছে। এ জন্য একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন।’
তিনি জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় ও দ্রুত নষ্ট হয় এমন কৃষিজ পণ্য পরিবহনে কার্গো ফ্লাইট অপরিহার্য। পাশাপাশি পাকিস্তানের আধুনিক বন্দর সুবিধা, চট্টগ্রাম ও মাতারবাড়ী গভীর বন্দর উন্নয়ন-এই সমুদ্রপথ বাণিজ্যেও নতুন দিগন্ত খুলতে পারে।
অতীত ভুলে ভবিষ্যতের পথে: দুই দেশের রয়েছে বিশাল জনগোষ্ঠী তাই মতভেদ স্বাভাবিক মন্তব্য করে কাজী বলেন,‘রাজনীতিকদের দায়িত্ব হবে বিভেদ নয়, সংহতির বয়ান তৈরি করা।’
১৯৭১ সালের ইতিহাসের ক্ষত স্বীকার করলেও তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের উচিত অতীতের বোঝা ও ভুল বোঝাবুঝি ঝেড়ে ফেলে পারস্পরিক সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া।’
তিনি গণমাধ্যম, একাডেমিয়া ও নাগরিক পর্যায়ের সহযোগিতা জোরদারের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। রাষ্ট্রদূত শেষ করেন এই আহ্বান দিয়ে যে ‘ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিই, ভুলগুলো শুধরাই আর দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জন্য ঐক্য ও অগ্রগতির পথ তৈরি করি।’ অনুবাদ: চ্যানেল২৪