যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিককালের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' তত্ত্বের প্রবক্তা ডিক চেনি মারা গেছেন।
৮৪ বছর বয়সী চেনি নিউমোনিয়া ও কার্ডিয়াক সমস্যায় ভুগছিলেন বলে আজ মঙ্গলবার তার পরিবারের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে।
২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চেনি। দায়িত্ব পালনের কয়েক দশকেই ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী, বিতর্কিত এবং ক্ষমতাবান ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি পান। যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক ও আফগানিস্তানের চালানো সামরিক অভিযান চেনিরই মস্তিষ্কপ্রসূত।
তবে জীবনের শেষ বছরগুলোতে কঠোর রক্ষণশীল নীতির অনুসারী চেনি নিজের দল থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। ট্রাম্পকে 'কাপুরুষ' ও 'গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হুমকি' হিসেবে আখ্যা দেন চেনি।
ওয়াশিংটনের রাজনীতিতে কিছুটা অতিরঞ্জিত করে চেনিকে প্রকৃত প্রেসিডেন্ট হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও তিনি দৃশ্যপটের আড়ালে থেকে বুশ প্রশাসনে বিশাল প্রভাব বিস্তার করতেন এবং সেই ক্ষমতা উপভোগ করতেন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সকালে নিউইয়র্কে দ্বিতীয় হাইজ্যাক করা উড়োজাহাজটি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত হানার মুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ শহরের বাইরে থাকলেও চেনি ছিলেন হোয়াইট হাউসে।
ওই স্মৃতি নিয়ে চেনি বলেছেন, তিনি একজন পরিবর্তিত মানুষ হয়ে গিয়েছিলেন—আল-কায়েদা পরিচালিত সেই আক্রমণের প্রতিশোধ নিতে এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি প্রতিষ্ঠা করতে তিনি সংকল্পবদ্ধ হন। যা পরিণত হয়েছিল শাসন পরিবর্তন ও আগাম যুদ্ধের নব্য-রক্ষণশীল নীতিতে।
'সেই মুহূর্তেই বুঝেছিলাম, এটি একটি পরিকল্পিত কাজ। এটি একটি সন্ত্রাসী হামলা', ২০০২ সালে সিএনএনের জন কিং-কে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন চেনি।
জীবনের শেষ পর্যন্ত চেনি কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেননি। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, তিনি যা করেছেন তা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে প্রায় ২ হাজার ৮০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটানোর মতো আক্রমণের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের করণীয়ই ছিল। সেই প্রতিক্রিয়ার ফলেই প্রায় দুই দশক ব্যাপী চলা যুদ্ধের শুরু হয়। এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই বিভক্তি সৃষ্টি করে এবং দেশটির রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে।
২০১৪ সালে সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, তথাকথিত 'এনহ্যান্সড ইন্টারোগেশন মেথড' ছিল বর্বর, অকার্যকর এবং তা যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এর প্রেক্ষিতে চেনি বলেন, 'আমি মুহূর্তের মধ্যেই আবারও তা-ই্ করতাম।'
ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কে তিনি ২০১৫ সালে সিএনএনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, 'সেই সময় এটি সঠিক পদক্ষেপ ছিল। আমি তখনও তা বিশ্বাস করতাম, এখনো করি।'
চেনি পরবর্তী বছরগুলোতেও ট্রাম্পের সমালোচনা অব্যাহত রাখেন এবং এমনকি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, দেশের সংবিধান রক্ষার জন্য 'দলীয় আনুগত্যের ঊর্ধ্বে উঠে দেশকে অগ্রাধিকার দেওয়া' নাগরিকদের দায়িত্ব।
সেই সময় চেনি ট্রাম্পের প্রতি তার ঘৃণা প্রকাশ করে সতর্ক করেছিলেন যে, 'তার হাতে আর কখনো ক্ষমতা দেওয়া যায় না।' তবে কয়েক মাস পরই ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।