আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা ও দেশের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সংস্কারের ধারাবাহিক উদ্যোগে মনোনিবেশ করেন।
তবে নীতিগত দিকনির্দেশনা সঠিক পথে থাকলেও বাস্তব অগ্রগতি এখনো প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছায়নি—এমন মূল্যায়ন করেছে আন্তর্জাতিক আর্থিক সাময়িকী গ্লোবাল ফাইন্যান্স। সাময়িকীটির সদ্য প্রকাশিত সেন্ট্রাল ব্যাংকার রিপোর্ট কার্ড ২০২৫-এ বিশ্বের ১০০ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরদের পারফরম্যান্স মূল্যায়নে ড. আহসান এইচ মনসুরকে ‘সি’ গ্রেড দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে ভিয়েতনামের গভর্নর নুয়েন থি হং সর্বোচ্চ ‘এ প্লাস’ গ্রেড পেয়ে শীর্ষস্থান অধিকার করেছেন, আর শ্রীলঙ্কার গভর্নর নন্দলাল উইরাসিংহে পেয়েছেন ‘এ’ গ্রেড। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের মূল্যায়নে বাংলাদেশের সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার পেয়েছিলেন ‘ডি’ গ্রেড। ফলে এবারের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান এক ধাপ উন্নত হয়েছে।
গ্লোবাল ফাইন্যান্স মন্তব্য করেছে, ড. আহসান এইচ মনসুরের নীতি-দিকনির্দেশনা যুক্তিসংগত হলেও বাস্তবায়নের গতি তুলনামূলক ধীর। জনগণের আস্থা পুরোপুরি ফিরে না আসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি প্রয়োগে কাঙ্ক্ষিত ফল দৃশ্যমান নয়। অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, ‘সি’ গ্রেড মানে নীতিগত দিক সঠিক পথে থাকলেও এর কার্যকারিতা বা বাস্তব পরিবর্তনের প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট হয়নি।
মুদ্রাস্ফীতি, ঋণ অনিয়ম, ডলারের অস্থিরতা ও রিজার্ভসংকট এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি, আর দেউলিয়া আইন ও ব্যাংক পরিচালনায় জবাবদিহি বৃদ্ধিতেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। তবে রিপো রেট ৮.৫ থেকে ১০ শতাংশে বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও প্রবৃদ্ধি কমে ২০২৫ অর্থবছরে জিডিপি ৩.৯ শতাংশে নেমেছে; যা গত এক দশকের গড় ৬ শতাংশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ফলে সংস্কারের বাস্তবায়নই এখন গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের মূল চ্যালেঞ্জ।